কালো দাগকে অবহেলা নয়: জেনে নিন চোখের নিচের কালো দাগের স্বাস্থ্যঝুঁকি

চোখের নিচে কালো দাগ বা ‘ডার্ক সার্কেল’ এখন একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত রাত জাগা, ক্লান্তি বা ঘুমের অভাবকে এর জন্য দায়ী করা হয় এবং অনেকেই এটিকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি চোখের নিচে স্থায়ীভাবে কালো দাগ থেকে যায়, তবে তা শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা জটিল সমস্যার ইঙ্গিত বহন করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিডনি ও লিভারের কর্মহীনতা, দুর্বল রক্ত সঞ্চালন, হরমোনের পরিবর্তন কিংবা হজমের সমস্যার মতো কারণগুলোও চোখের নিচের কালো দাগের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকতে পারে। অর্থাৎ, এটি শুধু ক্লান্তি নয়, অনেক সময় বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিরও বার্তা দেয়।
যেসব রোগের পূর্বাভাস হতে পারে
১. কিডনির দুর্বলতা বা ফেইলিউর
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, চোখের নিচের কালো দাগ বা পেরিওরবিটাল হাইপারপিগমেন্টেশন কিডনির সমস্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হতে পারে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়। এর ফলে চোখের চারপাশে তরল জমা ও রঙের পরিবর্তন হতে পারে, যা কালো দাগকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কিডনির সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও চাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
২. লিভারের রোগ
চোখের নিচে কালো দাগ দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে। দুর্বল লিভার রক্ত থেকে বিষাক্ত উপাদান ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয়, ফলে ত্বক ফ্যাকাশে ও নিস্তেজ হয়ে যায়। গবেষণা বলছে, লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষের চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায়। লিভার ফুলে যাওয়া বা চর্বি জমার কারণে শরীরের বিপাকক্রিয়া ব্যাহত হয়, চোখ ক্লান্ত ও কালচে দেখায়।
৩. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও অনিয়মিত মাসিক
নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক বা হরমোনের অসামঞ্জস্যও চোখের নিচে কালো দাগের কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, ফলে মুখের ত্বকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় না। এর ফলে চোখ ক্লান্ত ও বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখানোর প্রবণতা তৈরি হয়। মাসিকের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সমাধান ও সতর্কতা
চোখের নিচের কালো দাগের চিকিৎসা নির্ভর করে এর মূল কারণের ওপর। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার উন্নয়ন বড় ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাবার (ফলমূল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন)—সবই ত্বকের সুস্থতার জন্য জরুরি।
চিকিৎসকরা বলছেন, চোখের নিচে কালো দাগকে হালকাভাবে না দেখে প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, এটি শুধু সৌন্দর্যগত সমস্যা নয়, কখনো কখনো ভয়াবহ রোগের আগাম সতর্কবার্তাও হতে পারে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
ম্যালেরিয়া: কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ম্যালেরিয়া একটি মশাবাহিত জীবন-হুমকিপূর্ণ রোগ, যার কার্যকারক জীব প্লাজমোডিয়াম নামে পরজীবী। সংক্রামিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এই পরজীবীমানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং এক জটিল জীবনচক্রের মাধ্যমে লিভার ও লোহিত রক্তকণিকায় বংশবৃদ্ধি করে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে রোগটি তুলনামূলকভাবে কম হলেও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে এটি এখনও জনস্বাস্থ্যের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। নিচের অংশগুলোতে আমরা ম্যালেরিয়ার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থেকে শুরু করে উপসর্গ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিরোধ, বিশেষ পরিস্থিতি, এমনকি আহার ও স্ব-যত্ন পর্যন্ত সবকিছু ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছি।
প্লাজমোডিয়াম প্রজাতি ও রোগতত্ত্বের সারসংক্ষেপ
মানুষে ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী প্রধান পাঁচটি প্লাজমোডিয়াম প্রজাতি হলো প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, প্লাজমোডিয়াম ভিভ্যাক্স, প্লাজমোডিয়াম ওভালে, প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরিয়ে এবং প্লাজমোডিয়াম নলেসি।
ফ্যালসিপেরাম সর্বাধিক মারাত্মক এবং আফ্রিকায় বেশি দেখা যায়। ভিভ্যাক্স এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় বেশি, লিভারে সুপ্ত থেকে বারবার রিল্যাপ্স ঘটাতে পারে। ওভালে তুলনামূলক বিরল, পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা যায় এবং দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকতে পারে। ম্যালেরিয়ে সাধারণত মৃদু কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ দিতে পারে। নলেসি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানব ও ম্যাকাক প্রাইমেট থেকে জোনোটিক সংক্রমণ ঘটায় এবং দ্রুত জ্বর-চক্র সৃষ্টি করতে সক্ষম।
সংক্রমণ ও জীবনচক্রকে সহজভাবে বোঝা
সংক্রামিত মশা কামড়ালে স্পোরোজোয়েট রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে প্রথমে লিভারের হেপাটোসাইটে প্রবেশ করে অযৌন বংশবৃদ্ধি করে। দিন কয়েক পর লিভার থেকে মেরোজোয়েট রক্তে ফিরে আসে এবং লোহিত কণিকায় ঢুকে চক্রাকারে বংশবৃদ্ধি করে। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার অন্তর কোষ ভেঙে নতুন মেরোজোয়েট ছড়িয়ে পড়ে, ফলে জ্বর, কাঁপুনি, ঘাম এই পর্যায়ভিত্তিক উপসর্গচক্র তৈরি হয়। কিছু পরজীবী গ্যামেটোসাইটে রূপ নিয়ে আবার মশায় প্রবেশ করলে মশার দেহে যৌন প্রজননের পর নতুন স্পোরোজোয়েট গঠিত হয়।
রোগের ভার ও অর্থনৈতিক প্রভাব
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বহু দেশে ম্যালেরিয়া শিশু ও গর্ভবতীনারীরঅসুস্থতাএবং মৃত্যুর বড় কারণ। কর্মঘণ্টা হ্রাস, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি এবং শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ায় ম্যালেরিয়া দরিদ্রতা ও রোগের এক দুষ্টচক্র তৈরি করে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও জনসংখ্যার চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যগতভাবে কম-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেও মাঝে মাঝে ইম্পোর্টেড কেস দেখা যায়।
ঝুঁকির কারণ ও উচ্চঝুঁকির গোষ্ঠী
উচ্চ আর্দ্রতা, স্থির পানির আধিক্য ও মাঝারি উষ্ণতা মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল। সাহারা-উপসাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অংশবিশেষ উচ্চঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী ও তাদের অনাগত সন্তান, ম্যালেরিয়া-অপ্রচলিত এলাকা থেকে আগত ভ্রমণকারী, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং যারা বাইরে বেশি কাজ করেন যেমন কৃষক, বনকর্মী বা খনি শ্রমিক।
বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটের চা-বাগান এলাকা এবং ভারত–মিয়ানমার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বেশি দেখা যায়। দেশের মোট ৬৪ জেলার মধ্যে প্রায় এক ডজন এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। আক্রান্তদের মধ্যে চা-বাগানের শ্রমিক, পাহাড়ি ও সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠী, শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
উপসর্গ: জটিলতা অনুযায়ী বিভাজন
অনাক্রমিক বা তুলনামূলক জটিলতাহীন ম্যালেরিয়া:হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, কাঁপুনি, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, পেশী ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, অবসাদ, কখনও ডায়রিয়া। এই উপসর্গ ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী হয়ে প্রতি দুই বা তিন দিন অন্তর চক্রাকারে ফিরে আসতে পারে।
জটিল বা গুরুতর ম্যালেরিয়া:উচ্চ জ্বরের সঙ্গে চেতনা-হ্রাস, বিভ্রান্তি, বারবার খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত গভীর শ্বাস, লিভার-কিডনির কর্মহানি, ক্লিনিক্যাল জন্ডিস, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, তীব্র রক্তাল্পতা, অস্বাভাবিক রক্তপাত ইত্যাদি। সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হলে মস্তিষ্কে ফোলা বা ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসা না হলে দ্রুত প্রাণঘাতী হতে পারে।
রোগ নির্ণয়: দ্রুততা এখানে জীবন বাঁচায়
ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলেই অবিলম্বে রক্তপরীক্ষা জরুরি।
১) থিক ও থিন ব্লাড স্মিয়ার মাইক্রোস্কোপি পরজীবীর উপস্থিতি, ঘনত্ব ও প্রজাতি শনাক্ত করতে স্বর্ণমান।
২) র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট অ্যান্টিজেন সনাক্ত করে দ্রুত ফল দেয়। ইতিবাচক ফল মাইক্রোস্কোপি দ্বারা নিশ্চিত করা উত্তম।
৩) প্রয়োজন অনুযায়ী পূর্ণ রক্তকণিকা গণনা, লিভার-কিডনি ফাংশন, রক্তে শর্করা, আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাস ইত্যাদি জটিলতা মূল্যায়নে সাহায্য করে।
চিকিৎসা: প্রজাতি, জটিলতা ও প্রতিরোধক্ষমতার উপর নির্ভরশীল
চিকিৎসা শুরুর সময়ই রোগীর ভৌগোলিক এক্সপোজার, সম্ভাব্য ওষুধ-প্রতিরোধ এবং রোগের তীব্রতা বিবেচ্য।
অনাক্রমিক ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া: আর্টেমিসিনিন-ভিত্তিক কম্বিনেশন থেরাপি যেমন আর্টেমেথার-লুমেফ্যান্ট্রিন অথবা অ্যাটোভাকোন-প্রোগুয়ানিল প্রচলিত।
ভিভ্যাক্স বা ওভালে: তাত্ক্ষণিক রক্তধাপের চিকিৎসার পর প্রাইমাকুইন বা টাফেনোকুইনদিয়ে হাইপনোজোয়েট নির্মূল করে রিল্যাপ্স প্রতিরোধ করা হয়। গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজেনেজ ঘাটতি থাকলে এই ওষুধ বিপজ্জনক, তাই আগে স্ক্রিনিং দরকার।
গুরুতর ম্যালেরিয়া: হাসপাতালভিত্তিক শিরায় আর্টেসুনেট প্রথম পছন্দ। নিবিড় পর্যবেক্ষণে তরল-ইলেক্ট্রোলাইট সাম্য, রক্তে শর্করা, খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ, রক্তাল্পতা ও অঙ্গ-অসফলতার ব্যবস্থাপনা করা হয়।
অন্যান্য ওষুধ: ক্লোরোকুইন এখনও কিছু অঞ্চলে ভিভ্যাক্সের জন্য কার্যকর। মেফ্লোকুইন নির্বাচিত ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য হলেও স্নায়বিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারঝুঁকি বিবেচ্য। কুইনাইন বর্তমানে সীমিত নির্দেশনায় ব্যবহৃত হয়।
গর্ভাবস্থায়: প্রথম ত্রৈমাসিকে ওষুধনির্বাচন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। প্রতিরোধ ও চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই মা ও ভ্রূণের নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পায়, তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অপরিহার্য।
ভ্রমণকারীর জন্য প্রতিরোধমূলক ওষুধ
ভ্রমণের স্থান, সময়কাল, প্রতিরোধ-নকশা ও ব্যক্তিগত অবস্থা দেখে প্রফিল্যাক্সিস নির্ধারিত হয়। প্রচলিত বিকল্পের মধ্যে আছে অ্যাটোভাকোন-প্রোগুয়ানিল, ডক্সিসাইক্লিন ও মেফ্লোকুইন। যেকোনো কোর্স সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে শুরু ও শেষ করা জরুরি। একই সাথে কামড়-এড়ানোর ব্যবস্থা অপরিহার্য।
কামড়-এড়ানো ও ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ: ABCD নিয়ম মনে রাখুন
Awareness বা ঝুঁকিসচেতনতা, Bite prevention বা কামড় প্রতিরোধ, Chemoprophylaxis বা প্রফিল্যাক্সিস প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ এবং Diagnosis বা উপসর্গ হলেই দ্রুত পরীক্ষা এই চারটি স্তম্ভই প্রতিরোধের ভিত্তি।
বাস্তবে যা করবেন
- সূর্যাস্তের পর ঢিলেঢালা লম্বা হাতা পোশাক পরুন, উন্মুক্ত ত্বকে DEET বা অন্যান্য অনুমোদিত রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে মশারি ব্যবহার করুন
- দরজা-জানালায় স্ক্রিন, এয়ার কন্ডিশনিং বা ফ্যানের ব্যবহার
- ঘর-বাসার চারপাশে স্থির পানি অপসারণ করে মশার প্রজননস্থল নষ্ট করুন
- উচ্চঝুঁকির এলাকায় ইনডোর রেসিডুয়াল স্প্রে ও কীটনাশক-প্রক্রিয়াজাত মশারি কার্যকর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা
টিকা সম্পর্কিত কথা
ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে টিকা বর্তমানে কিছু অঞ্চলে ধাপে ধাপে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং শিশুদের ভার কমাতে সহায়তা করছে। টিকা জনস্বাস্থ্য প্যাকেজেরএকটিউপাদান, তবেএটি কামড়-এড়ানো ও প্রফিল্যাক্সিসের বিকল্প নয়। স্থানীয় গাইডলাইন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
বিশেষ পরিস্থিতি: গর্ভাবস্থা, শিশু ও সহ-রোগ
গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া প্লাসেন্টাল ম্যালেরিয়া, রক্তাল্পতা, কম ওজনের শিশুজন্মসহ জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। শিশু ও নবজাতকে রোগটি দ্রুত জটিল হতে পারে। ডায়াবেটিস, অপুষ্টি, এইচআইভি বা ক্যান্সার-থেরাপির মতো সহ-অবস্থায় দ্রুত শনাক্তকরণ ও নিবিড় তদারকি প্রয়োজন।
ডায়েট ও স্ব-যত্ন: সুস্থতায় সহায়ক
- অসুখ চলাকালে অল্প অল্প করে বারবার সহজপাচ্য খাবার খান।
- পর্যাপ্ত পানি, ওরাল রিহাইড্রেশন, ডাবের পানি, ফলের রস
- শক্তির চাহিদায় ভাত ও অন্যান্য সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট
- প্রোটিনের উৎস হিসেবে স্যুপ, ডিম, ডাল, মাছ-মুরগি
- ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ ফল-সবজি
- খুব চর্বিযুক্ত, অতিমশলাদার খাবার ও ক্যাফেইন পরিহার করুন
এসব ডায়েটারি টিপস চিকিৎসারবিকল্পনয়, বরং চিকিৎসার সঙ্গে সুস্থতায় সহায়তা করে।
করণীয় ও বর্জনীয়
করণীয়
- জ্বর শুরু হলেই ভ্রমণ-ইতিহাসসহ দ্রুত পরীক্ষা করান
- নির্ধারিত অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ঠিকভাবেএবংকোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যান
- কামড়-এড়ানোর প্রতিটি নিয়ম বাস্তবায়ন করুন
বর্জনীয়
- উপসর্গ কমে গেলেই ওষুধ বন্ধ করবেন না
- নিজে নিজে ওষুধ পাল্টাবেন না
- শিশু ও গর্ভবতীর ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া কোনো ওষুধ শুরু করবেন না
২০০০ সালেরপরম্যালেরিয়াবাংলাদেশেব্যাপকআকারধারণ করলেও সরকারের জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (NMCP), এনজিও ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিনামূল্যে কীটনাশক মশারি বিতরণ, র্যাপিড ডায়াগনস্টিকটেস্টের ব্যবহার এবং কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই অগ্রগতির প্রধান কারণ।
তবে চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো কঠিন, ভিভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার পুনরাবৃত্তি রোগীদের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করছে, আর সীমান্তবর্তী এলাকায় ওষুধ প্রতিরোধী পরজীবীর ঝুঁকিও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বেড়ে নতুন এলাকায় ম্যালেরিয়া ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
ঘন ঘন জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
ম্যালেরিয়া কি মানুষে মানুষে ছড়ায়?
-না, স্বাভাবিকসংস্পর্শেছড়ায়না। রক্তসঞ্চালন, সূঁচ ভাগাভাগি বা বিরলভাবে গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে, তবে প্রধানত মশার কামড়ই মাধ্যম।
প্রতিরোধী ট্যাবলেট খেলেও কি সংক্রমণ হতেপারে?
-হ্যাঁ, শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। তবে ঝুঁকি অনেক কমে এবং তীব্রতা সাধারণত কম থাকে। তাই কামড়-এড়ানোর ব্যবস্থা অপরিহার্য।
লক্ষণ না থাকলে কি পরীক্ষা দরকার?
-উচ্চঝুঁকির এলাকায় জ্বর হলেই পরীক্ষা জরুরি। কিছু প্রজাতি দেরিতে উপসর্গ দিতে পারে, তাই ভ্রমণ-পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস সতর্ক থাকুন।
দ্রুত সহায়তা কেন গুরুত্বপূর্ণ
ম্যালেরিয়া খুব দ্রুত গুরুতর হতে পারে। তাইজ্বর, কাঁপুনি, মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট, বিভ্রান্তির মতো উপসর্গ দেখা দিলে অপেক্ষা না করে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিন। শিশু, গর্ভবতী নারী এবং সহ-রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যালেরিয়াপ্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য। সচেতনতা, কামড়-এড়ানো, সঠিক প্রফিল্যাক্সিস, দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং গাইডলাইন-ভিত্তিক চিকিৎসা—এই পাঁচ স্তম্ভে আস্থা রাখলেই ব্যক্তিগত ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে কমানোসম্ভব। নিজের স্বাস্থ্যসচেতন অভ্যাস, পরিবারের সুরক্ষা এবং কমিউনিটি-স্তরের ভেক্টর নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ মিলে আমরা ম্যালেরিয়ামুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারি।
সর্ব রোগের ঔষধ কালিজিরা’র আদ্যপ্রান্ত: ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, ব্যবহার ও সতর্কতা
কালিজিরা বা কালোজিরা আমাদের খাদ্যসংস্কৃতি ও লোকঔষধি জ্ঞানের এক আবেগময় নাম। ইসলামী ঐতিহ্যে এটি বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত, যেখানে কালিজিরাকে মৃত্যু ব্যতীত বহুরোগেউপকারীবলা হয়েছে। আবার আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান ও ফাইটো-কেমিস্ট্রি দেখায়, ছোট্ট এই কালো বীজে আছে তেল, ফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন ও একাধিক বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, যা শরীরে নানা জৈবপ্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে কালিজিরা আজ লোকপ্রথা, রান্নাঘর এবং ল্যাবরেটরি—তিন ক্ষেত্রেই সমানভাবে আলোচিত।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কালিজিরা Nigella sativa, Ranunculaceae গোত্রের তেলবীজ জাত উদ্ভিদ। উদ্ভিদটি সাধারণত ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এর পাতা সূক্ষ্মভাবে বিভাজিত, ফুল সাধারণত সাদা বা লঘু নীল, কখনও পীতবর্ণও দেখা যায়। পুংকেশর অনেক, গর্ভকেশর তুলনামূলক লম্বা। কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণে গাছে ফুল ফোটে এবং শীতকালে গোলাকার ফল পরিপক্ব হয়। প্রতিটি ফলের খোলসে ২০ থেকে ২৫টি ত্রিকোণাকার কালো বীজ থাকে। বীজে স্থির তেলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হওয়ায় এটি রান্না, আচার, মসলা এবং ভেষজ তেল হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এর প্রাচীন নিবাস হিসেবে বিবেচিত, তবে আজ এটি পশ্চিম এশিয়া থেকে উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপ-আমেরিকার বাজারেও পরিচিত একটি তেলবীজ।
পুষ্টিগুণে কালিজিরা সমৃদ্ধ। সাধারণভাবে প্রতি ১০০ গ্রামে এটি উল্লেখযোগ্য ক্যালরি, প্রোটিন, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে। তেলের মূল শক্তি আসে লিনোলিক ও অলিক অ্যাসিড থেকে, সঙ্গে থাকে স্বল্পমাত্রায় লিনোলেনিক, পামিটিক ও স্টেয়ারিক অ্যাসিড। খনিজ উপাদানে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক চোখে পড়ার মতো; ভিটামিনে থাকে এ, বি-গ্রুপের কিছু ভিটামিন, সি ও ই। পুষ্টিমান জাত, আবহাওয়া, মাটি, চাষপদ্ধতি, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ওপর কিছুটা ওঠানামা করতে পারে, তাই যে কোনো সংখ্যা একটি যুক্তিসঙ্গত পরিসর হিসেবে বিবেচনা করাই ভালো।
কালিজিরার সবচেয়ে আলোচিত বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ হলো থাইমোকুইনোন। গবেষণায় এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশী বৈশিষ্ট্যের সূত্র ধরে নানা জৈবপথে কাজ করতে দেখা যায়। বীজে থাকাপলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন ও স্টেরল শ্রেণির যৌগ সামগ্রিকভাবে ইমিউন ফাংশন, লিপিড প্রোফাইল এবং কোষীয় সুরক্ষায় সহায়তা করতে পারে। এই বায়োঅ্যাকটিভগুলোর একটি সুষম প্রভাবই কালিজিরাকে রান্নাঘরের মসলা থেকে ধীরে ধীরে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সহায়ক অধ্যায়ে তুলে এনেছে।
স্বাস্থ্যপ্রভাবে কালিজিরার সবচেয়ে শক্ত সংকেত দেখা যায় গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ ও কার্ডিও-মেটাবলিক সূচকে। বেশ কিছু মানব-গবেষণায় টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসে কালিজিরার গুঁড়া বা তেল রক্তে গ্লুকোজ ও HbA1c কিছুটা কমাতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। লিপিড প্রোফাইলে ট্রাইগ্লিসারাইড ও LDL কমতে এবং HDL সামান্য বাড়তে দেখা যায়, যদিও প্রভাব সাধারণত ছোট থেকে মাঝারি। একইভাবে রক্তচাপে নমনীয় পতন লক্ষ করা গেছে। তবে এসব ফল জীবনযাত্রা পরিবর্তন ও প্রেস্ক্রিপশন ওষুধের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক বলেই দেখা উচিত।
শ্বাসতন্ত্র ও অ্যালার্জিতে কালিজিরা প্রাচ্য চিকিৎসা ও লোকপ্রথায় প্রচণ্ড জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক কিছু ট্রায়ালে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে নাসিকালক্ষণ কিছুটা কমেছে এবং হাঁপানির ক্ষেত্রে উপসর্গ উপশমের ইঙ্গিত আছে। ঠান্ডা-কাশি-গলা ব্যথায় মধু বা উষ্ণ পানীয়ের সঙ্গে কালিজিরা বা এর তেল মেশানো আমাদের রান্নাঘর-ভিত্তিক ঘরোয়া রুটিনেই পড়ে। তবু মনে রাখতে হবে, অ্যাজমা বা তীব্র অ্যালার্জি একটি মেডিকেল কন্ডিশন। তাই কালিজিরা থাকুক সহকারী হিসেবে, ইনহেলার বা চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ থাকবে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে।
লিভার ও পরিপাকে কালিজিরা অনেকের প্রিয়। এতে থাকা তেল ও ফাইটো-কেমিক্যাল হজমক্রিয়া সক্রিয় রাখতে, গ্যাস-অম্বল কমাতে এবং মৃদু কোষ্ঠকাঠিন্যে স্বস্তি দিতে সহায়ক হতে পারে। ক্ষুদ্রান্তে পুষ্টি শোষণে সহায়তার কথা বলা হয় এবং কিছু প্রি-ক্লিনিক্যাল প্রমাণ আছে যে এটি লিভারকোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। তবে জন্ডিস, আলসার বা ফ্যাটি লিভারের মতো নির্দিষ্ট রোগে নিজে নিজে কালিজিরা দিয়ে চিকিৎসা শুরু না করে চিকিৎসকের মতামত নেওয়াই উত্তম।
ত্বক ও চুলে কালিজিরার তেল জনপ্রিয় একটি নাম। মাথার ত্বকে নিয়মিত হালকা ম্যাসাজ খুশকি ও স্ক্যাল্প ইরিটেশনেআরাম দিতে পারে, চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগাতে সহায়ক হয় এবং চুল পড়া কমাতে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ভালো সাড়া মেলে। ত্বকে মধু বা দইয়ের সঙ্গে কালিজিরা গুঁড়া বা তেলেরমৃদুপ্যাক ব্রণ, র্যাশ বা মৃদু প্রদাহে ব্যবহার হয়। সংবেদনশীল ত্বকে আগেছোটজায়গায়প্যাচটেস্টকরে নিলে অপ্রত্যাশিত রিঅ্যাকশনের ঝুঁকি কমে।
মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে থাইমোকুইনোনকেঘিরেআলোচনাও কম নয়। ছোট আকারের কিছু গবেষণায় স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে হালকা উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মৃদু প্রদাহনাশী প্রভাবে আসে। বয়সজনিত নিউরোডিজেনারেশনে ল্যাব-ভিত্তিক গবেষণা আশাব্যঞ্জক হলেও বড় মানব-ট্রায়ালের অভাব এখনো রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে কালিজিরা সতর্ক আশাবাদেই দেখা উচিত।
ব্যবহারপদ্ধতিতে সবচেয়ে নিরাপদ ও টেকসই হলো রান্নায় নিয়মিত, অল্পমাত্রায় সংযোজন। গরম ভাতে কালিজিরা ভর্তা, ডাল-সবজিতে ফোড়ন, আচার বা রুটির টপিং—এসব ব্যবহার স্বাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যগুণওদেয়। অনেকেচা, কফি বা লেবুপানিতে অল্পকালিজিরা গুঁড়া, আরকে বা কয়েক ফোটা তেল মিশিয়ে থাকেন। সাপ্লিমেন্ট হিসেবেতেলবা ক্যাপসুল বাজারে পাওয়া যায়, তবে তৃতীয় পক্ষের মাননিয়ন্ত্রিত পণ্য নিলেই ভালো। ডোজের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষণ হলো কম ডোজে শুরু করা, শরীরের সাড়া দেখে ধীরে ধীরে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছানো এবং কোনো প্রতিকূল লক্ষণ দেখা দিলে বন্ধ করা।
ডোজের ক্ষেত্রে গবেষণায় নানা মাত্রা দেখা যায়। রান্নায় মসলা হিসেবে দৈনিক ১ থেকে ৩ গ্রাম বীজ অনেকের জন্য সহনীয়। তেলের ক্ষেত্রে ৩০০ মিলিগ্রাম থেকে ১ গ্রাম পর্যন্ত দিনে এক বা দুইবার ব্যবহার হয়েছে। কেউ কেউ ৫ মিলিলিটার পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি প্রোটোকল ব্যবহার করেছেন। তবে এগুলো তথ্যগত নির্দেশিকা, ব্যক্তিগত চিকিৎসা-নির্দেশ নয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তপাত-ঝুঁকি, থাইরয়েড সমস্যা, কিডনি বা লিভারের ক্রনিক রোগ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরিকল্পনা মিলিয়ে নেবেন।
নিরাপত্তা ও সতর্কতায় কয়েকটি কথা জরুরি। গর্ভাবস্থায় মুখে সাপ্লিমেন্ট আকারে কালিজিরা না নেওয়াই ভালো। দুগ্ধদানকালে নিরাপত্তা-ডেটা সীমিত, কারও কারওত্বকে তেলের প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অ্যান্টিডায়াবেটিক, অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ, অ্যান্টিকোয়াগুলান্ট বা প্লেটলেট-প্রভাবিত ওষুধ ব্যবহার করলে মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাবনা মাথায় রাখুন। অপারেশনের আগে পরে নিজে নিজেসাপ্লিমেন্ট শুরু বা বন্ধ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুদের ক্ষেত্রে দুই বছরের নিচে মুখে তেল না দিয়ে কেবল বাহ্যিক প্রয়োগ বিবেচনা করুন এবং বড়দের ক্ষেত্রেও ত্বকে লাগানোর আগে ছোট এলাকায় পরীক্ষা করে নিন।
বাজার থেকে তেল বা বীজ কেনার সময় খাঁটি পণ্য নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় পক্ষের গুণমান-পরীক্ষিত ব্র্যান্ড, ঠান্ডা চাপে নিষ্কাশিত তেল, গাঢ় কাঁচের বোতল, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণতার স্পষ্ট লেবেল—এসব বিষয় দেখুন। তেল আলো, তাপ ও বাতাসে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ হারায়, তাই ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় ঢাকনা শক্ত করে রেখে দিন। উচ্চ তাপে দীর্ঘক্ষণ রান্নায় তেলের সূক্ষ্ম উপাদান নষ্ট হতে পারে, তাই রান্নার শেষে অল্প যোগ করা উত্তম।
লোকপ্রথার নানা দাবির মাঝে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রাখা দরকার। কালিজিরা বহু উপকারী বটে, তবে এটি সর্ব রোগের পূর্ণাঙ্গ ঔষধ নয়। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, হাঁপানি বা চর্মরোগ—এসবের ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা থাকবে অগ্রাধিকারভিত্তিক, কালিজিরা থাকবে সহায়ক স্তরে। সঠিক পণ্য, পরিমিত ডোজ, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, জীবনযাপনগত শৃঙ্খলা এবং প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের গাইডেন্স—এই সমন্বয়ই সর্বোত্তম ফল দেয়।
কালিজিরাআমাদের রান্নাঘরের সহজলভ্য একটি সুপার-মসলা, যার ঐতিহ্য ও বিজ্ঞানের সুন্দর মেলবন্ধন আছে। মসলা হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার, মাঝেমধ্যে উষ্ণ পানীয় বা মধুর সঙ্গে অল্পমাত্রায়গ্রহণএবংত্বক বা চুলে সচেতন বাহ্যিক প্রয়োগ—এই তিন স্তরের স্মার্ট রুটিনেই আপনি কালিজিরার স্বাদ, সুগন্ধ এবং উপকারকে নিরাপদভাবে কাজে লাগাতে পারবেন।তবে একে “সর্ব রোগের ঔষধ” বলা অতিরঞ্জন; বরংবলাযায়, এটি একটি শক্তিশালী সহায়ক খাদ্য ও ভেষজ উপাদান।নিয়মিত রান্নায় কালিজিরা ব্যবহার, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সঙ্গে এর সঠিক প্রয়োগ করলে এটি সত্যিই হয়ে উঠতে পারে আমাদের জীবনের এক প্রাকৃতিক আশীর্বাদ।
রাতে বারবার পা নড়ে? সতর্ক হোন, হতে পারে ‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম’
রাতে বিছানায় শুয়ে আছেন, অথচ ঘুম আসছে না। পায়ে বারবার অস্বস্তি লাগছে—কখনো টান ধরা, কখনো জ্বালা, আবার কখনো গা ছমছম করছে। মনে হচ্ছে পা নাড়াচাড়া না করলে আরাম নেই। এই ধরনের সমস্যাকে হালকাভাবে নেওয়া চলবে না, কারণ চিকিৎসকরা বলছেন, এটি হতে পারে ‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম’ (Restless Legs Syndrome - RLS) নামের একটি স্নায়বিক রোগের লক্ষণ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত বসে বা শুয়ে থাকার সময় পায়ে টান ধরা, ঝিনঝিনি, জ্বালা বা অস্বস্তিকর অনুভূতি পান। সাময়িক স্বস্তি মিললেও এর কারণে ঘুম ভেঙে যায় বা ঘুম আসতে দেরি হয়।
সমস্যার কারণ ও ঝুঁকিতে কারা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের মূল দুটি কারণ হলো: বংশগত প্রভাব এবং শরীরের আয়রনের ঘাটতি।
বেশি ঝুঁকিতে যারা: অন্তঃসত্ত্বা ও মাসিক হয় এমন নারী, অ্যানিমিয়া রোগী, ডায়ালাইসিসে থাকা রোগী এবং নিরামিষভোজীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি এ সমস্যা দেখা যায়। কিছু ওষুধ—বিশেষ করে সেরোটোনিন রিইনটেক ইনহিবিটার জাতীয় ওষুধ গ্রহণকারীরাও ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।
করণীয় কী এবং কেন সচেতনতা জরুরি?
চিকিৎসকরা বলছেন, জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনলে এই রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
জীবনধারায় পরিবর্তন: অ্যালকোহল ও চিনি খাওয়া কমানো, নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস তৈরি করা এবং হালকা শরীরচর্চা করা।
চিকিৎসা: আয়রনের ঘাটতি থাকলে সাপ্লিমেন্ট বা ইনফিউশন নেওয়া যেতে পারে।
সাময়িক স্বস্তি: পায়ে ম্যাসাজ, গরম বা ঠান্ডা পানির সেঁক দেওয়া এবং হাঁটাহাঁটি বা মনোযোগ ধরে রাখার মতো কাজ করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়।
দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তি চলতে থাকলে স্নায়ু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। চিকিৎসকরা বলছেন, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম একেবারেই নিরাময়যোগ্য। তবে উপসর্গকে গুরুত্ব না দিলে এর প্রভাব সারাদিনের কাজে পড়ে, যেমন—ক্লান্তি, বিরক্তি বা মেজাজ খারাপ হওয়া। তাই রাতের বেলায় অকারণে পা নাড়াকে অবহেলা না করে সময়মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
সাবধান! শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে ত্বকে যে ৫টি লক্ষণ দেখা যায়
বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার সমস্যাও তরুণদের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে হাইপারইউরিসেমিয়া বলা হয়। যখন শরীর অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে বা কিডনি যথেষ্ট পরিমাণে তা ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয়, তখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড জমে গিয়ে বিপজ্জনক আকার ধারণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে তা প্রাথমিকভাবে ত্বকের পরিবর্তনের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দেয়। সময়মতো এই লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার ৫টি ত্বকের লক্ষণ
১. ত্বকের নিচে শক্ত গুটি: শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের স্ফটিক জমে ত্বকের নিচে ছোট ছোট গুটি তৈরি হয়। এগুলো সাদা, হলুদ বা ত্বকের রঙের হতে পারে এবং আঙুল, কনুই ও পায়ের আঙুলের কাছে বেশি দেখা যায়। চিকিৎসা না করলে এগুলো ব্যথা ও আলসারের কারণ হতে পারে।
২. লালভাব ও ফোলাভাব: উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড জয়েন্টের চারপাশে ত্বক লালচে, ফুলে যাওয়া, গরম ও চকচকে করে তুলতে পারে। সাধারণত পায়ের আঙুল, গোড়ালি ও হাঁটুর আশেপাশে এই লক্ষণ স্পষ্ট হয়। তীব্র ব্যথা প্রায়শই এর সঙ্গে যুক্ত থাকে।
৩. শক্ত বা ঝকঝকে ত্বক: প্রদাহের কারণে ত্বক টানটান বা ঝকঝকে দেখায়। বিশেষ করে রাতে বা সকালে এই উপসর্গ বেশি প্রকট হয়। আক্রান্ত স্থানে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয়।
৪. ত্বকের রং পরিবর্তন: দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণে জয়েন্টের চারপাশের ত্বকের স্বাভাবিক রঙ বদলে যায়। এটি ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার অন্যতম সতর্ক সংকেত।
৫. ত্বক খসখসে বা খোসা ছাড়ানো: গাউট অ্যাটাক কমে গেলে আক্রান্ত স্থানের ত্বক খসখসে বা খোসা ছাড়তে শুরু করে। এটি প্রদাহ প্রশমনের পরবর্তী ধাপের লক্ষণ।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে করণীয়
এই ধরনের লক্ষণ সাধারণত কনুই, আঙুল, গোড়ালি, হিল বা হাঁটুর আশেপাশে দেখা যায়। তাই কারও শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করলে গাউট বা কিডনি স্টোনের মতো জটিলতা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নলিখিত জীবনধারার পরিবর্তনগুলো জরুরি:
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
পর্যাপ্ত পানি পান
লাল মাংস ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ
শিশুর অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে মস্তিষ্কের ক্ষতি: নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্য
শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম তাদের মস্তিষ্কের সাদা অংশের (White Matter) বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে এবং ভাষা শেখার প্রক্রিয়ায় গুরুতর দেরি ঘটাতে পারে—সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।
জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA Pediatrics)-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ১ বছর বয়সী শিশু যদি অতিরিক্ত সময় মোবাইল, ট্যাব বা টেলিভিশনের সামনে কাটায়, তবে ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে তাদের ভাষা দক্ষতা, সূক্ষ্ম মোটর স্কিল (Fine Motor Skills), সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও সামাজিক বিকাশে ঘাটতি দেখা দেয়। গবেষণায় আরও বলা হয়, স্ক্রিন টাইম যত বেশি, বিকাশে বিলম্বও তত বেশি—এটি এক ধরনের ‘ডোজ-রেসপন্স’ সম্পর্ক।
কেন স্ক্রিন টাইম ক্ষতিকর?
পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ ড. সিন্ডি গেলনার বলেন, “অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারে শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারঅ্যাক্টিভ খেলা, হাতে-কলমে শেখা ও সরাসরি কথোপকথনের অভিজ্ঞতা নষ্ট হয়, যা প্রাথমিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য।” তিনি আরও জানান, এমনকি শিক্ষামূলক শিশুতোষ অনুষ্ঠানগুলোও এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে না, বিশেষ করে যখন বেশিরভাগ সময় শিশুরা অশিক্ষামূলক কনটেন্ট দেখে।
আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস (AAP)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী:
১৮ মাসের আগে শিশুদের কোনো স্ক্রিন এক্সপোজার দেওয়া উচিত নয়।
২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম অনুমোদিত।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, এই সংকটময় সময়ে বাবা-মাকে অবশ্যই শিশুদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কথা বলা, গল্প শোনা, পড়া এবং খেলায় সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে ভাষা, মোটর স্কিল ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা সঠিকভাবে বিকাশ লাভ করে।
অ্যালুমিনিয়াম ও ননস্টিক পাত্রে রান্না, শরীরের জন্য নীরব বিষ?
রান্নার সুবিধা এবং ঝকঝকে চেহারার কারণে অ্যালুমিনিয়াম ও ননস্টিক পাত্র এখন প্রায় সব রান্নাঘরেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সুবিধাজনক পাত্রগুলো শরীরের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতিকর এবং নীরব বিষের মতো কাজ করতে পারে।
অ্যালুমিনিয়ামের ঝুঁকি
অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে রান্না করার সময় খাবারের সঙ্গে ধাতব উপাদান মিশে যেতে পারে। দীর্ঘদিন অ্যালুমিনিয়ামজাত খাবার খেলে তা মানবদেহে জমে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। এর ফলে অ্যালঝাইমারসহ নানা স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ননস্টিক পাত্রের বিপদ
ননস্টিক পণ্যের প্রলেপ সাধারণত টেফলন বা পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন (PTFE) দিয়ে তৈরি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
বিষাক্ত গ্যাস নির্গত: অতিরিক্ত তাপে (২৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে) এই প্রলেপ ভেঙে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা: দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
রান্নার পাত্র বাছাইয়ে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা তাই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
বিকল্প ব্যবহার: অ্যালুমিনিয়াম ও ননস্টিকের পরিবর্তে স্টেইনলেস স্টিল, কাস্ট আয়রন বা মাটির হাঁড়ি ব্যবহার করা নিরাপদ।
সতর্কতা: ননস্টিক পাত্র ব্যবহার করতেই হলে কম আঁচে রান্না করতে হবে এবং খালি পাত্র কখনো আঁচে বসানো যাবে না।
পরিবর্তন: আঁচড় পড়া বা ক্ষতিগ্রস্ত ননস্টিক পাত্র অবিলম্বে ফেলে দেওয়া উচিত।
রসুনের গোপন শক্তি: এক কোয়া কি সত্যিই শরীরকে বদলে দিতে পারে?
রসুন আমাদের রান্নাঘরের খুব পরিচিত উপাদান, কিন্তু এর পুষ্টিগুণ, ঔষধিগুণ ও নিরাপদ ব্যবহারের নিয়মগুলো জানলে এটি একটি পরিকল্পিত সুপারফুডে পরিণত হতে পারে। প্রাচীন চিকিৎসায় রসুন ব্যবহৃত হয়েছে সংক্রমণ, হজম ও হৃদ্রোগে সহায়ক হিসেবে। আধুনিক গবেষণায়ও রসুনের সালফারসমৃদ্ধ বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, বিশেষ করে অ্যালিসিন, ডায়ালাইল ডাইসালফাইড, এস অ্যালাইল সিস্টেইন ইত্যাদি স্বাস্থ্যতন্ত্রে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। নিচে পুষ্টি থেকে ব্যবহার পদ্ধতি পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেওয়া হলো, যাতে তথ্যটি একই সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য, সতর্কতাসহ এবং বাংলাদেশি খাদ্যাভ্যাসের সাথে মানানসই থাকে।
পুষ্টিগঠনের সারসংক্ষেপ
রসুনে থায়ামিন বা ভিটামিন বি১, রিবোফ্লাভিন বা বি২, নায়াসিন বা বি৩, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড বা বি৫, ভিটামিন বি৬, ফোলেট বা বি৯, সামান্য ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ট্রেস মাত্রায় সেলেনিয়াম থাকে। সবচেয়ে বড় শক্তি আসে সালফার যৌগ থেকে, যা রসুন চূর্ণ বা চিবোলে অ্যালিনেজ এনজাইমের মাধ্যমে অ্যালিসিনে রূপ নেয়। অ্যালিসিনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং ভ্যাসোডাইলেটরি বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।
বৈজ্ঞানিকভাবে উল্লেখযোগ্য সম্ভাব্য উপকার
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা: অ্যালিসিন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও সেলেনিয়াম ইমিউন সেলের কার্যকরিতা বাড়াতে সহায়ক বলে পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সর্দি-কাশির সময়কাল এবং তীব্রতা কমাতে সহায়ক হতে পারে, যদিও ফলাফল সবার ক্ষেত্রে একরকম নাও হতে পারে।
হৃদ্স্বাস্থ্য: রসুনের সালফার যৌগ রক্তনালির প্রসারণে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে। কিছু গবেষণায় এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমা এবং এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল সামান্য বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব: অ্যালিসিন বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ও কিছু ভাইরাসের বিরুদ্ধে পরীক্ষাগারে কার্যকারিতা দেখিয়েছে। খাদ্যজনিত জীবাণু যেমন সালমোনেলা বা ই. কোলাইয়ের বিরুদ্ধে এটি প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে বলে প্রমাণ আছে, তবে রান্নাঘরের নিরাপত্তা চর্চাই প্রথম প্রতিরক্ষা।
রক্তে শর্করা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ: প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায়, কাঁচা রসুন বা এক্সট্র্যাক্ট ইনসুলিন সিগন্যালিংয়ে সহায়ক হতে পারে। ডায়েট, ঘুম, ব্যায়াম ও ওষুধের সাথে রসুন যোগ হলে সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও ডিটক্স সাপোর্ট: রসুন গ্লুটাথিয়ন সংশ্লেষণ বাড়াতে এবং ফ্রি র্যাডিক্যাল কমাতে সহায়ক হতে পারে। ভারী ধাতু এক্সপোজারের কিছু প্রেক্ষাপটে সাপোর্টিভ প্রভাবের প্রমাণ আছে, তবে এটি কোনও একক চিকিৎসা নয়।
মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভ্যাসোডাইলেটরি প্রভাব স্মৃতিশক্তি ও মানসিক ক্লান্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে বলে ছোট আকারের স্টাডিতে ইঙ্গিত আছে।
হরমোন ও প্রজনন স্বাস্থ্য: ইস্ট্রোজেন মড্যুলেশন, টেস্টোস্টেরন সাপোর্ট ও শুক্রাণুর মানোন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ রয়েছে, তবে ব্যক্তিভেদে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।
কীভাবে খেলে উপকার বেশি
কাঁচা, চূর্ণ বা চিবিয়ে: রসুন কেটে বা চূর্ণ করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এ সময় অ্যালিনেজ সক্রিয় হয়ে অ্যালিসিন তৈরি হয়। এরপর কাঁচা অবস্থায় খেলে কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি থাকে।
রান্নায় সতর্কতা: উচ্চ তাপে দীর্ঘক্ষণ ভাজার ফলে অ্যালিসিন ভেঙে যায়। রান্নার শেষভাগে সামান্য সময়ের জন্য রসুন দিন, বা রান্নার পর কাঁচা কুচি ছড়িয়ে দিন।খালি পেটে গ্রহণ: যারা সহ্য করতে পারেন তাদের ক্ষেত্রে সকালে অল্প পরিমাণ কাঁচা রসুন উপকারী হতে পারে। ঝাঁঝ সহ্য না হলে মধু, দই বা ভর্তার সাথে মিশিয়ে নিন।
পরিমাণ নির্দেশনা: সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কের জন্য প্রতিদিন ১ থেকে ২ কোয়া কাঁচা রসুন অনেকের ক্ষেত্রে যথেষ্ট। সাপ্লিমেন্ট নিলে লেবেলড ডোজ মেনে চলুন। যাদের পাকস্থলীর সমস্যা আছে তাদের ধীরে ধীরে শুরু করা ভালো।
আচার ও গভীর তেলে ভাজা: জীবাণুনাশক প্রভাব কমে যেতে পারে। স্বাদ ও কিছু পুষ্টি থাকলেও থেরাপিউটিক উদ্দেশ্যে এটি সেরা রূপ নয়।
বাংলাদেশি খাদ্যাভ্যাসে স্মার্ট সংযোজন
- ডাল তড়কা করা হলে চুলা নেভানোর ঠিক আগে চূর্ণ রসুন দিন।
- মাছের ঝোল, ছোলা ভুনা, শাক-সবজির ভাজি বা ভর্তায় রান্নার শেষে কাঁচা কুচি ছড়িয়ে দিন
- গার্লিক-দই ডিপ, গার্লিক-লেবু-শসা সালাদ বা মুড়ি মাখাতে কাঁচা রসুনের সামান্য কুচি যোগ করুন।
- মুরগির ঝোলে রসুন প্রথমে হালকা ছেঁকে নিন, শেষে সামান্য কাঁচা কুচি দিয়ে গন্ধ ও পুষ্টি ধরে রাখুন।
যাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন
গর্ভাবস্থা ও দুগ্ধদানকাল: কাঁচা রসুন অনেকের গ্যাসট্রিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া থেরাপিউটিক ডোজ নেবেন না।
পাকস্থলী বা অন্ত্রের সমস্যা: আলসার, অ্যাসিডিটি, বমি বা ডায়রিয়ার সময় কাঁচা রসুন বিরক্তি বাড়াতে পারে।
অ্যালার্জি: যাদের রসুনে অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য পরিহার করাই নিরাপদ।
অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ: রসুন রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সার্জারির আগে রসুন সাপ্লিমেন্ট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। থাইরয়েড ও কিডনি সমস্যা থাকলে বা একাধিক সাপ্লিমেন্ট চললে চিকিৎসকের সাথে মিলিয়ে নিন।
প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও বাস্তবতা
- রসুন একা ক্যানসার সারায় না। এটি খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে, চিকিৎসার বিকল্প নয়।
- রসুন ডিটক্সের সব কাজ করে না। পানীয় জল, ঘুম, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যের সাথে রসুন সহায়ক হতে পারে।
- একসাথে অনেক রসুন খেলে উপকার বাড়ে না। অতিরিক্ত গ্রহণে বুকজ্বালা, পেটের অস্বস্তি ও মুখের দুর্গন্ধ বাড়ে।
একটি কার্যকর দিনপঞ্জি উদাহরণ
সকাল: আধা থেকে এক কোয়া কাঁচা রসুন চূর্ণ করে 10 থেকে 15 মিনিট রেখে দই বা মধুর সাথে খেয়ে নিন।
দুপুর বা রাত: ডাল, শাক বা ভর্তায় রান্না শেষের পর ১ কোয়া কাঁচা কুচি মিশিয়ে নিন।সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন বিরতি রাখুন যদি পাকস্থলীতে অস্বস্তি জন্মায়।
সংক্ষিপ্ত নিরাপত্তা বার্তা
রসুন একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। এটি ওষুধ নয়। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, গর্ভাবস্থা, বড় ধরনের অপারেশন, অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট থেরাপি বা শক্তিশালী প্রেসক্রিপশনের সাথে রসুনের সাপ্লিমেন্ট যোগ করার আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। পরিমিত এবং ধারাবাহিক ব্যবহারই সর্বোত্তম।
সাবধান! শিশুদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ৮টি লক্ষণ
টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত জীবনভর থাকে এবং এটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের কারণে শিশুদেরও আক্রান্ত করতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে শরীরের কোষগুলো ঠিকভাবে শক্তি পায় না। এই কারণে প্রাথমিক পর্যায়েই লক্ষণগুলো চিনে নেওয়া খুব জরুরি।
শিশুর মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখলে সাবধান হবেন
১. বারবার প্রস্রাব হওয়া (Polyuria): শিশুরা রাতে বারবার ঘুম ভেঙে প্রস্রাব করলে সতর্ক হোন। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে জল টেনে আনে, ফলে এমনটা ঘটে।
২. অতিরিক্ত তেষ্টা (Polydipsia): বারবার প্রস্রাবের কারণে শিশুরা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি জল পান করে।
৩. বেশি খিদে থাকা (Polyphagia): শিশু বেশি খাচ্ছে, তবুও ক্ষুধার্ত থাকছে? এর কারণ হলো শরীর গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারছে না।
৪. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: স্বাভাবিক বা বেশি খাওয়ার পরও যদি ওজন কমতে থাকে, তবে সতর্ক হন। শরীর তখন শক্তির জন্য চর্বি ও পেশী ভাঙতে শুরু করে।
৫. অস্বাভাবিক ক্লান্তি: শরীরের কোষগুলো যথেষ্ট গ্লুকোজ না পাওয়ায় শিশুরা দুর্বল, অল্প সক্রিয় বা অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত দেখায়।
৬. দৃষ্টিশক্তি কমে আসা: রক্তে অতিরিক্ত শর্করা চোখের ফোকাসে প্রভাব ফেলে, ফলে সাময়িকভাবে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।
৭. আচরণ বা মেজাজে পরিবর্তন: হঠাৎ বিরক্তি, মনোযোগের ঘাটতি বা মেজাজ বদল হতে পারে।
৮. ক্ষত সারতে দেরি বা বমি ভাব: ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়া বা আঘাত বেশি সময় নিলে বা বমি বমি ভাব দেখা দিলে সতর্ক হোন। উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) হতে পারে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শিশুদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে রপ্ত করুন এই একটি অভ্যাস
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সবসময় জটিল পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না, কখনও কখনও আমাদের খাদ্যাভ্যাসে একটি সাধারণ পরিবর্তনই যথেষ্ট। যেমন, সাধারণ লবণের বদলে তার বিকল্প ব্যবহার করা। কিন্তু নতুন গবেষণা দেখাচ্ছে, উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে সোডিয়ামের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লেও, লবণের বিকল্প এখনও আমেরিকানদের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে কম ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর হাইপারটেনশন সায়েন্টিফিক সেশনস ২০২৫-এ উপস্থাপিত একটি বৃহৎ-মাত্রার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মাত্র ৫ শতাংশেরও কম আমেরিকান তাদের দৈনন্দিন জীবনে লবণের বিকল্প ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন। গবেষকদের মতে, খাদ্যাভ্যাসে এই সামান্য পরিবর্তন রক্তচাপ কমানোর জন্য একটি দারুণ উপায় হতে পারে, কিন্তু এটিকে অবহেলা করা হচ্ছে।
লবণের বিকল্প ব্যবহারে অনীহা
এই গবেষণার জন্য ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে (NHANES)-তে অংশগ্রহণকারী ৩৭,০৮০ প্রাপ্তবয়স্কের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লবণের বিকল্প ব্যবহারের হার ২০১৩-২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৫.৪ শতাংশ ছিল, কিন্তু ২০২০ সালের শুরুতে তা কমে মাত্র ২.৫ শতাংশে নেমে আসে।
গবেষকরা বিশেষভাবে উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করেছেন, যারা নিরাপদে লবণের বিকল্প ব্যবহার করতে পারবেন (যেমন সুস্থ কিডনিযুক্ত ব্যক্তি এবং যাদের পটাশিয়ামের মাত্রায় হস্তক্ষেপ করে এমন ওষুধ সেবন করতে হয় না)।
স্বাস্থ্য ও সুবিধার দিক
লবণের বিকল্প হলো সোডিয়ামের ব্যবহার কমানোর এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়ানোর একটি সহজ পদ্ধতি। এই দুটি খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন রক্তচাপ কমার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ ব্যক্তির জন্য, এই পরিবর্তনটি স্বাদ বা সুবিধার সঙ্গে আপস না করেই করা সম্ভব, বিশেষ করে যখন বাড়িতে খাবার তৈরি করা হয়।
তবে এই বিকল্প হৃদরোগের জন্য উপকারী হলেও, এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। কিডনি রোগ বা পটাশিয়ামের মাত্রা প্রভাবিত করে এমন ওষুধ ব্যবহার করেন এমন ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়াম গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পাঠকের মতামত:
- কালো দাগকে অবহেলা নয়: জেনে নিন চোখের নিচের কালো দাগের স্বাস্থ্যঝুঁকি
- ম্যালেরিয়া: কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- কেন ফেরাউনরা নিজেদের শরীর মমি করে রাখত? এক ঐশ্বরিক ক্ষমতার লড়াইয়ের ইতিহাস
- নারী বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশাল জয় বাংলাদেশের
- গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন: প্রতিবাদে আজ ইতালিতে দেশব্যাপী ধর্মঘট
- সর্ব রোগের ঔষধ কালিজিরা’র আদ্যপ্রান্ত: ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, ব্যবহার ও সতর্কতা
- ইসরায়েলি বাহিনী আমাকে অপহরণ করেছে: গ্রেটা থুনবার্গ
- এনসিপিকে ‘শাপলা’ প্রতীক দেওয়া হলে মামলা করব না: মান্না
- ছেলেদের পোশাকে ২০২৫ সালের সেরা ১০ কালার কম্বো
- ফ্লোটিলার কর্মীদের উচ্চ-নিরাপত্তা কারাগারে রাখতে পারে ইসরায়েল
- শাপলা নয়, বেগুন-বালতি থেকে প্রতীক বেছে নিতে হবে এনসিপিকে
- মারুফার জোড়া আঘাতে শুরুতেই ধসে গেল পাকিস্তানের ব্যাটিং
- আটক ফ্লোটিলা যাত্রীদের নিয়ে ইসরায়েলের বার্তা
- পারফেক্ট পারফিউম বেছে নেবেন যেভাবে: জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
- রাতে বারবার পা নড়ে? সতর্ক হোন, হতে পারে ‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম’
- গাজার পথে ত্রাণ: ইসরায়েলি বাধা উপেক্ষা করে ছুটছে ৪ জাহাজ
- মরক্কোতে জেন-জি বিক্ষোভ: পুলিশ স্টেশনে আগুন
- ইসরায়েলের আক্রমণে পিছু হটব না: গাজামুখী নৌবহর থেকে শহিদুল আলম
- অর্ধেক মানবী, অর্ধেক জিন? কুরআনে বর্ণিত রাণী বিলকিসের রহস্য
- নারী বিশ্বকাপ: পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের আজকের একাদশ
- এনসিপি’র সংবাদ সম্মেলন বয়কট করলেন সাংবাদিকরা
- কেউ একজন বিরাট কোহলিকে অভিযোগ দিয়েছে: ক্রীড়া উপদেষ্টা
- বিস্ময়কর সাফল্য: ত্বকের কোষ থেকে তৈরি হলো মানুষের ভ্রূণ!
- পোশাক রপ্তানিতে চীনের হারানো বাজার হিস্যা বুঝে নিচ্ছে বাংলাদেশ
- আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ৭ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা
- সাবধান! শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে ত্বকে যে ৫টি লক্ষণ দেখা যায়
- যে পদ্ধতিতে খাবার থাকবে মাসের পর মাস অক্ষত
- নতুন জুতোয় ফোসকা? যন্ত্রণা দূর করবে এই ৫ ঘরোয়া উপাদান
- গাজামুখী ত্রাণবহরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী
- ঝড়ের সতর্কতা সত্ত্বেও অভিযান অব্যাহত, কতদূর আগাল সুমুদ ফ্লোটিলা?
- ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ভারতকে ডি ভিলিয়ার্সের সমালোচনা
- বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’: বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব শুরু
- গাজামুখী ত্রাণবহরে ইসরায়েলি কমান্ডোর অভিযান
- ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য আগামীকালের ইবাদতের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
- গাজা অভিমুখী নৌবহর আটকাতে ব্যর্থ ইসরায়েল, উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা
- মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে ইউরোপার রহস্য: ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানে নাসা
- লক্ষ্মীপুরে সাবেক এমপির পোড়া বাড়িতে আবারও অগ্নিসংযোগ
- বিবাহিত ব্যক্তির নামাজ অবিবাহিত ব্যক্তির চেয়ে ৭০ গুণ উত্তম—কথাটা কি সত্যি?
- প্রেমিকা আনা দে আরমাসকে মহাকাশে বিয়ে করতে চান টম ক্রুজ!
- ভারত কি হাসিনাকে সমর্থন করছে? জানালেন ড. ইউনূস
- সাবেক মন্ত্রীর হাতকড়া পরিহিত ছবিটি ভুয়া: স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি
- কাতারে হামলা হলে সামরিকভাবে জবাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র
- এশিয়া কাপের হতাশা ভুলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিততে চায় বাংলাদেশ
- নীতি পরিবর্তন না হলে দেশ আবার ডাকাততন্ত্র হবে: মুফতি ফয়জুল করিম
- পৃথিবীর বাইরেও কি প্রাণ আছে? কুরআন, হাদিস ও বিজ্ঞান কী বলছে?
- চীনের প্রথম সম্রাটের সমাধি: রহস্য ঘেরা যে কবর খুলতে আজও ভয়ে কাঁপে বিজ্ঞানীরা!
- বিলিয়নিয়ার ক্লাবে শাহরুখ খান, পেছনে ফেললেন টেলর সুইফটকে
- ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত, না হলে ব্যবস্থা
- শিশুর অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে মস্তিষ্কের ক্ষতি: নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্য
- অ্যালুমিনিয়াম ও ননস্টিক পাত্রে রান্না, শরীরের জন্য নীরব বিষ?
- বার্লিন সম্মেলন ১৮৮৪–৮৫: আফ্রিকা বিভাজনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উত্তরাধিকার
- রসুনের গোপন শক্তি: এক কোয়া কি সত্যিই শরীরকে বদলে দিতে পারে?
- ‘আমাকে আলাদা করে তুলে ধরার চেষ্টা হয়নি’: ডা. তাসনিম জারা
- খাগড়াছড়ি-গুইমারায় সহিংসতা: সেনাবাহিনীর বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ
- বৃষ্টির দিনে ইন্টারনেটের গতি কমে যায় কেন? সমাধান জেনে নিন
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- বিয়ে করতে গিয়ে বিপত্তি: ‘প্রথম স্ত্রীর’ হাতে আটক ছাত্রলীগ নেতা
- ডিএসইতে সোমবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে সোমবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- বলিউডের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর: নারী অধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার তারকারা
- ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশিত, দেখে নিন পরীক্ষার সময়সূচি
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে সামগ্রিক বাজার চিত্র
- টিসিবির তালিকায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৫ পণ্য