জুলাই অনিবার্য হয়েছিল গণমাধ্যম নিপীড়নের কারণেই: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১৭:৫৬:৫৬
জুলাই অনিবার্য হয়েছিল গণমাধ্যম নিপীড়নের কারণেই: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সম্প্রতি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে বর্তমান শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ন্যূনতম সাংবাদিকতার প্রতি চলমান দমন-পীড়নের সত্যতা তুলে ধরেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে এমন এক ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে যারা ন্যূনতম সাংবাদিকতার চেষ্টা করতেন তাদের ওপরও দমন-পীড়নের কঠোর ছায়া নেমে আসত। এই দমন-পীড়ন, চাপে চাপা রাখার নীতি এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণই ছিল ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পেছনের অন্যতম মূল কারণ।

আসিফ মাহমুদ তার পোস্টে লেখেন, “প্রশ্ন নয়, প্রশংসা করতে এসেছি” এমন শ্লোগান নিয়ে শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন হলেও, বাস্তবে তার শাসনামলে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত ছিল। তিনি আরও জানান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ায় এবং স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার প্রতিবাদে জুলাই আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। এই বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী ‘জুলাই প্রিলিউড সিরিজ’ নামে একটি বিশেষ শিল্পকর্ম ধারাবাহিকভাবে তৈরি করেছেন।

শিল্পী দেবাশিসের আঁকা দশটি পোস্টার ‘জুলাই’ আন্দোলনের পেছনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে বর্ণনা করে। এই পোস্টারগুলোতে দেখানো হয়েছে কীভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছিল, কীভাবে সাংবাদিকরা বাধাগ্রস্ত হয়েছেন, এবং শাসনব্যবস্থার লাগামছাড়া লুটপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেশের গণতান্ত্রিক চেতনায় আঘাত হেনেছিল। আসিফ মাহমুদ বলেন, এই শিল্পকর্মগুলোজুলাই ২০২৪-এর আন্দোলনের কারণ ও তাৎপর্য বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমার চাওয়ার কিছু নেই, আমি আসছি মানুষকে দিতে” মুখে এই কথা বললেও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার যে বাস্তবে কতটা নির্দয় ও লুটপাটে নিমগ্ন ছিল, তা এই পোস্টার ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে। তিনি যোগ করেন, শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর ৫ থেকে ৮ নম্বর পোস্টারগুলো বিশেষভাবে ওই সময়ের রাষ্ট্রীয় লুটপাট, স্বৈরাচার ও গণমাধ্যম দমনকে থিম হিসেবে তুলে ধরেছে।

প্রথমে দশটি পোস্টারের পরিকল্পনা থাকলেও ব্যাপক জনমত ও অনুপ্রেরণায় শিল্পী সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন, যার ফলে শিল্পকর্মের মাধ্যমে ইতিহাসের গভীর অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যায়। এই পোস্টারগুলো শুধু কল্পনার নয়, বরং কঠোর বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ, যা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংকটের প্রতিফলন।

‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ নামক অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে প্রদর্শিত এই শিল্পকর্মগুলো সমাজের সচেতন জনগোষ্ঠীকে ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে আগামী দিনে গণতন্ত্র ও মুক্ত চিন্তার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জাগ্রত করছে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সর্বোপরি, আসিফ মাহমুদ ও দেবাশিস চক্রবর্তীর এই প্রচেষ্টা রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদ এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সাহসী কলম ও ক্যানভাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে সামনে নিয়ে এসেছে। যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় উৎসাহী করবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ