বিদেশফেরত যাত্রীরা শুল্ক ছাড়াই যেসব পণ্য আনতে পারবেন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৯ ১০:১৬:৫৪
বিদেশফেরত যাত্রীরা শুল্ক ছাড়াই যেসব পণ্য আনতে পারবেন

বিদেশ থেকে ফেরা যাত্রীদের জন্য যে নিয়মে নির্ধারিত পণ্য আনতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়, সেটাই ‘ব্যাগেজ রুল’ নামে পরিচিত। প্রতিবছরের মতো এবারও বাজেটে এই নিয়মে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা কী আনতে পারবেন, কী আনতে পারবেন না এবং কোথায় শুল্ক পরিশোধ করতে হবে সেসব বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি হয়েছে।

ব্যাগেজ রুলের আওতায় যাত্রীরা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় নিজেদের জন্য বা পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পণ্য আনতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ আমদানির মতো কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হয় না এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যে শুল্কও মাফ থাকে। এ নিয়মে গৃহস্থালি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্যগুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

কে কত কেজি আনতে পারবেন?

ব্যাগেজ রুলে নির্ধারিত হয়েছে যাত্রীদের বয়স অনুযায়ী তারা কত কেজি ওজনের পণ্য শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন। ১২ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী যাত্রীরা সর্বোচ্চ ৬৫ কেজি ওজনের পণ্য আনতে পারবেন বিনা শুল্কে। অন্যদিকে, ১২ বছরের নিচের শিশুরা ৪০ কেজি পর্যন্ত পণ্য আনতে পারবে একই সুবিধায়।

যেসব পণ্য শুল্ক ছাড়াই আনা যাবে (১৯টি ধরণ)

সরকার নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী, একজন যাত্রী ১৯ প্রকার পণ্য শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও একটি নতুন মোবাইল

একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার

একটি প্রিন্টার, স্ক্যানার ও মিউজিক সিস্টেম

২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন

ওভেন, মাইক্রোওয়েভ, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার

ব্লেন্ডার, কফি মেকার, ফুড প্রসেসর

সেলাই মেশিন ও টেবিল ফ্যান

১০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনার গয়না

একটি কার্টন সিগারেট

১৫ বর্গমিটার আয়তনের কার্পেট

খেলার ব্যক্তিগত সামগ্রী

এই সব পণ্যের জন্য কোনো শুল্ক-কর বা এলসি প্রয়োজন হয় না।

যেসব পণ্য আনতে শুল্ক দিতে হবে (১১টি প্রধান পণ্য)

কিছু নির্দিষ্ট পণ্য রয়েছে যেগুলো আনার ক্ষেত্রে শুল্ক-কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক। এসব পণ্যের তালিকায় রয়েছে:

সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি সোনার বার

২৩৪ গ্রাম বা ২০ তোলা রৌপ্যবার

৩০ ইঞ্চি বা তার বেশি মাপের টেলিভিশন

হোম থিয়েটার, রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজ

ওয়াশিং মেশিন, ক্লথ ড্রায়ার, ডিশওয়াশার

ঝাড়বাতি, এইচডি ক্যামেরা

এয়ারগান (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে)

এই সব পণ্যের ওপর ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০,০০০ টাকা পর্যন্ত শুল্ক-কর প্রযোজ্য হতে পারে।

সোনার বার ও গয়নায় নতুন শর্ত

এবারের বাজেটে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে সোনা ও মোবাইল ফোন আনার ক্ষেত্রে। আগে একজন যাত্রী একাধিকবার ১০০ গ্রাম সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এখন থেকে বছরে একবারই সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম সোনার গয়না আনার অনুমতি থাকবে, তাও শর্তসাপেক্ষে।

সোনার বারের ক্ষেত্রে, বছরে মাত্র একবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম (প্রায় ১০ ভরি) ওজনের একটি বার আনতে পারবেন। এতে প্রতি ভরিতে ৫ হাজার টাকা করে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।

মোবাইল ফোন আনার নতুন নিয়ম

আগে যাত্রীরা একাধিকবার নতুন মোবাইল ফোন আনতে পারতেন। তবে এখন থেকে বছরে একবার মাত্র একটি নতুন ফোন শুল্কমুক্তভাবে আনা যাবে। পাশাপাশি, দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও আনতে পারবেন বিনা শুল্কে।

এই পরিবর্তনের পেছনে সরকারের যুক্তি হলো ব্যক্তিগত ব্যাগেজ সুবিধার অপব্যবহার রোধ করা, শুল্ক ফাঁকি কমানো এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের স্বার্থ রক্ষা করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে এই নিয়মের সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ অনিয়ন্ত্রিতভাবে দামি পণ্য এনে বাজারে বিক্রি করেছেন, যা স্থানীয় শিল্প ও রাজস্ব উভয়ের জন্য ক্ষতিকর ছিল।

ব্যাগেজ রুলের নতুন পরিবর্তনগুলো একদিকে যেমন যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে, অন্যদিকে সরকারকে রাজস্ব আহরণে সাহায্য করবে। তবে এই নিয়মের প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও যাত্রীবান্ধবতা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে হয়রানি বা হয়রানিমূলক ব্যাখ্যার সুযোগ না থাকে।

বিদেশফেরত যাত্রীদের উচিত এসব নিয়ম সম্পর্কে আগেভাগেই জেনে রাখা, যাতে শুল্ক জটিলতা বা পণ্যের জব্দ হওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত