"আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন": মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ০৮:৩৩:১৫
"আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন": মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে এক উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক উত্তরণ, রোহিঙ্গা সংকট এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর উভয়ই এই ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে জানান, দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

প্রায় ১৫ মিনিটব্যাপী ফোনালাপে উভয় পক্ষই পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে ছিল—বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক, চলমান রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া, আগামী সাধারণ নির্বাচন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, পারস্পরিক শুল্ক নীতিমালা ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক অগ্রাধিকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার কর্মসূচি ও নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রমকে স্বাগত জানান এবং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য এবং অন্যতম প্রধান রেমিট্যান্স উৎস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই শুল্ক ইস্যুতে একটি সমন্বিত চুক্তি চূড়ান্ত হবে, যা দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।

অন্যদিকে, অধ্যাপক ইউনূস জানান, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউয়ের সঙ্গে একটি সফল বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। এই বৈঠকে দুই পক্ষই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। একইসঙ্গে ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান, যিনি পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।

দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি হবে একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।" তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থার পুনর্গঠনে নিরলসভাবে কাজ করছে, যাতে তরুণ ভোটাররা তাঁদের জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী রাষ্ট্র হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংকটের টেকসই সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধান এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক বাস্তবসম্ভব এবং বাংলাদেশ সে লক্ষ্যেই কাজ করছে।"

উভয় নেতা এসময় ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি, অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “আসন্ন নির্বাচনের আগে আপনার সফর আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়াকে বৈশ্বিকভাবে আরও স্বীকৃতি দিতে সাহায্য করবে এবং এটি তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে।”

এই ফোনালাপ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রাজনৈতিক সংলাপ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে এমন সদর্থক ও উন্মুক্ত আলোচনা পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ