থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত! এক ফোনালাপেই রাজনৈতিক ভূমিকম্প

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৪:৪২:২৫
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত! এক ফোনালাপেই রাজনৈতিক ভূমিকম্প

থাইল্যান্ডে ফোনালাপ ফাঁস ও সেনাবাহিনী নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন থাইল্যান্ড ও প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘আংকেল’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায়। একইসঙ্গে, আলোচনায় তিনি নিজ দেশের এক সেনা কর্মকর্তার সমালোচনা করেন। সেনাবাহিনীর মতো শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য থাইল্যান্ডের প্রথাগত রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণে স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলস্বরূপ দেশজুড়ে ব্যাপক জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং ব্যাংককের রাজপথে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।

থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালতে দায়ের হওয়া পিটিশনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১ জুলাই) ৯ সদস্যের বেঞ্চে ৭-২ ভোটে পেতংতার্নের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আদালত। এ সময় পর্যন্ত দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত।

সেনাবাহিনী নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনার সুযোগ থাইল্যান্ডে প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনী একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে রয়েছে। ফোনালাপের ঘটনার পর পেতংতার্ন আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেও রাজনৈতিক ক্ষত মুছতে পারেননি।

২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসেন পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন পদচ্যুত হলে দেশটির পার্লামেন্ট তাঁকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে শপথ নেওয়া পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশটির প্রভাবশালী ফিউ থাই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও বিতর্কিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কন্যা। থাকসিনের পাশাপাশি তাঁর ফুপু ইংলাক সিনাওয়াত্রাও পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, ফলে তিনিই হলেন এই পরিবারের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।

ব্যাংককের খ্যাতনামা চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করা পেতংতার্নের ডাকনাম ‘উং ইং’। তিনি ২০২১ সালে ফিউ থাই পার্টির ইনক্লুশন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রধান হিসেবে রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করেন। ২০২৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগেই তিনি দ্বিতীয় সন্তানের মা হন, যা তাঁকে তরুণ ও আধুনিক রাজনৈতিক নেতার প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলে।

তবে এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাময়িক বরখাস্তের রায় এবং সীমান্ত পরিস্থিতি—উভয় মিলিয়ে পেতংতার্ন ও থাইল্যান্ডের রাজনীতি এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

—সত্য প্রতিদিন/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ