বিশেষ প্রতিবেদন

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ লন্ডনে লেখা হচ্ছে? গুঞ্জনে তারেক-ইউনুস বৈঠক

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৫ ২৩:৪৯:৩৫
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ লন্ডনে লেখা হচ্ছে? গুঞ্জনে তারেক-ইউনুস বৈঠক

তারেক রহমান–ইউনুস সম্ভাব্য বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র জল্পনা-কল্পনা চলছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে একটি ব্যক্তিগত বা অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে একাধিক কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে। ৯ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ড. ইউনুসের লন্ডন সফরকে কেন্দ্র করে এই আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্ভাব্য সাক্ষাৎ যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রূপরেখার ক্ষেত্রে বড় ধরনের মোড় ঘোরানো ঘটনা হয়ে উঠতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার সফরটি যুক্তরাজ্য সরকার ‘সরকারি সফর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সফরসূচি অনুযায়ী, ১১ জুন তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন। আলোচনায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারে যুক্তরাজ্যের সমর্থন চাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ওইদিনই বিকেলে তিনি চেথাম হাউস আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপে অংশ নেবেন, যার প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে: ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথে—চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা।’

১২ জুন সকালেই তিনি বাকিংহাম প্রাসাদে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং বিকেলে সেন্ট জেমস প্রাসাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাজা চার্লসের হাত থেকে ‘কিংস চার্লস হারমোনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন। এই আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন সম্মান পূর্বে পেয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন। সফর শেষে ১৩ জুন তিনি লন্ডন ত্যাগ করবেন এবং ১৪ জুন সকালে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

তবে সবকিছুর মধ্যেও সবচেয়ে আলোচিত ও স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠেছে—তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনুসের সম্ভাব্য বৈঠক। সরকারি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের কথা স্বীকার না করলেও, সফরসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি ‘উইন্ডো’ রাখা হয়েছে যাতে প্রয়োজন হলে বা দুই পক্ষ সম্মত হলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই সাক্ষাৎ হতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বৈঠককে অনেকে ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে দেখছেন। কারণ, একদিকে আছেন সরকারের নেতৃত্বে থাকা একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির শীর্ষ নেতা—এই দুইজনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হলে তা দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ হ্রাস করে নতুন একটি অন্তর্বর্তী সমঝোতার পথে এগিয়ে যেতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্ভাব্য বৈঠক রাজনীতিকে শুধু সমঝোতার দিকে ঠেলে দেবে না, বরং দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে—বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে ফিরছে। পশ্চিমা শক্তিগুলোর চাপ, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং আন্দোলনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে এমন একটি সাক্ষাৎ উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক হতে পারে। রাজনৈতিক গবেষক ও কলামিস্টদের মতে, এটি জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

যদিও বিএনপি বা ড. ইউনুসের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি, তবে লন্ডনের রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ বাড়ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও গবেষণা সংস্থা ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি ঘিরে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। অনেকেই মনে করছেন, গত মাসে ইউনুস ও তারেক রহমানের মধ্যে ফোনালাপের খবরের পটভূমিতে এই বৈঠক হতে পারে একটি স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা।

সব মিলিয়ে ড. ইউনুসের এই সফর শুধু একটি পুরস্কার গ্রহণ কিংবা কূটনৈতিক সফর নয়—বরং এটি হয়ে উঠছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে সম্ভাব্য একটি বাঁকবদলের মুহূর্ত। এখন প্রশ্ন একটাই—এই সম্ভাব্য বৈঠক কি সত্যিই বাস্তবায়িত হবে? যদি হয়, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত