আদানিকে সব বকেয়া পরিশোধ করল বাংলাদেশ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০২ ১৭:১৪:০৯
আদানিকে সব বকেয়া পরিশোধ করল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সরকার ভারতের আদানি পাওয়ারের কাছে চলমান সব বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এককালীন পরিশোধ করেছে। জুন মাসে আদানিকে দেওয়া হয়েছে ৪৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রতিষ্ঠানটির কাছে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় একক অর্থপ্রাপ্তি। এই অর্থের মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আদানির পাওনা সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এই বিশাল অর্থ পরিশোধের ফলে বাংলাদেশ ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে বিদ্যমান আন্তঃদেশীয় বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি আর্থিক ও আইনি দিক থেকে এখন পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ যে অর্থ পরিশোধে পিছিয়ে ছিল, তা নিয়ে আদানির পক্ষ থেকে উদ্বেগ থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ কখনোই বন্ধ করা হয়নি। আদানি পাওয়ারের সিইও এস.বি. খ্যালিয়া এ বিষয়ে বলেন, “বকেয়া থাকলেও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় সরবরাহ চালু রাখা হয়েছিল।”

বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি পরিশোধ করা হয়েছে বিলম্ব ফি ও অন্যান্য অতিরিক্ত খরচও। চুক্তি অনুযায়ী, ৩০ জুনের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ করলে বিলম্ব ফি মওকুফ করার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশ সময়মতো অর্থ পরিশোধ করায় সেই সুবিধাও পেয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে সময়মতো বিল পরিশোধ নিশ্চিত করতে সরকার ১৮০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ একটি এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলেছে এবং বাকি পাওনার জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিও দিয়েছে।

আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে, যা একমাত্র বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের এই চুক্তির আওতায় নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বকেয়া নিষ্পত্তির পর এখন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানিকে নির্দেশ দিয়েছে, যেন গোড্ডা প্রকল্পের দুটি ৮০০ মেগাওয়াট ইউনিটই নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখা হয়।

এই আর্থিক নিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে আদানি পাওয়ার গোড্ডা প্রকল্পটি, যা আগে একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠানের অধীনে ছিল, সেটিকে এখন মূল কোম্পানির সাথেই একীভূত করেছে। এতে প্রকল্প পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বাড়বে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের জন্য এটি শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চয়তা নয়, বরং ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়, এতদিন ধরে জমে থাকা প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া কিভাবে এত দ্রুত পরিশোধ হলো? সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক চাপে না হলেও, বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ ও জ্বালানি খাতে আস্থার সংকট এড়াতে বাংলাদেশ এই এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে শুধু আদানির সঙ্গে নয়, বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের দায়বদ্ধতা ও অর্থনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যতে এমন সংকট এড়াতে অর্থনৈতিক পূর্বপ্রস্তুতি ও সময়মতো দায় পরিশোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব এখন আরও স্পষ্ট।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ