সজীব ওয়াজেদের ‘গোপন সফর’, কোথায় গেলেন?

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১০:০৪:৪৩
সজীব ওয়াজেদের ‘গোপন সফর’, কোথায় গেলেন?

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে গোপনে দিল্লি গেছেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এটিই জয় ও হাসিনার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এবং প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ৬ জুন শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত পৌঁছান জয়। পরদিন ছিল মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। দীর্ঘ সময় পর মা–ছেলের এই পুনর্মিলন ঘটেছে ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি অজ্ঞাতনামা উচ্চ-নিরাপত্তা বিশিষ্ট আবাসে, যেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও।

ভারতের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা আগে থেকেই সজীব ওয়াজেদের আগমনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যদিও প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, তিনি মাস কয়েক পর ভারতে যাবেন, তবে সেটি অপ্রত্যাশিতভাবে এগিয়ে আনা হয়। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরপরই সফরের চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

জয়ের আগমনকে ঘিরে কোনো VVIP প্রটোকল বা সামরিক বহরের উপস্থিতি না থাকলেও, বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনার আবাস পর্যন্ত কঠোর নজরদারিতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়া ছিল চূড়ান্ত গোপনীয়তায় মোড়ানো, যাতে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়।

এই সফরকে মূলত পারিবারিক পুনর্মিলন হিসেবেই দেখা হলেও, তা নিছক আবেগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনা বর্তমানে অনেকটাই নীরব রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হয়।

আওয়ামী লীগের প্রবাসী শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানিয়েছেন, “মা-ছেলে অনেকদিন পর একত্রিত হয়েছেন। এই সময়টি আবেগময় হলেও রাজনৈতিক কথাবার্তা না হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কৌশল ও পরবর্তী পদক্ষেপ এসব বিষয়ে জয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।”

তবে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা যায়নি।

সজীব ওয়াজেদ জয় দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে বেশ কিছুদিন তিনি নাগরিকত্ববিহীন জটিলতায় ছিলেন।

তবে জানা গেছে, সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড এবং নাগরিকত্ব পেয়েছেন। সেই নতুন মার্কিন পাসপোর্টেই তিনি ভারত সফর করেন। এই প্রসঙ্গে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “নতুন পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই তাঁর ভারত সফরের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। সফর ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।”

শেখ হাসিনার ঠিকানা ও পরিবারের সদস্যরা

বর্তমানে শেখ হাসিনা দিল্লির অজ্ঞাতনামা এক সরকারি সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও দিল্লিতে কর্মরত থাকলেও, ভাই জয়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে কি না এ বিষয়ে নিশ্চিত নয় কোনো সূত্র।

জয়ের ভারত সফর আপাতত সংক্ষিপ্ত। তিনি কয়েক দিনের মধ্যে ভারত ছাড়বেন বলে জানানো হয়েছে। এ সফরে তাঁর কলকাতায় যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে নিশ্চিত করেছে ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সির একাধিক কর্মকর্তা।

আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা জানান, “জয় কবে ফিরবেন, সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে যখন নেত্রীর (শেখ হাসিনার) সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হবে, তখন বিস্তারিত জানা যাবে এই পারিবারিক সময়ের আড়ালে রাজনৈতিক আলোচনার কিছু রূপরেখা তৈরি হয়েছে কি না।”

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত