ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমছে কেন? বিশ্লেষণে উঠে আসছে পাঁচটি প্রধান কারণ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ৩০ ২২:১৩:৪৯
ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমছে কেন? বিশ্লেষণে উঠে আসছে পাঁচটি প্রধান কারণ

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.৫%, যেখানে আগের বছর তা ছিল ৯.২%। বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে—এই পতনের পেছনে রয়েছে একাধিক বহুবিধ কারণ। নিচে তা বিশ্লেষণ করে তুলে ধরা হলো:

১. বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনা—বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ভারতের ওপর বড় ধাক্কা দিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ২৭% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন, যার ফলে ভারতের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে বৈদেশিক চাহিদা কমেছে, উৎপাদন খাত সঙ্কুচিত হয়েছে।

২. উৎপাদন খাতের দুর্বলতা ও বিনিয়োগের ঘাটতি

ভারতের অর্থনীতি মূলত তিনটি খাতের উপর দাঁড়িয়ে—কৃষি, সেবা ও শিল্প/উৎপাদন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উৎপাদন খাত দুর্বল হয়েছে, নতুন কারখানা বা উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে বেসরকারি বিনিয়োগ আশানুরূপ হয়নি। সরকারি ব্যয়ই মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।

৩. ভোক্তাদের আস্থা ও চাহিদার সংকট

শহরাঞ্চলে ভোক্তা চাহিদা কমে এসেছে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থানহীনতা সাধারণ মানুষের খরচ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি ও চাহিদা—দুটোই কমেছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে জিডিপিতে।

৪. কঠোর আর্থিক নীতি ও সুদের হার বৃদ্ধি

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নীতিগত সুদের হার বাড়িয়েছে। এর ফলে ঋণ গ্রহণ ব্যয়বহুল হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পাচ্ছেন না, ফলে বিনিয়োগ ও উৎপাদনেও ভাটা পড়েছে।

৫. বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে ধীরগতি

যদিও ভারত নিজেকে চীনের বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান আইফোন উৎপাদনে আগ্রহ দেখিয়েছে, তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিবেশের অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের টানাপড়েন, এসব বিনিয়োগ প্রকল্পে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

যদিও চ্যালেঞ্জগুলো বড়, অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন— মুদ্রানীতির শিথিলতা, ভালো বর্ষার সম্ভাবনা, আয়কর ছাড়, এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি হ্রাস— এই উপাদানগুলো ভারতীয় অর্থনীতিকে আগামী দিনে খানিকটা ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে।

বর্তমানে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রধানত সরকারি ব্যয়ের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু একটি টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বেসরকারি বিনিয়োগ, রপ্তানি প্রবাহ, এবং ভোক্তা আস্থা পুনরুদ্ধার। যদি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বা বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬%-এর নিচে নামার আশঙ্কা থেকে যায়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত