চীনের নৌমহড়া ও জাপানের উদ্বেগ—প্রশান্ত মহাসাগরে নতুন সামরিক উত্তেজনা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৯ ১৬:২৯:১৮
চীনের নৌমহড়া ও জাপানের উদ্বেগ—প্রশান্ত মহাসাগরে নতুন সামরিক উত্তেজনা

চীনের দুটি বিমানবাহী রণতরী—‘শানডং’ ও ‘লিয়াওনিং’—সম্প্রতি একযোগে প্রশান্ত মহাসাগরে বড় পরিসরের নৌমহড়া পরিচালনা করেছে, যা জাপানের জন্য এক অভূতপূর্ব ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। টোকিও শুধুমাত্র কূটনৈতিক পর্যায়ে নয়, বরং ব্যতিক্রমধর্মীভাবে জনসমক্ষে চীনের সামরিক গতিবিধি প্রকাশ করেছে। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২৫ মে থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চীনা রণতরীগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে—এমন পদক্ষেপ তারা সচরাচর নেয় না।

চীনের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার এই মহড়ায় ৫০০-র বেশি বার উড্ডয়ন ও অবতরণ সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি জাপানের নজরদারি বিমানের খুব কাছাকাছি চলে আসে, এমনকি একটি ক্ষেত্রে ৪০ মিনিট এবং পরের দিন ৮০ মিনিট পর্যন্ত একটি চীনা ফাইটার জাপানি বিমানকে অনুসরণ করে। এসব ঘটনাকে টোকিও আখ্যা দিয়েছে “অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক ঘনিষ্ঠতা”, যা আকাশে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এ সব কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইনসিদ্ধ দাবি করে বলেছে, “জাপানের যুদ্ধজাহাজ ও নজরদারি বিমান চীনের স্বাভাবিক সামরিক কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি করে উল্টো নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে।” চীন জাপানকে “বিপজ্জনক কার্যক্রম” বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

মানচিত্রে আরও দেখা গেছে, ‘লিয়াওনিং’ রণতরী প্রথমবারের মতো তথাকথিত ‘সেকেন্ড আইল্যান্ড চেইন’ ("second island chain") অতিক্রম করেছে—যেটি যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক কৌশলে একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জাপান থেকে শুরু হয়ে গুয়ামে গিয়ে শেষ হয়। এই অঞ্চল পেরোনো মানে চীনা নৌ-সক্ষমতার গতি ও পরিসর আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে—এটি ওয়াশিংটনের জন্যও একটি স্পষ্ট বার্তা।

চীনের এই মহড়া এমন সময় হচ্ছে, যখন তারা তাদের তৃতীয় ও সর্বাধুনিক বিমানবাহী রণতরী 'ফুজিয়ান'–এর সাগরপথে পরীক্ষামূলক চলাচলের অগ্রগতি জানাচ্ছে। এই জাহাজ হবে বিশ্বের দ্বিতীয়, এবং চীনের প্রথম, যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট ব্যবহার করে যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণ করতে পারবে—এ প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত বিমান উৎক্ষেপণ সম্ভব, ফলে একক রণতরী থেকেই আরও বেশি সংখ্যক অভিযানে অংশগ্রহণ করা যাবে।

এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ফেব্রুয়ারির তাসমান সাগরে চীনের নৌমহড়ারও স্মরণ করিয়ে দেয়, যা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। পর্যাপ্ত পূর্ব-ঘোষণা ছাড়াই মহড়া হওয়ায়, কিছু বাণিজ্যিক বিমান শেষ মুহূর্তে পথ বদলাতে বাধ্য হয়। যদিও পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া স্বীকার করে নেয়, মহড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হয়েছে, তবে চীনের “বিরল স্বচ্ছতা” নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

চীনের এই শক্তিপ্রদর্শন এমন সময়ে ঘটছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র একদিকে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের অবস্থান ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ঘনীভূত হওয়ায় সেখানে সম্পদ স্থানান্তর করছে। সম্প্রতি ইউএসএস নিমিটজ বিমানবাহী রণতরী দক্ষিণ চীন সাগর ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে খবর মিলেছে।

এ প্রেক্ষিতে জাপানের প্রতিরক্ষা উদ্বেগ কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং তা বৈশ্বিক ভূরাজনীতির পরবর্তী ধাপের ইঙ্গিতও বহন করছে। চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নড়াচড়া আজ কেবল সমুদ্রেই নয়, কূটনৈতিক মানচিত্রেও ঢেউ তুলছে।


ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী গ্রামে সৌদি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৫:৫৬:৫৩
ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী গ্রামে সৌদি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ছবি: মেহের নিউজ

সৌদি বাহিনী ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী রাজিহ জেলায় বেসামরিক গ্রামগুলোকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) ইয়েমেনের সা’দা প্রদেশের কর্তৃপক্ষ এই হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ এই খবর প্রকাশ করেছে।

সা’দা প্রদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সৌদি আরব রাজিহ সীমান্ত অঞ্চলের নাগরিক বসতিগুলোর ওপর এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিচালনা করেছে।

তবে, তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলায় সম্ভাব্য হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ঘটনার প্রেক্ষিতে সা'দা প্রদেশ কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।


জোহরান মামদানির জয়ে উচ্ছ্বাসে মাতলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৪:২৭:২৫
জোহরান মামদানির জয়ে উচ্ছ্বাসে মাতলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা
ছবিঃ সংগৃহীত

ইতিহাস সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম নগরী নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি। এক ঐতিহাসিক ভোটে জয়লাভের পর তাঁর এই বিজয়কে ঘিরে নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতেই মামদানির জয়ের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে জ্যামাইকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের উচ্ছ্বাসে পুরো এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। এ সময় তারা স্লোগান দেয়, "আমার মেয়র, তোমার মেয়র - মামদানি, মামদানি" এবং "শ্রমিক শ্রেণির মেয়র - মামদানি, মামদানি"।

বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের বিপুল সমর্থন

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সড়কে নেমে স্লোগান দেওয়া বাংলাদেশিদের হাতে ব্যানারে লেখা ছিল, "জ্যামাইকার বাংলাদেশি আমেরিকানরা মামদানির জন্য।"

জোহরান মামদানি তাঁর প্রচারণার শুরু থেকেই বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পেয়েছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার এবং উগান্ডার শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানির পুত্র জোহরান প্রচারণার বিভিন্ন সমাবেশে বাংলায় কথা বলে প্রবাসীদের মন জয় করেন।

ঐতিহাসিক বিজয় ও রেকর্ড

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জোহরান মামদানি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে তাঁর বিজয় নিশ্চিত করেন। এই নির্বাচনে তিনি পরাজিত করেছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে। উল্লেখযোগ্য হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে অ্যান্ড্রু কুমোকে সমর্থন করেছিলেন।

এই জয়ের মাধ্যমে জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে একাধিক রেকর্ড গড়েছেন:

তিনি হলেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র।

একই সঙ্গে তিনি এই নগরীর প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকান জন্ম নেওয়া মেয়র।

এছাড়াও, প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে তিনিই হতে যাচ্ছেন নিউইয়র্কের সবচেয়ে তরুণ মেয়র।


মামদানির জয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সত্যিই ফেডারেল তহবিল বন্ধ করবেন এবার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১০:৪৭:৫৬
মামদানির জয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সত্যিই ফেডারেল তহবিল বন্ধ করবেন এবার
ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পাশে দাঁড়ান এবং সতর্ক করে জানান, যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি নির্বাচিত হন, তবে তিনি নিউইয়র্ককে প্রদত্ত ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার সম্ভাবনা দেখছেন। তবে ট্রাম্পের হুমকি কার্যকর হয়নি। নির্বাচনের ফলাফলে জোহরান মামদানি প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূত হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। তার এই জয় যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহরের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রবিবার সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প উল্লেখ করেছিলেন, মামদানি কমিউনিস্ট এবং তার জয়ের ক্ষেত্রে শহরে অর্থ সরবরাহ করা কঠিন হবে। ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, মামদানির জয়ের ক্ষেত্রে, কমিউনিস্ট প্রার্থী হওয়ায় তিনি প্রয়োজনীয় ন্যূনতম তহবিল ব্যতীত অন্য কোনো ফেডারেল অর্থ প্রদান করবেন না এবং শহরের সফলতার সম্ভাবনা কমবে। তিনি আরও জানান, মামদানি জিতলে নিউইয়র্ক সিটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের মুখোমুখি হবে এবং তিনি এমন ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পক্ষে, যার ইতিবাচক অর্জন রয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, শহরে কমিউনিস্ট থাকলে ফান্ড প্রদান অর্থহীন হবে।

নিউইয়র্ক রাজ্য কম্পট্রোলারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ অর্থবছরে শহরের প্রয়োজনীয় ফেডারেল তহবিল প্রায় ৭.৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বাজেটের ৬.৪ শতাংশ। ২০২৫ সালে শহরের পরিচালনা বাজেট ছিল ৯.৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ১.১ বিলিয়ন ডলার মহামারি তহবিল হিসেবে সংরক্ষিত ছিল। বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ হাউজিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সামাজিক সেবামূলক সংস্থাগুলোকে সমর্থন দিতে ব্যবহার করা হয়। তবে সংবিধান অনুযায়ী, ফেডারেল তহবিল বণ্টনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে নেই; কর সংগ্রহ ও অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের অধিকার। ১৯৭৪ সালের ‘ইমপাউন্ডমেন্ট কন্ট্রোল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট কংগ্রেস অনুমোদিত তহবিল সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত স্থগিত করতে পারেন, কিন্তু কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া তা কার্যকর হবে না।

বর্তমানে সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেখানে সিনেটে ৫৩ ও ৪৭ এবং প্রতিনিধি পরিষদে ২২০ ও ২১২ আসন রয়েছে। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছিল। মেয়র এরিক অ্যাডামসের সময় মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট অথরিটির ১২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছিল, যা পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ছিল। রাজ্য কম্পট্রোলারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল কাটা বা স্থগিত হতে পারে। বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, ২০২৫ সালে শহরের দৈনন্দিন বাজেট থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৬ সালে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ডলার কমে যাবে।

-রাফসান


ইতিহাস সৃষ্টিকারী কে এই জোহরান মামদানি? যিনি প্রথম মুসলিম ও সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হতে চলেছেন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১০:৫০:০৮
ইতিহাস সৃষ্টিকারী কে এই জোহরান মামদানি? যিনি প্রথম মুসলিম ও সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হতে চলেছেন
ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এবং আধুনিক সভ্যতার প্রতীক নিউইয়র্ক সিটির নেতৃত্বভার এখন যেতে চলেছে এক তরুণ মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিকের হাতে। তিনি হলেন ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। যদি তিনি মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন, তবে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং একইসঙ্গে সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। তাঁকে ঘিরে এখন কেবল মার্কিন রাজনীতিই নয়, আলোচনা সরব গোটা বিশ্ব।

শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি

জোহরান মামদানি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর, উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়। তাঁর পরিবার বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। তাঁর মা প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, আর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী, যিনি ভারতের মাটিতে জন্ম নিলেও উগান্ডার নাগরিক।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পরিবারসহ জোহরান দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। এরপর সাত বছর বয়সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন নিউইয়র্কে। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও অভিবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলে।

রাজনীতিতে উত্থান ও জনপ্রিয়তার কারণ

জোহরান মামদানির রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় ২০২০ সালে, যখন তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। সেখান থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের সমস্যা, বিশেষত ভাড়া, গণপরিবহন ও শিক্ষা নিয়ে সরাসরি কাজ করে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

২০২৪ সালে তিনি যখন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন, তখনও তিনি তুলনামূলকভাবে অপরিচিত মুখ ছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই তার প্রচারাভিযান নিউইয়র্কের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী হয়ে ওঠে। এই নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। প্রথমে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেও জনসমর্থনের অভাবে তিনি সরে দাঁড়ান। মামদানি বারবার বলেছেন, বিশ্ব বদলাতে বয়স বা অভিজ্ঞতা নয়, প্রয়োজন হয় ইচ্ছা আর সততা, যা তরুণ ভোটারদের প্রভাবিত করেছে।

তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল— স্থায়ী ভাড়ার সীমা নির্ধারণ, গণপরিবহন বিনামূল্যে করা, শিশু যত্নের সার্বজনীন সুযোগ এবং ধনীদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে সামাজিক কল্যাণে ব্যয়। এই ধরনের সমাজকল্যাণমূলক প্রতিশ্রুতিগুলো শহরের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে দ্রুত সাড়া ফেলে দেয়।

আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সরব অবস্থান

জোহরান মামদানি শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নিজের অবস্থান জানাতে সরব। তিনি গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সোচ্চার। তাঁর দাবি, গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যদি নিউইয়র্কে আসেন, তবে তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত।

এমন কঠোর অবস্থানের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেন এবং হুমকি দেন যে, মামদানি যদি নির্বাচনে জেতেন, তাহলে নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু ট্রাম্পের এই বিতর্কিত বক্তব্য উল্টো মামদানির জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়।


উত্তর গাজার প্রবেশপথ এখনো বন্ধ,যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১০:৪২:৩২
উত্তর গাজার প্রবেশপথ এখনো বন্ধ,যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা
উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনিখাবার তৈরি করছেন। ছবি: আল জাজিরা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলমান থাকলেও, ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলের অব্যাহত বিধিনিষেধের কারণে গাজাবাসীর মধ্যে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এখন ক্ষুধা ও চরম দুর্ভোগে কাতর হচ্ছেন। জাতিসংঘ সতর্ক করে জানিয়েছে, সীমিত সীমান্ত খোলা থাকার কারণে ত্রাণ সরবরাহে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক এই সংস্থাটি এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের কাছে জরুরি ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।

ত্রাণ অপ্রতুল ও উত্তর গাজা বিচ্ছিন্ন

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মুখপাত্র আবির ইতেফা মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত মাসে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও সীমিতভাবে সীমান্ত খোলা থাকার কারণে ত্রাণের পরিমাণ এখনো 'অত্যন্ত কম'।

ইতেফা জোর দিয়ে বলেন, "আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দরকার। দ্রুতগতিতে ত্রাণ সরানো জরুরি। আমরা সময়ের সঙ্গে দৌড়াচ্ছি। শীত চলে আসছে, অথচ মানুষ এখনো ক্ষুধায় ভুগছেন।" তিনি জানান, ডব্লিউএফপি গাজাজুড়ে ৪৪টি স্থানে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।

তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, যে পরিমাণ খাদ্য গাজায় প্রবেশ করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় মোটেও যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে উত্তর গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো এখনো কঠিন, যেখানে গত আগস্টেই বৈশ্বিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি শনাক্ত করেছিল। ইতেফা বলেন, "উত্তর গাজার প্রবেশপথ এখনো বন্ধ। ফলে আমাদের ত্রাণ কাফেলাগুলোকে দক্ষিণ দিকের দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ঘুরে যেতে হচ্ছে। কার্যকর ত্রাণ বিতরণের জন্য সীমান্ত পারাপারের সব পয়েন্ট খোলা দরকার, বিশেষ করে উত্তর দিকেরগুলো।"

চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও হামলা অব্যাহত

গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা। কিন্তু ১০ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে গাজায় প্রবেশ করেছে মাত্র ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক, অর্থাৎ গড়ে দিনে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যা চুক্তির শর্তের অর্ধেকেরও কম।

এর পাশাপাশি, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার হামলায় একজন নিহত ও একজন আহত হন। উত্তর গাজার জাবালিয়াতেও সেনাদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪০ জন নিহত ও ৬০৭ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনারা 'ইয়েলো লাইন'-এ পিছু হটার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার বাড়িতে ফিরে গেছেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফিরে দেখেন, তাদের ঘরবাড়ি ও আশপাশের এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

সূত্র: আল জাজিরা


জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১০:১৭:৫৯
জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ও অন্যতম প্রভাবশালী শহর নিউইয়র্কে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি। শহরটির প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তিনি শুধু নিউইয়র্ক নয়, বরং বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রকাশিত আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রায় ৮৪ লাখেরও বেশি মানুষের এই মহানগরের নেতৃত্বে উঠে এসে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মামদানি নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি একই সঙ্গে নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম, দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকা মহাদেশে জন্ম নেওয়া ব্যক্তি যিনি শহরটির মেয়র পদে আসীন হয়েছেন।

রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন এবং সেখানে থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ স্থাপন করেন। মঙ্গলবারের নির্বাচনে জয়লাভের পর তার বিজয়োৎসবের আয়োজন ছিল ব্রুকলিনের প্যারামাউন্ট থিয়েটারে, যদিও সোমবারই তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আজ নিউইয়র্কে ইতিহাস তৈরি হয়েছে, আর এই ইতিহাসের নায়ক আপনারাই।”

নিউইয়র্কের বহু জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের কাছে মামদানির এই বিজয় এক অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে তার সমর্থকদের মতে, এই জয় ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের নয়, বরং বাস্তব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিশেষত জীবনযাত্রার ব্যয়, আবাসন সংকট ও সামাজিক ন্যায্যতা নিয়ে তার কার্যকর প্রচারণারই ফল।

আল জাজিরা তাদের বিশ্লেষণে বলেছে, এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতর মতাদর্শিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো ছিলেন মূলধারার, ধনী দাতাদের প্রভাবাধীন রাজনীতির প্রতিনিধি; অন্যদিকে মামদানি নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে, যা প্রগতিশীল তরুণ প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

ভোটদানের দিন কুয়োমো মন্তব্য করেন, “এটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে এক ধরনের গৃহযুদ্ধ, যেখানে সমাজতান্ত্রিক নেতৃত্বাধীন বামপন্থিরা মধ্যপন্থিদের চ্যালেঞ্জ করছে।” এই বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বাড়তে থাকা বিভাজনের বাস্তবতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। ব্রঙ্কসের সমাজকর্মী ৩৩ বছর বয়সী জোশুয়া উইলসন বলেন, “ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাই এই সময়ে জোহরান মামদানি মতো তরুণ ও নতুন নেতৃত্বের উত্থান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”

৬৮ বছর বয়সী ভোটার লুসি কর্দেরো জানান, “আমরা কুয়োমোকে বহু বছর ধরে দেখেছি, কিন্তু তিনি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ ছিলেন। মামদানি তরুণ, নতুন এবং পরিবর্তনের আশা জাগানিয়া এক মুখ।” একইভাবে ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটস এলাকার ৫২ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্সার মেগান মার্কস বলেন, “মামদানির রাজনৈতিক অবস্থান আমার চেয়ে বেশি বামঘেঁষা, কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তার মতো দৃষ্টিভঙ্গির একজন নেতার উপস্থিতি জরুরি। আমি তাকে সমর্থন করেছি, কারণ তার মধ্যে সততা ও নতুন চিন্তার সাহস দেখেছি।”

এদিকে নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কুয়োমোকে সমর্থনের ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সমর্থন রক্ষণশীল ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হলেও তা উল্টো মামদানির পক্ষে কাজ করেছে। ৫৫ বছর বয়সী আইনজীবী অ্যালেক্স লরেন্স বলেন, “প্রথমে আমি মামদানিকে ভোট দিইনি, কিন্তু পরে তার বক্তব্য শুনে তার ইতিবাচক মনোভাব ও সততায় অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং তাকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড্রাইভার ইফতেখার খান বলেন, “এই নির্বাচনে মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের ঐক্যই ছিল মামদানির বড় শক্তি। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর যেভাবে মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন, সেই ইতিহাসের বিপরীতে এই বিজয় আমাদের জন্য নতুন মর্যাদা ও আশার সূচনা।”

-রফিক


দুই বন্ধুর ক্ষমতার লড়াইয়ে রক্তগঙ্গা সুদানে: লাশের গন্ধে ভারী বাতাস, দেড় কোটি মানুষ ঘরছাড়া

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ২১:২৯:১৫
দুই বন্ধুর ক্ষমতার লড়াইয়ে রক্তগঙ্গা সুদানে: লাশের গন্ধে ভারী বাতাস, দেড় কোটি মানুষ ঘরছাড়া
ছবিঃ সংগৃহীত

উত্তরপূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানে চলছে ভয়াবহ এক গৃহযুদ্ধ, যার ফলে রাস্তাঘাটে শত শত মানুষের লাশ পড়ে আছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানুষ জীবন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন, কিন্তু মৃত মানুষগুলোকে দাফন করার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাতাসে লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিম দেশ সুদানের এই ধ্বংসযজ্ঞের মূলে রয়েছে দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াই। এই দুই জেনারেল একসময় ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কিন্তু ক্ষমতার লিপ্সা আজ তাদের একে অপরের চরম শত্রুতে পরিণত করেছে, আর এর বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে এই সংঘাত শুরু হয়। একদিকে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সরকারি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং অন্যদিকে তারই এককালের বন্ধু মোহামেদ হামদান হেমেতি দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতের ফলে ইতোমধ্যে দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে, যা দেশটিতে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।

ক্ষমতার পটপরিবর্তন ও জেনারেলদের উত্থান

সুদানে বর্তমান সংঘাত শুরু হয় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিলের ধারাবাহিকতায়। এর আগে ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা তৎকালীন একনায়ক ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনী (এসএএফ)-এর জেনারেল বুরহান এবং আধা-সামরিক বাহিনী (আরএসএফ)-এর প্রধান দাগালো ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভিযান চালিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে বশিরের বিরুদ্ধে গোটা সুদানজুড়ে গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। বিক্ষোভের ফলে সৃষ্ট সংঘাতের সুযোগ নিয়ে ক্যু-এর মাধ্যমে বুরহান ও দাগালো বশিরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন।

একনায়ক বশিরের পতনের পর ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক কাউন্সিল (টিএমসি)-এর নেতৃত্ব দেন এবং আরএসএফের প্রধান দাগালো তার সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত

এক পর্যায়ে দেশটিতে নতুন করে বেসামরিক সরকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের তীব্র চাপের মুখে দুই জেনারেল ২০১৯ সালে বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু ২০২১ সালে তারা সেই বেসামরিক সরকারকে ভেঙে দেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আবদালা হামদককে গ্রেপ্তার করে নতুন একটি সার্বভৌম কাউন্সিল গঠন করেন।

তবে তাদের গঠিত সামরিক কাউন্সিলের ওপর জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া কাঠামো মেনে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার চাপ আসতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আরএসএফ প্রধান দাগালো গভীর সংকটে পড়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন, তার বাহিনী সরকারের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হলে দেশের রাজনীতিতে তিনি এবং তার বাহিনী ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বেন। এই আশঙ্কার পরই ২০২৩ সালের এপ্রিলে রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে আরএসএফ, যা দ্রুতই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

বিদেশি সহযোগিতা ও এল-ফাশেরের পতন

চলমান এই ভয়াবহ যুদ্ধে সরকারি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মোহামেদ হামদান হেমেতি দাগালো সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানা যায়। আরএসএফ প্রধান দাগালো আরব আমিরাতের কাছ থেকে পাওয়া ভারী অস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় সফলতা অর্জন করেছেন। সম্প্রতি তারা সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর এল-ফাশের দখলে নিয়েছে। এই শহর দখলের সময় আরএসএফ ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।


কালাত জেলায় অভিযান: পাক-বাহিনীর গুলিতে নিহত 'ভারতীয় প্রক্সি বাহিনীর' ৪ সদস্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ১৭:০৮:০৮
কালাত জেলায় অভিযান: পাক-বাহিনীর গুলিতে নিহত 'ভারতীয় প্রক্সি বাহিনীর' ৪ সদস্য
ছবিঃ সংগৃহীত

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে গোয়েন্দা তথ্য-ভিত্তিক সফল অভিযান চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এই অভিযানে 'ভারতীয় প্রক্সি বাহিনীর' চারজন সশস্ত্র সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পাক সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং এই সফল অভিযানের কথা জানিয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর আইএসপিআর (ISPR) এক বিবৃতিতে জানায়, গত শনিবার বেলুচিস্তানের কালাত জেলায় এই গোয়েন্দা তথ্য-ভিত্তিক (আইবিও) অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। মূলত উক্ত অঞ্চলে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ভারত সমর্থন দিয়ে থাকে বলে ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। এই কারণে পাকিস্তান এই গোষ্ঠীগুলোকে ‘ভারতীয় প্রক্সি বাহিনী’ বা ‘ফিতনা আল হিন্দুস্তান’ নামে চিহ্নিত করে।

সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান ও অস্ত্রের উদ্ধার

আইএসপিআর তাদের বিবৃতিতে আরও জানায়, গত ১ নভেম্বর 'ভারতীয় প্রক্সি ফিতনা আল হিন্দুস্তানের জঙ্গিদের' উপস্থিতির খবর পাওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনী একটি আইবিও পরিচালনা করে। অভিযানে মোট চারজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। নিহত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

আইএসপিআর জানিয়েছে, এই অঞ্চলে আরও কোনো ভারতীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী আছে কি না, তা খুঁজে বের করার জন্য বর্তমানে সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা ও সংকল্প

পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি এই সফল অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, "অপারেশন আজম-ই-ইস্তেহকামের অধীনে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার সংকল্পে জাতি তার বাহিনীর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।"

প্রসঙ্গত, বেলুচিস্তানে অভিযানের খবর জানানোর মাত্র একদিন আগে খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে দুটি পৃথক সংঘর্ষে কমপক্ষে তিনজন 'সন্ত্রাসী' নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।

কেপি ও বেলুচিস্তানে হামলার বৃদ্ধি

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার মাত্রা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে কেপি এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে এই হামলার মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এসব হামলার মূল লক্ষ্যবস্তু হলো পুলিশ, আইন প্রয়োগকারী কর্মী এবং নিরাপত্তা বাহিনী। উল্লেখ্য, দেশটিতে নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ২০২২ সালে সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের পর থেকে সন্ত্রাসী হামলা পুনরায় বৃদ্ধি পায়।


বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আকাশচুম্বী ভবনের খেতাব মালয়েশিয়ায় যে টাওয়ারের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ১২:১১:৪৪
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আকাশচুম্বী ভবনের খেতাব মালয়েশিয়ায় যে টাওয়ারের
ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ‘মেরদেকা ১১৮ টাওয়ার’ আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ স্বীকৃতি অর্জন করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই আকাশচুম্বী ভবনকে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আকাশচুম্বী ভবন’ খেতাব দিয়েছে কনসিল অন ভার্টিক্যাল আরবানিজম (CIVU)।

এই স্বীকৃতি শুধু মালয়েশিয়ার স্থাপত্য প্রতিভাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেনি, বরং দেশের নগর নকশা ও স্থাপত্য দক্ষতাকেও বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত করেছে। কানাডার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত CIVU ২০২৫ অ্যাওয়ার্ডস সেরিমনিতে এই সম্মান প্রদান করা হয়, যেখানে বিশ্বজুড়ে অসাধারণ স্থাপত্য এবং নগর পরিকল্পনার উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

৬৭৮.৯ মিটার উচ্চতার মেরদেকা ১১৮ কেবল আকাশচুম্বী ভবন নয়, এটি মালয়েশিয়ার অগ্রগতি, ঐতিহ্য এবং জাতীয় গৌরবের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। প্রকল্পটির বিকাশকারী প্রতিষ্ঠান PNB Merdeka Ventures Sdn Bhd (PNBMV) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই স্বীকৃতি মূলত টাওয়ারটির নকশা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এসেছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাতুক তেংকু আব. আজিজ তেংকু মাহমুদ বলেন, “এই খেতাব মালয়েশিয়ার জন্য এক বিশাল গৌরব। আমরা শুধু একটি উচ্চ টাওয়ার নির্মাণের লক্ষ্য রাখিনি, বরং এমন একটি স্থান তৈরির চেষ্টা করেছি যা ঐতিহ্য ধরে রাখবে, মানুষকে সংযুক্ত করবে এবং টেকসই উন্নয়নের অনুপ্রেরণা দেবে।” তিনি আরও যোগ করেন, মেরদেকা ১১৮ স্বাধীনতার চেতনার প্রতীক হিসেবে দেশীয় শক্তি, ঐক্য এবং ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদকে প্রতিফলিত করে।

অস্ট্রেলিয়ার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ফেন্ডার কাটসালিদিসের প্রধান স্থপতি কার্ল ফেন্ডার বলেন, “মেরদেকা ১১৮ নির্মাণের প্রকল্পটি কেবল উচ্চতার জন্য প্রতিযোগিতা ছিল না; এটি মালয়েশিয়ার অতীতকে সম্মান জানিয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি চিহ্ন স্থাপন করার প্রচেষ্টা।”

মেরদেকা ১১৮ কেবল স্থাপত্য এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষের নিদর্শন নয়, এটি দেশের জাতীয় পরিচয়, সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং ভবিষ্যতের টেকসই নগরায়নের প্রতিফলন হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠকের মতামত:

সংষ্কারের নামে বিরাজনীতিকরণ: বিএনপির বাস্তববাদী অবস্থান ও এন্টি পলিটিক্সের ফাঁদ

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংষ্কার প্রসঙ্গটি এখন এক ধরনের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপির অবস্থান নিয়ে... বিস্তারিত