কাশ্মীরে ‘রাজকীয়’ রেল: কাশ্মীর পুনর্দখলের বার্তা? মোদির উদ্দেশ্য কী?

২০২৫ জুন ২৯ ১৩:৪৩:৩৩
কাশ্মীরে ‘রাজকীয়’ রেল: কাশ্মীর পুনর্দখলের বার্তা? মোদির উদ্দেশ্য কী?

৫ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে একটি নতুন রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সেই উদ্বোধন পর্বে মোদি নাটকীয়ভাবে রেলসেতুর ওপর দিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকা উঁচু করে হাঁটেন, যেন বিজয়ী একজন সেনাপতি। তবে এই প্রদর্শনী কাশ্মীরিদের মুক্তির প্রতীক নয়, বরং এটি ভারতের দখলদারিত্ব ও সামরিকীকরণের আরও একটি স্তম্ভ বলে প্রতিভাত হচ্ছে।

নতুন রেল প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু, চেনাব নদীর তলদেশ থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচুতে। এছাড়া তৈরি করা হয়েছে কেবলনির্ভর রেলসেতু, আঞ্জি খাদ সেতু, যা নদীর তলদেশ থেকে ৩৩১ মিটার উপরে। মোদির ভাষায়, এসব উন্নয়ন ভারতের শক্তি ও সংকল্পের প্রতীক। তবে এই ‘উন্নয়ন’ প্রকল্পের পেছনে যে রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

চালু হওয়া ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন কাশ্মীরকে যুক্ত করেছে জম্মুর কাটরার সঙ্গে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটি কাশ্মীরিদের চলাচলের জন্য নয়। এটি হিন্দু তীর্থযাত্রা, পর্যটন এবং সেনা-সরঞ্জাম পরিবহনের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। সম্প্রতি ব্রিটিশ চ্যানেল ৪-এর তথ্যচিত্রেও উঠে এসেছে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির ভয়াবহ বিস্তার এবং দমনমূলক ব্যবস্থা। ধারণা করা হয়, বর্তমানে কাশ্মীরে প্রায় সাড়ে সাত লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে, যা ভারতের মোট বাহিনীর অর্ধেক।

এই প্রকল্প নিয়ে কাশ্মীরি কৃষকদের অভিযোগ, এটি তাদের জমি ও বসতবাড়ির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। কৃষিজমি ধ্বংস, উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের অনিশ্চয়তা এ প্রকল্পের সামাজিক মূল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একে ‘উন্নয়নের বিজয়’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যার ভেতরের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

রেললাইনের রঙও বলছে অনেক কিছু গেরুয়া রঙে রাঙানো ট্রেনটি বিজেপি ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীক। যেখানে ভারতের অন্যান্য ট্রেন সাধারণত নীল, সবুজ বা লালে রঙের হয়ে থাকে, সেখানে গেরুয়া রঙ একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে।

এই রেল প্রকল্পে ভারতের কার্যপ্রণালী ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাসের মতোই। ব্রিটিশরা যেমন ভারত, জর্ডান বা মিশরে রেল ও সেতু তৈরি করেছিল সামরিক কৌশল ও দখলদারি প্রসারে, তেমনি ভারতও কাশ্মীরে সেই ইতিহাসকেই নতুন রূপে পুনরাবৃত্তি করছে।

এই প্রকল্প যে শুধুই কাশ্মীরিদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতীক নয়, বরং তা তাদের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকেও হুমকির মুখে ফেলছে। ব্রিটিশ শাসনামলের মতন, যেখানে অবকাঠামো উন্নয়নের আড়ালে দমনমূলক নীতির বাস্তবায়ন ঘটত, এখানেও তাই ঘটছে।

শেষ পর্যন্ত, রেললাইনের মাধ্যমে ‘নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ’ কথাটি কাগজে-কলমে যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, বাস্তবে কাশ্মীরিদের জীবনে এর প্রভাব হয়তো আরও বিচ্ছিন্নতা, নজরদারি এবং দখলের অনুভূতিকে আরও প্রবল করে তুলবে। মোদির এই প্রকল্প একটি প্রকৌশলিক অর্জন মাত্র নয়, এটি আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের আরেকটি নিদর্শন।

-মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত