দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, যে যে পণ্যের দাম বাড়তে পারে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৬ ১৩:৫৯:০৫
দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, যে যে পণ্যের দাম বাড়তে পারে

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিক, ফ্রিজ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এসব পণ্যে কার্যকর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে মাটি, হোগলা এবং সুপারি পাতার তৈরি পরিবেশবান্ধব পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতির সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। একদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, অন্যদিকে ভোক্তাদের জন্য পণ্য কেনা কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে বিক্রি কমে যাবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্লাস্টিক শিল্পে প্রায় ৫ হাজার প্রতিষ্ঠান সক্রিয়, যেখানে ১৫ লাখের মতো মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান রয়েছে। আরএফএল, গাজী, বেঙ্গল, ওয়ালটন, আকিজ ও তানিনের মতো বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এই খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, “প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করা হলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং সাধারণ মানুষ ও ফেরিওয়ালাদের কাছে এই পণ্যগুলোর মূল্য গ্রহণযোগ্য থাকবে না। এতে দেশীয় বাজারে বিক্রি হ্রাস পাবে এবং রপ্তানিও হুমকির মুখে পড়বে।”

২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে, যা শিল্পটির টিকে থাকার সক্ষমতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

শুধু প্লাস্টিক নয়, ফ্রিজ ও এসির মতো ইলেকট্রনিক্স পণ্যেও ভ্যাট ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব নিয়েছে এনবিআর। এর আগে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে এই শিল্পের করপোরেট কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল, যদিও ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর ছাড় থাকার কথা ছিল।

ইলেক্ট্রোমার্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার বলেন, “এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ফ্রিজের দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা ও এসির দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়ে যাবে। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য এটি বড় ধাক্কা হবে।” তিনি আরও বলেন, “এখনই যখন শিল্পটি রপ্তানির দিকে এগোচ্ছে, তখন এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ দেশীয় উদ্যোগ ও শিল্পায়নকে থামিয়ে দিতে পারে।”

বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় সাত লাখ এসি ও ২০-২৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়, যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের দখলে। বিদেশি ব্র্যান্ডের উপর নির্ভরতা কমিয়ে এখন এই খাত রপ্তানির সম্ভাবনায় এগোচ্ছে।

ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় আসছে পরিবেশবান্ধব পণ্য খাত। মাটি ও পাতার তৈরি তৈজসপত্র, বিশেষ করে সুপারি পাতার খোল দিয়ে তৈরি প্লেট ও বাটি জাতীয় পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট তুলে নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান “দেশীয় বিশ্রুতি”-এর কর্ণধার আল মাহাদী বলেন, “এই খাতে এখনো বিশাল সম্ভাবনা আছে। মাত্র এক-দুটি মেশিন দিয়ে ২০ ধরনের পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা যায়। ভ্যাট অব্যাহতি দিলে নতুন উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসবেন।”

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স শিল্প এখন শক্ত অবস্থানে। আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই দূর হয়েছে। এসব শিল্পে আর ভ্যাট সুবিধার প্রয়োজন নেই।”

তবে বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অর্থনীতি এখনো পুনরুদ্ধারের পথে। এমন সময় ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়িয়ে দেয়ার ফলে পণ্যের দাম বাড়বে, বাজারে মন্দা আরও তীব্র হবে এবং ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমবে। সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থ ঠিক থাকলেও, টেকসই শিল্পায়ন এবং ভোক্তাবান্ধব অর্থনীতির জন্য আরও সুপরিকল্পিত ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতিনির্ধারণ প্রয়োজন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত