২০২৬ সালের এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৭ ০১:০৯:৫৬
২০২৬ সালের এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা

জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে এবং সেই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই এই নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, আগামী রোজার ঈদের আগেই বিচার ও সংস্কারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হবে বলে তিনি আশা করেন। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি সম্মিলিত দায়—সেখানে জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ দেখা যাবে। তিনি জানান, এসব উদ্যোগই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের আস্থা ফেরাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে যত বড় রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার মূলে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক দল একচ্ছত্র ক্ষমতায় থেকে ফ্যাসিস্ট আচরণ করেছে। তিনি বলেন, “এ ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে, তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং যারা সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, তারা জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে পড়ে।”

ভবিষ্যতের জন্য একটি ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন, আগামী জুলাই মাসে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এই সনদে সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে যেগুলোর ওপর দলগুলো একমত, সেগুলোর তালিকা থাকবে। তিনি বলেন, এই সনদ হবে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারনামা, যেখানে তারা গণতন্ত্র, সুশাসন এবং জনকল্যাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে।

ভাষণে ড. ইউনূস চলমান বিচারপ্রক্রিয়া এবং গুম-খুনসহ গত ১৬ বছরের নির্যাতনের তদন্ত বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং এই বিচারপ্রক্রিয়া আদালতের অনুমতিক্রমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে—যা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। তিনি বিশ্বাস করেন, এতে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং গুজব ও অপপ্রচার বন্ধ হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিগত স্বৈরশাসনের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বন্দিশালার আয়তন অনেক ক্ষেত্রেই ছিল মাত্র তিন বাই তিন ফুট। এই ভয়াবহ অপরাধ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন কাজ করছে এবং গুমবিরোধী একটি আইন প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও ঢাকার তিনটি গুমকেন্দ্র পরিদর্শন ও গণশুনানি সম্পন্ন হয়েছে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, গত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে বাংলাদেশে নেট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৭৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রায় ৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ৩০টি সংস্কারপ্রস্তাবের মধ্যে ১৮টি ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক বিনিয়োগকারী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের অর্থনীতির ‘হৃৎপিণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এই বন্দর আধুনিক হলে নেপাল, ভুটানসহ আশপাশের দেশের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রূট হয়ে উঠবে।” তিনি বিদেশি অপপ্রচারের জবাবে বলেন, “বন্দর বিদেশিদের দিয়ে দেওয়ার গুজব পুরোপুরি ভিত্তিহীন।”

রাখাইন করিডর ইস্যুতে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মিয়ানমারকে কোনো করিডর দেয়নি। এটি একটি চিলে কান নিয়েছে ধরনের গল্প।” জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রস্তাবে একটি ত্রাণ চ্যানেল নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে মাত্র—কোনো চুক্তি হয়নি বলে তিনি স্পষ্ট করেন।

দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনূস বলেন, “যদি কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়ানো না যায়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়।” তিনি জানান, মাদ্রাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রযুক্তি ও বিদেশি ভাষা শিক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং কাতার চ্যারিটির সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “দেশ এখন এক ধরনের যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে।” পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা এই নতুন যাত্রাকে থামাতে চায়, কিন্তু জনগণের ঐক্য এবং প্রতিরোধই তাদের ব্যর্থ করে দেবে। তিনি দেশবাসীকে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

সবশেষে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. ইউনূস তাঁর ভাষণ শেষ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই অস্থায়ী সরকার তার দায়িত্বের মেয়াদে যথাসম্ভব সংস্কার ও বিচার সম্পন্ন করতে পারবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত