উড়তে গিয়ে বিপদের মুখে এয়ার ইন্ডিয়া

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ১৭:১৬:৪২
উড়তে গিয়ে বিপদের মুখে এয়ার ইন্ডিয়া

ভারতের অন্যতম জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ঘণ্টা পর উড্ডয়ন করেছে। মুম্বাই থেকে ব্যাংককগামী এআই২৩৫৪ ফ্লাইটে বাঁ পাশের ডানার নিচে খড় আটকে যাওয়ায় এই অস্বাভাবিক বিলম্ব ঘটে। ঘটনাটি যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

বুধবার (২৫ জুন) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI2354। তবে উড্ডয়নের আগে বিমানের বাঁ পাশের ডানার নিচে খড় জাতীয় বস্তু আটকে থাকতে দেখা যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় এনে উড্ডয়ন স্থগিত করা হয়।

এরপর বিমান প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে উড্ডয়ন করে। যদিও এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, "খড় অপসারণের কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে", তবে কীভাবে খড় সেখানে পৌঁছাল, কেন তা সরাতে এত সময় লাগল, তা পরিষ্কারভাবে জানানো হয়নি।

এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মুম্বাই বিমানবন্দরে দায়িত্বরত পরিষেবা পরিচালকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা DGCA (Directorate General of Civil Aviation) বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছে। DGCA-র কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে-

বিমানটিকে পরিষ্কার ও প্রস্তুত করার দায়িত্বে কারা ছিলেন?

নিরাপত্তা পরীক্ষায় কীভাবে খড় চোখ এড়িয়ে গেল?

ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে খড়ের মতো অনিয়ন্ত্রিত উপাদান বিমানের গঠনগত অংশে আটকে যাওয়া একটি চূড়ান্ত গাফিলতির চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত। যদিও এই ঘটনায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, তবুও অনেক যাত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, "ছোট একটি খড়ের জন্য যদি এত সময় লাগে, বড় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলে কী অবস্থা হতো?"

এছাড়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিবৃতিতে ফ্লাইটে কতজন যাত্রী ছিলেন, বা কতক্ষণ দেরি হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় অস্পষ্টতা আরও বেড়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার এই ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটল যখন সংস্থাটি আগেই আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী একটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। ওই ঘটনায় ২৪২ যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জন নিহত হন। সেখানেও বিমান ছাড়ার মুহূর্তে প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও তদারকির অভাব চিহ্নিত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এই পরপর ঘটনাগুলো এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালন কাঠামো ও নিরাপত্তা প্রোটোকল নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিমান সংস্থাগুলোকে এখনই আরও কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।

একটি ফ্লাইটের দেরি শুধু সময়ের প্রশ্ন নয়, বরং এটি একটি বিমানের পেছনে থাকা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিফলন। খড় আটকে যাওয়ার মতো ঘটনা হয়তো প্রথমবার ঘটল না, তবে তেমন তুচ্ছ জিনিসের কারণে এত দীর্ঘ দেরি ও অস্পষ্ট ব্যাখ্যা এয়ার ইন্ডিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

অদূর ভবিষ্যতে যদি তারা বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে চায়, তবে শুধু বিবৃতি নয়—কঠোর নীতি, স্বচ্ছ তদন্ত ও দ্রুত জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে। নয়তো আকাশে ও মাটিতে, উভয় ক্ষেত্রেই তারা হারাতে থাকবে যাত্রীদের আস্থা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ