স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসা

ঘুম কম হলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ০০:৩৯:৪৮
ঘুম কম হলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

সত্য নিউজ:বিশ্বজুড়ে ঘুমের অভাব বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যদি একজন ব্যক্তি নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না পায়, তবে তার শরীর এবং মস্তিষ্কে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় ঘুমের উপর গবেষণা এবং আলোচনা করছেন। তরুণ চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুর রহমান আম্মার বলেন, “ঘুমের অভাব শুধু আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক সুস্থতাকেও বিপন্ন করে তোলে। এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রাণঘাতী সমস্যাও তৈরি করতে পারে।”

ঘুমের অভাব: শারীরিক ক্ষতি

চিকিৎসকরা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের অভাব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যখন শরীর পর্যাপ্ত ঘুম পায় না, তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্থূলতা অন্যতম।

বিশ্বব্যাপী ১৫৩টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিয়মিত ঘুম না হলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্থূলতা বেড়ে যেতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, একটানা কিছু রাত কম ঘুম হলে তা শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ডাঃ মনিলাল আইচ লিটু বলেন, “ঘুমের অভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি হয়।"

মানসিক স্বাস্থ্য: এক ভয়াবহ প্রভাব

ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, "ঘুম না হলে মস্তিষ্কে 'ওরেক্সিন' নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।" মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে মানুষের মনোযোগের ক্ষমতা কমে যায়, এবং অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, হ্যালুসিনেশন এবং স্মৃতিভ্রংশের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার পাশাপাশি মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, যা জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

এছাড়া, ঘুমের অভাবে প্যানিক অ্যাটাক, উদ্বেগ, ফোবিয়া এবং অকারণ শারীরিক ব্যথাও দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যাগুলি জীবনের আনন্দ ও শান্তিকে বিপন্ন করে তোলে।

ঘুমের অভাবের কারণে কী কী শারীরিক ক্ষতি হতে পারে?

১. উচ্চ রক্তচাপ: ঘুমের অভাবে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

২. হার্টের সমস্যা: ঘুমের অভাবে হার্টের পেশী এবং রক্তনালীগুলো বিশ্রাম পায় না, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৩. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হয়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

৪. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: ঘুম শরীরের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পদ্ধতি। তবে কম ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।

৫. মানসিক অস্থিরতা: ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

৬. হজমের সমস্যা: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ শরীরের পাচনক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

কম ঘুমের ফলে কি পরিণতি হতে পারে?

শরীরের নানা সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের অভাব পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। ডাঃ শারমীন ইয়াসমিন বলেন, "ঘুমের অভাবে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং স্নায়ুজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা কর্মক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।" এছাড়া, কাজের ক্ষেত্রে অমনোযোগী হওয়া, ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কর্মক্ষমতার অভাব সৃষ্টি হতে পারে, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।

ঢাকার গৃহিণী মাহবুবা মিঠু জানান, “বাচ্চা সামলাতে গিয়ে দিনে ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমাতে পারি। একদিকে ঘরের কাজ, অন্যদিকে বাচ্চার যত্ন, ঘুমের অভাব মারাত্মক সমস্যা তৈরি করেছে।” তিনি বলেন, “এছাড়া, যখনই রাতে ঘুমাতে যাই, তখন বারবার বাচ্চার জন্য ওঠতে হয়। ফলে গভীর ঘুম পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।"

বাংলাদেশে ঘুমের অভাব: সংস্কৃতি এবং অভ্যাস

বাংলাদেশে ঘুমের অভাবের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে “ঘুমের সংস্কৃতি” না থাকা এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সময়মত খাবার খেয়ে ঘুমানোর অভ্যাসের অভাব। অধিকাংশ মানুষই রাতে সময়মতো খাবার খেয়ে ঘুমাতে যান না, যা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডাঃ মনিলাল আইচ লিটু বলেন, "বাংলাদেশে ঘুমের সংস্কৃতি না থাকার কারণে এ সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।"

ঘুমের পরামর্শ: স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য কিছু টিপস

তবে ঘুমের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সঠিক পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা:

১. নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো: প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় যেতে হবে এবং সময়মতো ঘুমাতে চেষ্টা করতে হবে।

২. শরীরের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা: ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারের পরিমাণ কমানো এবং মনের শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

৩. প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া: ঘুমের সমস্যা অব্যাহত থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ওষুধের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

তরুণ চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুর রহমান আম্মার বলেন, "নিয়মিত ঘুম আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি।" তিনি আরও বলেন, "যদি ঘুমের সমস্যা নিয়মিত হয়, তবে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত, যাতে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক এবং মানসিক সমস্যাগুলি এড়িয়ে যাওয়া যায়।"

অতএব, আমাদের সকলের জন্য সুস্থ জীবনধারা গড়ার জন্য নিয়মিত এবং সঠিক সময়ের ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত