নওগাঁয় গরমে হাতপাখার চাহিদা তুঙ্গে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১৯:৩৩:২৯
নওগাঁয় গরমে হাতপাখার চাহিদা তুঙ্গে

সত্য নিউজ: দেশব্যাপী তীব্র তাপদাহের প্রেক্ষাপটে, যেখানে শহরের মানুষ বৈদ্যুতিক ফ্যান এবং এসি ব্যবহার করে গরম থেকে কিছুটা মুক্তি পাচ্ছেন, সেখানে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রামের বাসিন্দারা এখনও প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখে তালপাতার হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে, যখন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির চাহিদা বেশি, তখনও এই গ্রামের নারীরা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তালপাতার পাখা তৈরির পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, যদিও এই শিল্পের সামনে এখন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

ভালাইন গ্রাম, যা বর্তমানে “পাখাগ্রাম” নামে পরিচিত, এখানে প্রায় ৭০-৭৫টি পরিবারের মানুষ তালপাতার হাতপাখা তৈরি করে জীবনযাপন করছেন। তবে, তালগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে পাখা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, সব ধরনের উপকরণের দাম বৃদ্ধি, আর্থিক সমস্যা এবং লাভ কম হওয়া এই পেশার জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে। তবুও, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তালপাতার পাখা তৈরির পদ্ধতি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য। পুরুষরা তালপাতা সংগ্রহ করে তা শুকানোর পর নারীরা সেগুলোকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে এবং সৌন্দর্য বর্ধন করেন। এক নারী প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০টি পাখা তৈরি করতে পারেন এবং এসব পাখার জন্য তিনি ৭০ টাকা পান। তবে, হাতপাখা তৈরির সময় ও পরিশ্রমের তুলনায় এই মজুরি খুবই কম, যা কারিগরদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কমলা বানু এবং শাপলা খাতুন, যারা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, জানালেন যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা তাদের তৈরি হাতপাখা কিনতে আসেন, তবে বাজারে লাভের পরিমাণ আগের মতো নয়। ব্যবসায়ীরা আশরাফুল ইসলাম এবং শহীদ হোসেন বললেন, "প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় ৮-৯ টাকা, কিন্তু বিক্রি হয় ১০-১১ টাকায়, ফলে লাভের পরিমাণ কমে গেছে।" এসব পাখা দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান।

এই শিল্পের ভবিষ্যত রক্ষা এবং তার উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) নওগাঁর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার জানান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হচ্ছে এবং পাখা তৈরির কারিগরদের আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হলে তাদের আরও সফল হতে সহায়তা করা যাবে।

তালপাতার হাতপাখা তৈরি, যা পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যসম্মত, সেই সঙ্গে নারীদের জন্য আয়ের একটি উৎস, যদি প্রশিক্ষণ এবং ঋণের সুবিধা পাওয়া যায়, তাহলে এটি একটি বৃহত্তর শিল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তবে, সঠিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা এবং সহায়তা পেলে এই শিল্প আরও এগিয়ে যেতে পারে, যা স্থানীয় মানুষদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

পরিবেশবান্ধব এই শিল্পের প্রতিরক্ষা এবং সম্প্রসারণের জন্য সরকারি উদ্যোগ, বিশেষত সহজ সুদের ঋণ ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এটি বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই জীবিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ