ইসরাইলের গবেষণা কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৩ ১৮:০৮:৫৬
ইসরাইলের গবেষণা কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের রিহোভোট শহরে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভাইসমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এমনই বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। এই ইনস্টিটিউটটি বহু বছর ধরে ইসরাইলের সামরিক-বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে ১৫ জুনের সুনির্দিষ্ট হামলায় প্রায় ৯০ শতাংশ অবকাঠামো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে।

এই হামলাকে কোনোভাবেই ‘ভুল’ হিসেবে দেখছে না ইসরাইলি গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা মহল। বরং ভাইসমান ইনস্টিটিউটের প্রাণকেন্দ্র পদার্থবিদ্যা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জিনগত প্রকৌশল, এবং বায়োটেকনোলজির মতো উচ্চসংবেদনশীল গবেষণাগারগুলোকে সচেতনভাবে টার্গেট করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট অ্যালন চেন স্থানীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হেনেছে, যার ফলে প্রায় অর্ধ শতাধিক গবেষণা ল্যাব সম্পূর্ণভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বখ্যাত কার্ডিয়াক রিজেনারেশন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এলদাদ জাহর। তার দুই দশকের বেশি সময়ের গবেষণা হৃৎপিণ্ডের পুনর্জন্ম প্রকল্প, টিস্যু স্যাম্পল, ডিএনএ, আরএনএ, অ্যান্টিবডি ও ল্যাব-প্রস্তুত ভাইরাসের বিশাল সংগ্রহ এক নিমিষেই আগুন ও বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া নবনির্মিত একটি কেমিস্ট্রি ও ফিজিকস ল্যাব, যা চলতি বছরেই চালু হওয়ার কথা ছিল, তা মাটির সাথে মিশে গেছে।

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার এই প্রতিশোধাত্মক দ্বন্দ্বে এবার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র। শুধু সামরিক পরিকাঠামো নয়, ইরান স্পষ্টভাবে ইসরাইলের স্ট্র্যাটেজিক জ্ঞান ও গবেষণাকেও ধ্বংস করতে চেয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সৃষ্ট শকওয়েভে পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোও তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেmবিশেষ করে ভূ-রসায়ন ও প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস ভবন, যা এখন আর ব্যবহারযোগ্য নয়।

অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে রাখা হচ্ছে হামলার প্রকৃত চিত্র, যাতে ইরান ভবিষ্যতে একই স্থাপনাগুলো আবার টার্গেট না করতে পারে। তবে যতই গোপন রাখা হোক, ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ ও ছবিগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে ইসরাইলের গবেষণার দুর্গে ভয়ানক আঘাত হেনেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কেবল একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার হৃদপিণ্ডেই আঘাত হেনেছে। এটি শুধু বর্তমান নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপরও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে।

এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে, যেখানে এখন শুধু অস্ত্রভাণ্ডার নয় উচ্চতর জ্ঞান ও গবেষণাও রণক্ষেত্রের অংশ হয়ে উঠেছে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ