অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা: ১৮ জুলাই স্মরণে বিশেষ দিবস

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১২:০২:০৫
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা: ১৮ জুলাই স্মরণে বিশেষ দিবস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, আসছে ১৮ জুলাইকে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। সোমবার (৩০ জুন) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, সরকার জুলাই মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে স্মরণ করে একটি আনুষ্ঠানিক ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করতে যাচ্ছে।

শফিকুল আলম লিখেছেন, “পহেলা জুলাই ‘জুলাই’ উদযাপনের জন্য সরকার তার ক্যালেন্ডার ঘোষণা করতে চলেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তারিখের মধ্যে ১৮ জুলাই সম্পূর্ণরূপে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবং তাদের সাহসী প্রচেষ্টার জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, পুরো ক্যালেন্ডার অফিসিয়ালি মঙ্গলবার (২ জুলাই) প্রকাশ করা হবে।

এই ঘোষণার মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তরুণদের ভূমিকাকে ইতিহাসে স্থান দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে ১৮ জুলাইয়ের প্রতিরোধ, যেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে রাস্তায় নামে এবং গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়, সেটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শফিকুল আলম তার পোস্টে এ-ও বলেন, “বলা হচ্ছে মব তৈরি হচ্ছে, আমি এটাকে মব বলছি না, বলছি প্রেসার গ্রুপ।” তার মতে, এই প্রেসার গ্রুপ বা চাপসৃষ্টি গোষ্ঠী গড়ে উঠছে দীর্ঘদিনের সাংবাদিতক ব্যর্থতা ও নাগরিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে। “সে তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,” লিখেছেন প্রেস সচিব। “গত বছরের ২৮ জুলাই দেশের শীর্ষ সাংবাদিকরা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনাকে বলেছিল ‘এদের খুন করেন’, ‘পুলিশ কেন গুলি করছে না।’ এরা কেউ কম প্রভাবশালী নন। শীর্ষ মিডিয়া হাউজের মাথারা। এখন সেই দুঃসহ স্মৃতি থেকেই জনগণের মাঝে একটা আত্মরক্ষামূলক প্রেসার গ্রুপ গড়ে উঠছে।”

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে যখন মানুষের ন্যূনতম নাগরিক অধিকার, বিশেষ করে সিভিল লিবার্টি, কেড়ে নেওয়া হয়, তখন মানুষ সংগঠিত হয় তাদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই। এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠিত প্রতিরোধ সেই সংগঠনের অন্যতম দৃশ্যমান দৃষ্টান্ত।

সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ জুলাইকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা কার্যত এটিই বোঝায় যে, এই সময়কার ছাত্র আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক নয় এটি এখন রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তরুণদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন গণসচেতনতা ও প্রতিবাদের রাজনীতিকে আনুষ্ঠানিকতা দিতে শুরু করেছে বর্তমান প্রশাসন।

আগে বিচ্ছিন্নভাবে ছাত্র আন্দোলনের স্মরণ হলেও, এবার সরকারিভাবে একে ‘জুলাই স্মরণ’ মাস হিসেবে ঘোষণা করা এবং প্রতিটি দিনে তাৎপর্যময় ঘটনাগুলোর স্মারক স্বীকৃতি দেওয়া প্রক্রিয়া শুরু হলো। এতে শুধু রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক স্তরেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এই ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র এখন কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছে যে, তরুণ সমাজের প্রতিরোধমূলক রাজনীতি বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের সোচ্চার ভূমিকা তাদের ম্যান্ডেটহীন শাসনের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক মোড় তৈরি করেছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ