শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ!

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নির্ধারিত ঠিকানায় খুঁজে না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে আগামী ২৪ জুন মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। এদিন মামলার আরেক আসামি, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এই মামলার কেন্দ্রে রয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। প্রসিকিউশনের দাবি, ওই সময় সরকারি নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় এবং নির্বিচারে হত্যা চালায়। এতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় তৎকালীন সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশ প্রধান চৌধুরী মামুনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ গঠিত হয়।
গত ১ জুন, ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নেয় এবং শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, আসামিদের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে প্রকাশযোগ্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হাজির হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। আদালত মনে করেন, যথাযথ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যেহেতু তাদের অবস্থান নিরূপণ সম্ভব হয়নি, তাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিই পরবর্তী পদক্ষেপ।
গত ১২ মে, তদন্ত সংস্থা আদালতে দাখিল করে তদন্ত প্রতিবেদন, যেখানে শেখ হাসিনাকে এই গণহত্যার প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তদন্তকারীরা বলেন, আন্দোলন দমন করতে “সরকারি স্তরে পরিকল্পনা ও নির্দেশনার” ভিত্তিতে গণহত্যা সংঘটিত হয়।
এর আগে, ১৭ ডিসেম্বর ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুটি পৃথক শুনানিতে শেখ হাসিনাসহ আরও ৪৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে ২০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত হয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, তদন্ত সংস্থাকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করে বিচারিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তাদের বিচার ইতিহাসের দায়। এই মামলায় আমরা জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।”
আদালতও মন্তব্য করেছে, “কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি আইনের আওতায় না আসে, তাহলে তা বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি অসম্মান এবং ন্যায়বিচারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।”
শেখ হাসিনার মতো একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক নেত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠা দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি কেড়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি গভীর উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ বিষয়ে বিভক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কেউ কেউ এ বিচারকে “দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পথে এক ধাপ অগ্রগতি” হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছে, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান
- ইরানের কাছে বর্তমানে পরমাণু অস্ত্র নেই:নেতানিয়াহু