জাতীয় ঐকমত্য ছাড়াই পিআর পদ্ধতির প্রচারণা প্রশ্নবিদ্ধ: নজরুল ইসলাম খান

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১৩:২২:৪০
জাতীয় ঐকমত্য ছাড়াই পিআর পদ্ধতির প্রচারণা প্রশ্নবিদ্ধ: নজরুল ইসলাম খান

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation) বা পিআর পদ্ধতির মতো একটি মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে এখনো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্যতম মুখপাত্র নজরুল ইসলাম খান। রোববার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, “গণতন্ত্র কার্যকর করতে একেক দেশে একেক পদ্ধতি আছে। পিআর পদ্ধতি তেমনই একটি ধারণা, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন পদ্ধতি ছাড়া শুধু স্লোগান দিয়ে চালু করা যায় না।” তিনি জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এই গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা শুরু হয়নি, অথচ বাইরে থেকে এক ধরনের একচেটিয়া প্রচার চালানো হচ্ছে যেন এই পদ্ধতি অনিবার্যভাবে বাস্তবায়নযোগ্য এবং সমর্থিত।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে কি কিছু জানানো হয়েছে? সুশীল সমাজের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে? এমনকি কমিশনের মধ্যেই কি এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট মতবিনিময় হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না। তাহলে এটি কিসের ভিত্তিতে সামনে আনা হচ্ছে?”

সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান ইভিএম পদ্ধতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “ইভিএম তো ছিল কেবল ভোট দেওয়ার পদ্ধতি, তাও সেটিকে কার্যকর করতে বছরের পর বছর প্রচার, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো ও ব্যয়ের মধ্যেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। সেখানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তো গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা পাল্টে দেওয়ার মতো ব্যাপার। এটি যদি বাস্তবেই ভাবতে হয়, তাহলে অবশ্যই জনগণকে যুক্ত করে, একটি সুদৃঢ় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আলোচনা হওয়া উচিত।”

তিনি বলেন, “আমরা দেখছি, যেসব মহল এই পিআর পদ্ধতির কথা বলছেন, তারা এটিকে কীভাবে কার্যকর করা হবে তা নিয়ে একটি শব্দও বলছেন না। ফলে এ নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি হচ্ছে। আর যেকোনো অস্পষ্ট প্রস্তাব যদি জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।”

নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, কিছু মহল পিআর পদ্ধতির আড়ালে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে, যা প্রকৃতপক্ষে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। “আমরা বলছি, বড় কোনো রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক পরিবর্তনের আগে অবশ্যই গভীর চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন হয়। শুধু কোনো বিশেষ দলের সুবিধার্থে পরিবর্তন চাপিয়ে দেওয়া যায় না,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি সব সময় গঠনমূলক সংস্কারের পক্ষে। আমাদের এই প্রক্রিয়ায় আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করা অন্যায়। কিন্তু সংস্কার মানে যেনতেনভাবে কিছু চাপিয়ে দেওয়া নয়। জনগণের স্বার্থে, স্বচ্ছ আলোচনার ভিত্তিতে, সময় নিয়ে গঠনমূলক পরিবর্তন আনাই প্রকৃত সংস্কার।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে নজরুল ইসলাম খান বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা কোনো পদ্ধতির বিরোধিতা করছি না, তবে বলছি সংলাপ ও জাতীয় আলোচনার ভিত্তিতে যে কোনো প্রস্তাব আসুক। জনমতকে উপেক্ষা করে, কিংবা কমিশনের অভ্যন্তরে যথাযথ আলোচনা ছাড়া কিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে সেটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরিপন্থী হবে।”

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ