ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইরানকে নিয়ে পুতিনের নতুন ঘোষণা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১৮:২৯:৫৪
ইরানকে নিয়ে পুতিনের নতুন ঘোষণা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার (২৩ জুন) মস্কোয় এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বলেছেন, ইরানের জনগণের প্রতি রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে মস্কো সবধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সামরিক আগ্রাসন চালানো হয়েছে, তা একেবারেই ‘ভিত্তিহীন’ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।

মস্কোয় প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। বৈঠকের শুরুতেই আরাঘচি পুতিনকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করেন এবং সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রীয় হামলার বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “রাশিয়া আজ ইতিহাসের সঠিক পক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আপনারা যেমন স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন, তা কেবল ইরানের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য একটি বার্তা বহন করে।”

পুতিন তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা জানি ইরান কী ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা এটাও দেখছি, কীভাবে কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া শুধু নীতিগত সমর্থন নয়, প্রয়োজনে সরাসরি সহায়তা দিতেও প্রস্তুত।” পুতিন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক নীতিনৈতিকতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে যে আচরণ করছে, তা বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক।

এর আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, সপ্তাহব্যাপী ইরানে চালানো মার্কিন হামলার ব্যাপারে রাশিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এটি স্পষ্টতই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, “আমরা কূটনৈতিকভাবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে চেষ্টা করছি। তবে আমরা এই বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি তা নির্ভর করবে ইরানের প্রয়োজনীয়তার ওপর।” পেসকভ আরও বলেন, রাশিয়া চাইছে, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা হ্রাস পাক, এবং এ জন্য তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই অবস্থান কেবল সাময়িক কূটনৈতিক বার্তা নয়, বরং এটি বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ। রাশিয়া ও ইরান উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও চাপের মুখে রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিন দিন ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। রাশিয়ার এই বার্তা এমন এক সময় এলো, যখন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বেড়েছে এবং ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বিত সামরিক পদক্ষেপের গুঞ্জন তীব্র হয়েছে।

রাশিয়ার এই সক্রিয় অবস্থান কেবল ইরানের পক্ষে কূটনৈতিক শক্তি বাড়ায় না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও তা একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সহানুভূতিশীল ও প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান রাশিয়ার জন্য পশ্চিমবিরোধী জোটকে আরও সংহত করতে সহায়ক হবে, যা ভবিষ্যতের কৌশলগত ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

সার্বিকভাবে, পুতিন-আরাঘচি বৈঠক ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, রাশিয়া শুধু কথা বলেই নয়, প্রয়োজনে কার্যকর সহায়তার প্রস্তুতি নিয়েই ইরানের পাশে দাঁড়াতে চায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে রাশিয়ার এই অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র রাষ্ট্রগুলো কী ধরনের কূটনৈতিক বা সামরিক কৌশল গ্রহণ করবে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকট যে বহুপাক্ষিক সংঘাত ও পুনর্গঠনের দিকে এগোচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ