কে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন? জেনে নিন আদ্যোপান্ত

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ৩০ ১৭:৩৪:২৮
কে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন? জেনে নিন আদ্যোপান্ত

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার অপরাধ জগতের ত্রাস হিসেবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। শোনা যায় এবার বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকে হত্যার এসাইনমেন্ট ছিল তার।সুব্রত বাইনের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যতম সহযোগী মোল্লা মাসুদকে। মঙ্গলবার কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনাকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সুব্রত বাইন ‘সেভেন স্টার বাহিনী’র প্রধান হিসেবে পরিচিত। একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার প্রভাব ছিল তুঙ্গে। তার পুরো নাম ত্রিমাত্রী সুব্রত বাইন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসাসহ একাধিক অভিযোগে প্রায় ৩০টিরও বেশি মামলা রয়েছে।

সুব্রত বাইনের জন্ম ১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। তার আদি নিবাস বরিশালের আগোলঝড়া থানার জোবারপাড় গ্রামে। বাবা ছিলেন একজন এনজিওর গাড়ি চালক, আর মা ও তিন বোনকে নিয়ে তারা ঢাকার মগবাজারে বসবাস করতেন। বরিশালে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পরে ঢাকায় এসে এসএসসি পাস করেন এবং সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বইয়ের বদলে হাতে তুলে নেন অস্ত্র।

১৯৯৩ সালে ঢাকার মধুবাজারে এক সবজি ব্যবসায়ীকে খুন করে সুব্রত পুলিশের নজরে আসেন। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক খুন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠে আসে। মগবাজার, রমনা, কাওরান বাজার ও মধুবাগ এলাকায় সে সময় নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটত। সুব্রত পরে বিশাল সেন্টারে দোকান মালিক সমিতির নেতাও হন এবং সেই পরিচয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি হয়ে ওঠেন আরও ভয়ঙ্কর। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হন তিনি। এক সময় তার জন্মদিনে মগবাজারের মধুবাগ মাঠে উৎসব আয়োজন করা হয় যেখানে সরকারদলীয় নেতাদের অংশগ্রহণ তাকে ‘তারকা সন্ত্রাসী’তে পরিণত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রিপল মার্ডার, মগবাজারে একাধিক খুনসহ বহু ঘটনায় তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯৯৭ সালে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে নয়াপল্টনের একটি হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ব্যক্তিগত জীবনে কয়েকবার বিয়ে করেন এবং এক স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সও হয়।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে যার প্রথম নাম ছিল সুব্রত বাইনের। তার নামে ইন্টারপোলও রেড নোটিশ জারি করে। এরপর তিনি পালিয়ে ভারতে গিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেন। সেখানে এক নারীর সঙ্গে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং অবৈধভাবে ভারতের নাগরিকত্ব লাভের চেষ্টা করেন।

২০০৮ সালে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার দুবাই যান এবং সেখান থেকে ফিরে পুনরায় অপরাধে যুক্ত হন। একসময় চিত্রনায়িকার কাছে চাঁদা দাবি করায় পুলিশের নজরে পড়ে যান এবং পালাতে গিয়ে নেপালের কাকরভিটেতে ধরা পড়েন। সেখানে জেল থেকে ২০১২ সালে সুরঙ্গ কেটে পালিয়ে ফের কলকাতা ফেরেন। পরে আবারও গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার কারাগারে ছিলেন।

কলকাতায় বসে বসেই সুব্রত বাংলাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন। সরকারি প্রকল্পে ঠিকাদারি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন তিনি। নদীয়ায় ৫০ বিঘা জমি ও একটি বাগানবাড়িও কিনেছিলেন বলে জানা গেছে।

তার পরিবার এখন গাজীপুরের ছায়াপাড়ায় বসবাস করছে। সেখানে পাঁচখানা জমির ওপর তাদের বাড়ি রয়েছে। সুব্রতের বাবা বিপুল বাইন ও মা কুমুলিনী সেখানেই থাকেন।

সুব্রত বাইনকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পুরোনো মামলাগুলো পুনরায় তদন্তের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, সুব্রত বাইনের গ্রেফতার ঢাকার অপরাধ জগতে একটি বড় ধস নামাতে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত