সেবা বন্ধ ৪ ঘণ্টা, চিকিৎসক-নার্স ‘জিম্মি’: চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে উত্তেজনা তুঙ্গে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৮ ১৭:০১:৪২
সেবা বন্ধ ৪ ঘণ্টা, চিকিৎসক-নার্স ‘জিম্মি’: চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে উত্তেজনা তুঙ্গে

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আহতদের হামলায় ভয়ে চিকিৎসক-নার্সদের বহির্গমন, জরুরি ছাড়া বন্ধ সব চিকিৎসাসেবা

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আহত আন্দোলনকারীদের হামলার ঘটনায় টানা চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে দুপুরের মধ্যেই হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন অধিকাংশ চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। ফলে জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের সব চিকিৎসা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম একপ্রকার অচল হয়ে গেছে।

বুধবার (২৮ মে) সকাল ১১টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ চোখ হারানো কয়েকজন আহত ব্যক্তি চিকিৎসাসেবায় অবহেলার অভিযোগ এনে চিকিৎসক-কর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য আগের দিন থেকেই।

বিষপানের হুমকি ও পরিচালকের ওপর হামলার অভিযোগ

মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আহত চার আন্দোলনকারী—শিমুল, সাগর, মারুফ ও আবু তাহের। রেফার না করা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে তারা হঠাৎ পকেট থেকে বিষের শিশি বের করে গলায় ঢালার চেষ্টা করেন। অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে পরিচালকের কক্ষ ভাঙচুর করা হয় এবং পরিচালকের ওপর হামলা চালানো হয়। পরদিন সকালে কর্মীরা নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।

হামলা, সংঘর্ষ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

সকাল থেকেই হাসপাতালের ভেতরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আহতদের একাংশ ও হাসপাতাল কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, মারধর এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই সময় সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে। হাসপাতাল চত্বরে তখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে।

হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নুরে আলম বাবু বলেন, “আমাদের পরিচালকের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। অফিস রুম ভাঙচুর করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া অসম্ভব। আমরা নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতিতে গেছি।”

একজন সিনিয়র নার্স অভিযোগ করেন, “আমরা ঝুঁকি নিয়ে আহতদের চিকিৎসা করেছি, এখন তারাই আমাদের মারছে।”

আহতদের পাল্টা অভিযোগ

অন্যদিকে আহত আন্দোলনকারীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি, চিকিৎসা তো পাচ্ছেন না বরং অপমান ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

আন্দোলনকারী আবু তাহের বলেন, “আমরা পরিচালকের কাছে বরাদ্দের অর্থ ও চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তিনি কথা না শুনে চলে যান। আমরা চোখ হারিয়ে ১০ মাস ধরে পড়ে আছি। রেফার করা হচ্ছে না। এক সিন্ডিকেট আমাদের টাকা আত্মসাৎ করছে।”

চিকিৎসাধীন ইব্রাহিম বলেন, “সকালবেলা নাস্তা করতে নামতেই হাসপাতালের লোকজন আমাদের মারধর করেছে। পরে আমরা প্রতিক্রিয়া জানাতে গেলে সেনাবাহিনী পর্যন্ত আমাদের ওপর চড়াও হয়।”

হাসপাতাল কার্যত অচল, রোগীরা চরম দুর্ভোগে

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া সব কার্যক্রম বন্ধ। রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন। অনেকের আজ ছিল অপারেশনের নির্ধারিত তারিখ, তাও বাতিল হয়ে গেছে।

রোগী বাবুল মিয়া বলেন, “আজ আমার অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল। কিন্তু আন্দোলনের কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার কবে হবে, কেউ বলতে পারছে না।”

পরিচালক বলছেন, ‘চিকিৎসক-নার্সরা জিম্মি’

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, “আমার চিকিৎসক-নার্সরা এখনো জিম্মি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত। বিকেলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন, তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজ করছে।

পরবর্তী করণীয় নির্ভর করছে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে হাসপাতালে। বিকেলের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা আসতে পারে।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এমন দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়লেও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ