রেকর্ড ছুঁয়ে ইতিহাস গড়ল চট্টগ্রাম বন্দর!

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৬:০১:২৪
রেকর্ড ছুঁয়ে ইতিহাস গড়ল চট্টগ্রাম বন্দর!

নতুন অর্থবছরের সূচনালগ্নেই দেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক সূচক চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে এলো সুসংবাদ। সকল প্রতিকূলতা রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অচলাবস্থাকে জয় করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বন্দরে হ্যান্ডলিং হওয়া কনটেইনারের পরিমাণ পৌঁছেছে রেকর্ড সংখ্যায়: ৩২ লাখ ৯৬ হাজার টিইইউএস (Twenty-foot Equivalent Units)। এটি গত ৪৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

তবে বন্দরের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যদি বিগত তিন মাস স্থবিরতা না থাকত, তাহলে এই সংখ্যা ৩৫ লাখ টিইইউএস অতিক্রম করত অনায়াসেই। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টিইইউএস। এবার প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার বেশি কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে, যা শতকরা হিসেবে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্ট মাস ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপূর্ণ এক সময়। ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর অনেক নীতিগত ও প্রশাসনিক পরিবর্তন ঘটেছিল, যা সাময়িকভাবে বন্দরের কার্যক্রমকে শ্লথ করে দেয়। এর সঙ্গে যোগ হয় বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বিশেষ করে কাস্টমস ও পোর্ট হ্যান্ডলিং ইউনিটের আন্দোলন, যার ফলে বন্দরের কিছু কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, “অর্থবছরের শুরু ও শেষ উভয়টাই সংকটময় ছিল। কিন্তু এরপরও আমরা গত বছরের তুলনায় দেড় লাখ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডল করেছি। এটা আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ।”

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যবসাবান্ধব ও আমদানি-রপ্তানিমুখী নীতিমালার বাস্তবায়ন শুরু করে। ফলে ডলার সংকট অনেকটা প্রশমিত হয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমদানির প্রবাহে। একই সঙ্গে বহির্বিশ্বে নতুন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সুসংহত হওয়ায় রপ্তানিতেও আসে লক্ষণীয় অগ্রগতি।

সরকারি পর্যায় থেকে শুরু করে বেসরকারি আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যে যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তা চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি প্রধান টার্মিনালের পাশাপাশি কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ টার্মিনাল থেকেও বড় আকারে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। তিনটি স্থানে মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ভাগেই ৩৩ লাখের মতো কনটেইনার হ্যান্ডল হয়। প্রতি বছর গড়ে ৩ থেকে ৩.৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলেও এবারের অর্জন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্বের বন্দর র‌্যাংকিং প্রতিষ্ঠান লয়েড’স লিস্ট অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টিইইউএস হ্যান্ডলিং করে চট্টগ্রাম বন্দর অর্জন করেছিল ৬৭তম অবস্থান। এবার সেই সংখ্যার সঙ্গে অতিরিক্ত দেড় লাখ টিইইউএস যুক্ত হওয়ায় র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বন্দরে আসা মোট পণ্যের ২৩ শতাংশ কনটেইনারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। এদের মধ্যে আমদানির বাল্ক বা খোলাপণ্য বহির্নোঙ্গরে খালাস করে লাইটার জাহাজে দেশের অভ্যন্তরে পৌঁছায়। কিন্তু রপ্তানি পণ্যের প্রায় শতভাগই হয় কনটেইনারে, যার মানে রপ্তানি সক্ষমতা পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকই হলো বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং রেকর্ড।

চট্টগ্রাম বন্দর শুধু একটি অবকাঠামো নয়, বরং দেশের বাণিজ্যিক স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। এই বন্দর যত বেশি কনটেইনার হ্যান্ডল করবে, ততই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি হবে।

সাম্প্রতিক অস্থির সময়েও এই বন্দর তার কার্যক্রমে যে সক্ষমতা দেখিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ এবং এক গভীর বার্তা বাংলাদেশ এখন সংকটে নয়, সম্ভাবনার পথে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ