শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ

২৩ জুলাইয়ের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ:ইনভেস্টরদের জন্য সম্ভাবনাময় খাতের ইঙ্গিত

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৪ ১২:৩৭:৪৭
২৩ জুলাইয়ের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ:ইনভেস্টরদের জন্য সম্ভাবনাময় খাতের ইঙ্গিত

গতকাল ২৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (DSE) দেশের পুঁজিবাজারে একটি মোটামুটি ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে অধিক সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিন মোট ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে ২১৮টি কোম্পানি দরবৃদ্ধি, ১০২টি দরপতন এবং ৭৯টি অপরিবর্তিত ছিল। এটি বাজারে মোট শেয়ারগুলোর মধ্যে প্রায় ৫৫% কোম্পানি দাম বেড়েছে, যা একটি শক্তিশালী প্রবণতার প্রতিফলন।

‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২২০টি শেয়ার লেনদেন হয়, যেখানে ১৪৩টি দরবৃদ্ধি পায় এবং মাত্র ৪৩টি দরপতনের শিকার হয়। এটি নির্দেশ করে যে মানসম্পন্ন এবং নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৮৩টি কোম্পানি লেনদেন করে, যার মধ্যে ৩৭টি দরবৃদ্ধি ও ৩৩টি দরপতনের শিকার হয়। এদিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৯৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩৮টি দরবৃদ্ধি পায়, যা কিছুটা বিস্ময়কর হলেও স্পেকুলেটিভ ট্রেডিংয়ের প্রভাব হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়।

মিউচুয়াল ফান্ড খাতে মোট ৩৬টি ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যেখানে ১৩টি দরবৃদ্ধি এবং ৯টি দরপতন হয়েছে। এটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল পারফরম্যান্স দেখায়, তবে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সীমিতই রয়ে গেছে। কর্পোরেট বন্ড খাতে মাত্র ২টি লেনদেন হয়েছে এবং সরকারি সিকিউরিটিজে (G-Sec) ৩টি লেনদেন হলেও সবগুলোতেই দরপতন দেখা গেছে।

দিনশেষে মোট লেনদেনের সংখ্যা ছিল ২,৪৪,৩৫০টি, যার মাধ্যমে ৩৬.৭ কোটি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে এবং মোট লেনদেনের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯৮৬.৫ কোটি টাকা। এই উচ্চ পরিমাণ লেনদেন বাজারে তারল্য প্রবাহ এবং বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দেয়।

মোট বাজার মূলধন (Market Capitalization) দিনশেষে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭,০৮,৩৪৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ইকুইটি খাতের মূল্য ৩৬১,০০৫ কোটি, মিউচুয়াল ফান্ড ২,৯৭৪ কোটি, এবং ডেব্ট সিকিউরিটিজ ৩৪৪,৩৬৮ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে করপোরেট ও সরকারি ঋণপত্রের গুরুত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়াও ব্লক মার্কেটে মোট ৩৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেনদেন হয়েছে BANKASIA (৭০ লক্ষ শেয়ার; ১১৬.৯ কোটি টাকা), SOUTHEASTB (৫২.৬ লাখ শেয়ার; ৪২.০৭ কোটি টাকা) এবং MARICO (৭৯.১৬ কোটি টাকা মূল্যের লেনদেন)। এই লেনদেনগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দেয় এবং ব্লক মার্কেটে কোম্পানির মৌলিক শক্তি ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির ওপর আস্থার প্রতিফলন।

সবশেষে, বাজারের সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, অধিকাংশ মূলধনী এবং 'এ' ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লেনদেনের পরিমাণ ও মূল্য উভয়ই শক্তিশালী ছিল। মিউচুয়াল ফান্ড ও সরকারি সিকিউরিটিজ খাতে তুলনামূলকভাবে কম আগ্রহ দেখা গেলেও, বাজারের প্রধান অংশে লেনদেন ও মূলধনের প্রবাহ প্রমাণ করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধীরে ধীরে ফিরছে। তবে কিছু কোম্পানির দাম হ্রাস এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির অস্বাভাবিক কার্যকলাপ সতর্কতার সংকেতও হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে বাজারের মৌলিক বিশ্লেষণ, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ও খাতভিত্তিক খবর পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ