শেয়ারবাজার
ড.ইউনূসের নির্দেশনায় শেয়ারবাজার সংস্কারে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে টেকসই ভিত্তিতে উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাংকঋণ-নির্ভরতা কমিয়ে শেয়ারবাজারভিত্তিক অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে নীতিনির্ধারক মহল। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যৌথভাবে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে, যেখানে দেশের শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে গড়ে তোলার কৌশল ও রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিএসইসির পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার ফারজানা লালারুখ এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির ঘাটতি মোকাবিলায় শেয়ারবাজারের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর। অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, ব্যাংক-নির্ভর অর্থায়ন কাঠামো বর্তমানে অনেক বেশি চাপে রয়েছে এবং তা থেকে সরে এসে বাজারভিত্তিক অর্থায়ন মডেলে যাওয়া সময়ের দাবি। এই লক্ষ্যে শেয়ারবাজার হতে পারে একটি কার্যকর ও টেকসই মাধ্যম, যা শুধু ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমাবে না, বরং সামগ্রিক অর্থনীতিতেও স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয় বন্ড মার্কেটকে গতিশীল করতে করণীয় বিষয়াবলি নিয়ে। বিশেষ করে বন্ড বাজারে তারল্য বৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার, নীতিমালার সহজীকরণ এবং কর-সুবিধা পুনর্বিন্যাসের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ বিষয়ে দ্রুত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কমিটি নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে, যা দেশের মূলধন বাজারে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’-তে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে শেয়ারবাজার উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার অন্যতম নির্দেশনা ছিল—বৃহৎ কোম্পানিগুলো যেন ব্যাংকঋণের পরিবর্তে শেয়ার বা বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সম্পন্ন করে। এই নির্দেশনার আলোকে বিএসইসি ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আজকের বৈঠক সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
বৈঠকের সার্বিক মূল্যায়নে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর এই সমন্বিত পদক্ষেপ দেশের শেয়ারবাজারে কাঙ্ক্ষিত গতিশীলতা আনবে। একই সঙ্গে এটি হবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের একটি টেকসই বিকল্প, যা অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত করতে সহায়ক হবে। পরিশেষে, অংশগ্রহণকারীরা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন—যদি এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আন্তরিকভাবে অংশ নেয়, তবে শেয়ারবাজার ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- দীর্ঘ পতনের পর শেয়ারবাজারে এল সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট হবে কিনা জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- শেয়ারবাজারে মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের
- শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!