চার দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি দুর্জয়

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৩ ১৬:৩৩:২৪
চার দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি দুর্জয়

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী রিমান্ড শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) হুমায়ুন কবির। তিনি দুর্জয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অবস্থান তুলে ধরে রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে যুক্তি দেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বাদশাসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী, যাঁরা রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সাবেক এমপি দুর্জয়কে ২ জুলাই রাতে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট একটি মামলার পর তিনি দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে ঢাকায় লুকিয়ে ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মানিকগঞ্জ সদর, দৌলতপুর এবং শিবালয় থানায় একাধিক রাজনৈতিক ও ফৌজদারি অভিযোগ। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি মামলা গুরুতর অপরাধ ও সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, এসব মামলায় এখন পর্যায়ক্রমে শুনানি ও তদন্ত শুরু হবে।

নাঈমুর রহমান দুর্জয় একজন পরিচিত মুখ। জাতীয় দলের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০১ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারেননি। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুইবার মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে দুর্জয়ের রাজনৈতিক ভিত্তি দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী ছিল।

তবে গত কয়েক বছর ধরে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন, সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম এবং দলীয় কোন্দলের অভিযোগ উঠতে থাকে। এর মধ্যেই একাধিক মামলার আসামি হয়ে পড়েন তিনি। ২০২4 সালের শেষ দিকে দলীয় টানাপড়েন ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের মধ্য দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন এবং আত্মগোপনে চলে যান।

সাবেক এই এমপির গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একদিকে যেমন দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ