প্রধান উপদেষ্টার ‘না’ বিইআরসির প্রস্তাবে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৪ ০৯:১০:৫৩
প্রধান উপদেষ্টার ‘না’ বিইআরসির প্রস্তাবে

সত্য নিউজ: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বহু প্রতীক্ষিত নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব আবারো ফেরত পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। প্রস্তাবনায় সংশ্লিষ্ট পদগুলোর যৌক্তিকতা, প্রাসঙ্গিকতা ও কর্মপরিধি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে প্রায় এক দশক ধরে চলা জনবল কাঠামো সংশোধন প্রক্রিয়ায় নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

২০১৭ সালে বিদ্যমান ৮১টি পদের সঙ্গে আরও ২০০টি নতুন পদ যুক্ত করে ২৮১ পদের একটি খসড়া কাঠামো তৈরি করে বিইআরসি। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেটি সংশোধন করে ১১৮ পদে নামিয়ে আনে। ২০১৯ সালে অর্থ বিভাগের অনুমোদন ও ২০২১ সালের মার্চে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় রাজস্ব খাতে ৬৫টি নতুন পদ অনুমোদন করা হয়। এতে মোট জনবল দাঁড়ায় ১৪৬ জনে।

এই ১৪৬ পদের মধ্যে গ্রেড-৩ এবং তদূর্ধ্ব চারটি পদ সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুমোদন চাওয়া হয় ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রস্তাবের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে পুনরায় পাঠাতে বলে। তারপর থেকে এ প্রক্রিয়া থেমে যায়। প্রায় দুই বছর পর ২০২3 সালের জুলাইয়ে প্রস্তাব আবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আট মাস পর সেটি অনুমোদনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গেলে, তারা পুনরায় পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়।

দীর্ঘদিন ধরে কাঠামো অনুমোদন ঝুলে থাকায় বিইআরসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ চরমে উঠেছে। পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় বহু কর্মকর্তা বছরের পর বছর একই পদে থেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন কর্মকর্তা ১৩ বছর ধরে সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত, কিন্তু উপপরিচালক পদে উত্তরণ হয়নি। আরেকজন কর্মকর্তা ২৬ বছর ধরে প্রথম শ্রেণির পদে কাজ করছেন, যার মধ্যে তিন বছর তিনি উপপরিচালক ছিলেন, তবুও অবসর গ্রহণের মাত্র দুই মাস আগে তিনি পরিচালক পদে উন্নীত হতে পারেননি।

বিইআরসিতে প্রেষণে নিয়োগের প্রবণতাও জটিলতা বাড়াচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিভাগে পরিচালক পদে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কর্মকর্তাদের আনা হচ্ছে, যারা পরোক্ষভাবে নিজেদের সংস্থার পক্ষে মূল্যায়নে যুক্ত থাকছেন। যেমন, তিতাস গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা বিইআরসিতে বসে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যাচাই করছেন—যা স্বার্থের সংঘাতের উদাহরণ। এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাবসহ ভোক্তা সংগঠনগুলো সোচ্চার।

২০১২ সাল থেকে ঝুলে থাকা জ্বালানি খাতের প্রবিধানমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথম দিকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করলেও বর্তমানে সেটি কার্যত অগ্রসর হয়নি। অনেকটা আগের সরকারের মতোই বর্তমান প্রশাসনও এটি ঝুলিয়ে রাখার কৌশলেই রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।

জনবল কাঠামোর অনুমোদনহীনতা শুধু বিইআরসির প্রশাসনিক অচলাবস্থার জন্ম দেয়নি, এটি প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেমন স্থবির হয়ে পড়েছে, তেমনি ভোক্তাস্বার্থের সুরক্ষাও ঝুঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে জনবল কাঠামোর অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃঢ় পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ