সত্য নিউজ: দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক সংকোচ ও দমন-পীড়নের সময় অতিক্রম করে সংগঠনের পুনর্গঠনে নেমেছে বিএনপি। দলটি এবার সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে সংগঠিত ও সম্প্রসারিত করার একটি বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ১৫ মে থেকে শুরু হয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত দুই মাসব্যাপী চলবে এই সদস্য সংগ্রহ অভিযান, যার লক্ষ্য—দেশব্যাপী ১ কোটি নতুন প্রাথমিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা।
এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে।
তিনি বলেন, “এবার শুধুমাত্র সদস্য নবায়ন নয়; বরং নবায়নের পাশাপাশি নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা টার্গেট করেছি—প্রায় এক কোটি নতুন প্রাথমিক সদস্য নিবন্ধন করব ইনশাআল্লাহ।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: দমন-পীড়নের পর পুনর্গঠন
রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের "ফ্যাসিবাদী শাসনামলে" বিএনপি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেনি। দলের কার্যালয়ে একাধিকবার আক্রমণ হয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে অফিসের যন্ত্রপাতি, দলীয় নথিপত্র লুট হয়েছে। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও দলটি টিকে থেকেছে এবং এখন নতুন উদ্যমে সংগঠন পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করে, যেখানে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে গতিশীলতা আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। রিজভীর ভাষ্য, “আওয়ামী দুঃশাসনের সেই ভয়ংকর ছায়া এখন আর নেই। এই পরিস্থিতিতে মানুষ আগ্রহ নিয়ে বিএনপির সদস্য হতে চাইবেন—এই আমাদের প্রত্যাশা।”
সদস্যপদ পেতে হবে যাচাই-বাছাইয়ের পর
সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিয়েছেন রিজভী। তিনি বলেন, “কেউ যদি এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, জমি দখল, টাকা পাচার বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে—তারা দলের সদস্য হতে পারবে না। একটি সুশৃঙ্খল, আদর্শভিত্তিক দল গড়াই আমাদের উদ্দেশ্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই সমাজের সর্বস্তরের ‘ফ্রেশ’, ভদ্র, সচেতন ও দায়িত্বশীল মানুষ—যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, তারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হোন। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ব্যাংকার, কৃষক বা শ্রমিক—যিনি এই চেতনা ধারণ করেন—তিনি এই দলের সদস্য হতে পারেন।”
আ.লীগ থেকে আগতদের সদস্যপদ প্রসঙ্গে
এক প্রশ্নের উত্তরে রিজভী জানান, কেউ আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু বর্তমান শাসনব্যবস্থা ও দুর্নীতির রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তারা চাইলে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বিএনপির সদস্য হতে পারবেন।
“আমরা কোনো দাগি অপরাধী বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের নয়—যারা সত্যিই পরিবর্তন চান, যারা আদর্শবান, তাদের সঙ্গে নিয়েই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাই,”— বলেন রিজভী।
সংগঠন গোছাতে নতুন উদ্যমে বিএনপি
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা।
তাদের মতে, এই সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি শুধুমাত্র সদস্য বাড়ানো নয়, বরং তা একটি সংগঠনের ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ—যার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে এবং দলের ঘাঁটি আবারও দৃঢ় হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির এ ধরনের বড় পরিসরের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানো নয়, বরং সামাজিক ও আদর্শিক ভিত্তিতে দলকে নতুন করে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস হিসেবে এই কর্মসূচিকে দেখা যেতে পারে।
দুই মাসে ১ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কতটা সফল হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি মাঠে সক্রিয় উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে—একটি পুনর্গঠিত, নবউদ্যমী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে।