বাবা ডাকের আগেই বাবাকে হারানো আরিয়ানের গল্প

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০২ ১৮:১৭:৩৬
বাবা ডাকের আগেই বাবাকে হারানো আরিয়ানের গল্প

মাত্র দেড় বছরের শিশু আরিয়ান আহমদ রাফি। আধো আধো বোলে এখনই ডেকেছে “বাবা… বাবা…!” অথচ সে জানে না, যার মুখে সে প্রথমবার ‘বাবা’ বলছে, সেই মানুষটি পৃথিবীতেই নেই। গত বছরের ৫ আগস্ট সিলেটের বিয়ানীবাজারে এক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তার বাবা, তারেক আহমদ।

বয়স তখন মাত্র চার মাস। আজ দেড় বছর বয়সী আরিয়ান বেড়ে উঠছে বাবাহীন এক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, মায়ের কাঁধে ভর করে।

তারেক আহমদের বাড়ি ছিল সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিদনপুর গ্রামে। তার স্ত্রী ছামিয়া আক্তারের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও সংসার পেতেছিলেন বিয়ানীবাজারেই। প্রেমের সম্পর্ক থেকে পরিবারসম্মত বিয়ে—সবকিছুই ছিল পরিপাটি। দুই বছরের সংসারে ফুটফুটে শিশু আরিয়ানের আগমন নতুন আনন্দ এনেছিল।

কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়োৎসবে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তারেক। আন্দোলনরত অবস্থায় বিকেলে পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। পরদিন ভোরে বিয়ানীবাজার থানার সীমানা দেয়ালের কাছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।

তারেকের স্ত্রী ছামিয়া আক্তার আজ এক নিঃসঙ্গ সংগ্রামী মা। স্বামী হারানোর এক মাস পর পারিবারিক টানাপোড়েনে তিনি ছেলে নিয়ে মায়ের আশ্রয়ে চলে যান। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ছামিয়ার কণ্ঠে ক্ষীণ আশা—“আমার খুব একটা চাওয়া নেই, শুধু একটা থাকার মতো জায়গা আর ছেলের ভরণপোষণের ব্যবস্থা হলে আমি বেঁচে থাকতে পারি। কোনো ছোটখাটো চাকরি পেলেই আমি একলা ছেলেকে মানুষ করতে পারব।”

তিনি আরও জানান, “আমার শ্বশুরবাড়ির কারও সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ নেই। মৃত্যুর পর থেকেই আমাকে আর আমার ছেলেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। কেউ সহায়তা করলেও সেটার কোনো অংশ আমাদের ভাগ্যে জোটেনি।”

তারেকের পরিবারের ভাষ্যমতে, আন্দোলনের দিনই পুলিশ তারেককে ধরে নিয়ে যায়। ভোরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। গুলির চিহ্ন ছাড়াও তার শরীরে ছিল নির্যাতনের স্পষ্ট প্রমাণ।

তারেকের মা ইনারুন বেগম থানায় মামলা দায়ের করলেও দুই দিন পর আদালতে গিয়ে তা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তবে এসব মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই শহীদ তারেকের স্ত্রী ছামিয়ার।

তিনি শুধু চান—“আমার ছেলে বড় হয়ে যেন গর্ব করে বলতে পারে, তার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন।”

সত্য প্রতিবেদন/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ