বিশেষ অনুসন্ধান মূলক প্রতিবেদন

এক কিডনির গ্রাম: বাংলাদেশ-ভারত জুড়ে দারিদ্র্যের ফাঁদে অঙ্গপাচার

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১৮:৪৭:২২
এক কিডনির গ্রাম: বাংলাদেশ-ভারত জুড়ে দারিদ্র্যের ফাঁদে অঙ্গপাচার

মৃদু বিকেলের রোদে, বাংলাদেশে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বৈগুনী গ্রামে নিজের অপূর্ণ ইটের দেওয়ালের ঘরের সামনে বসে আছেন ৪৫ বছর বয়সী সফিরউদ্দিন। পাঁজরের একপাশে ধীরে ধীরে পোড়া ব্যথা জানান দিচ্ছে অস্ত্রোপচারের চিহ্ন।

২০২৪ সালের গ্রীষ্মে, তিনি ভারতের এক হাসপাতালে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা (প্রায় ২,৮৫০ ডলার) মূল্যে। আশা ছিল এই টাকায় দারিদ্র্যের জাঁতাকল থেকে পরিবারকে টেনে তুলবেন, দুই কন্যা ও এক পুত্রকে নিয়ে একটি পাকাবাড়ি তুলবেন। কিন্তু সেই টাকা এখন ইতিহাস, বাড়ির কাজ থমকে আছে, আর শরীরের যন্ত্রণাই যেন সারাক্ষণের সতর্কবার্তা—কি মূল্য দিয়েছেন তিনি।

এখন তিনি কাজ করছেন একটি কোল্ডস্টোরেজে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে। কিন্তু দিনদিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। শরীরের স্থায়ী ব্যথা ও দুর্বলতা তাকে সাধারণ কাজ করতেও কষ্টে ফেলে।

“আমি আমার কিডনি দিয়েছি শুধুমাত্র পরিবারের জন্য। আমার স্ত্রী আর সন্তানদের ভালো রাখার জন্য সব করেছি,” বলছিলেন সফিরউদ্দিন।

তাকে যখন দালালরা প্রথম প্রস্তাব দেয়, তখন বিষয়টি খুব ভয়াবহ বলে মনে হয়নি। বরং দালালদের কথায় এটি যেন ছিল এক ‘সুযোগ’—ঝুঁকির কিছু নয়। প্রথমে তিনি সন্দিহান ছিলেন, কিন্তু দারিদ্র্যের তীব্রতা শেষ পর্যন্ত তার সংশয়কে জয় করে।

তাকে ভারতে নেওয়া হয় মেডিকেল ভিসায়। সব আয়োজন—ভিসা, বিমানভাড়া, নথিপত্র ও হাসপাতালের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা—দালালরাই সামাল দেয়। ভারতে গিয়ে যদিও তিনি নিজের আসল বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভ্রমণ করেন, তবুও বাকি কাগজপত্র—যেমন একজন রোগীর সঙ্গে তার ভুয়া আত্মীয়তার প্রমাণ হিসেবে তৈরি করা হয় নকল সনদ ও পরিচয়পত্র।

তার পরিচয়ই পরিবর্তন করে ফেলা হয়। তার কিডনি যে ব্যক্তিকে প্রতিস্থাপন করা হয়, তাকে তিনি কখনও দেখেননি। “আমি জানি না আমার কিডনি কে পেয়েছে। দালালরা কিছুই বলেনি,” জানান সফিরউদ্দিন।

ভারতের আইনে কেবলমাত্র নিকট আত্মীয়দের মধ্যেই অঙ্গদান অনুমোদিত, অথবা সরকার অনুমোদিত বিশেষ অনুমতির ভিত্তিতে। কিন্তু পাচারকারীরা দস্তাবেজ, পরিবারের তথ্য, এমনকি ডিএনএ রিপোর্ট পর্যন্ত জাল করে আইনি সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে।

“সাধারণত বিক্রেতার নাম পরিবর্তন করা হয়, তারপর একজন আইনজীবীর সীল দেওয়া নোটারী সনদ দিয়ে প্রমাণ দেখানো হয় যে, দাতা ও গ্রহীতা আত্মীয়। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এমন দেখা যায় যেন বোন, কন্যা বা কোনো আত্মীয় ‘মানবিক কারণে’ কিডনি দিচ্ছে,” বলেন মনির মনিরুজ্জামান, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য।

সফিরউদ্দিনের ঘটনা ব্যতিক্রম নয়। কিডনি বিক্রি এতো বেশি এই বৈগুনী গ্রামে, যে মাত্র ৬,০০০ জনসংখ্যার এই এলাকাকে সবাই চেনে “এক কিডনির গ্রাম” নামে। ২০২৩ সালে BMJ Global Health-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কালাই উপজেলায় প্রতি ৩৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন কিডনি বিক্রি করেছেন।

কালাই উপজেলা বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র এলাকা। অধিকাংশ দাতা ৩০ বছরের আশপাশের পুরুষ, যাদের কাছে এই কিডনি বিক্রি মানে হঠাৎ করে একটা ‘বাঁচার পথ’। ৮৩ শতাংশ দাতা বলেছেন, কিডনি বিক্রির প্রধান কারণ দারিদ্র্য। বাকিরা বলেছে ঋণ শোধ, মাদকাসক্তি বা জুয়াসহ অন্যান্য চাপ।

সফিরউদ্দিন বলেন, তার পাসপোর্ট দালালরাই নিয়ে নিয়েছিল, আর তা ফেরত পায়নি। এমনকি অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তার যে ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন, তাও পায়নি। “ওরা সব নিয়ে গেছে,” বলেন তিনি।

অস্ত্রোপচারের পর দালালরা প্রায়ই দাতাদের পাসপোর্ট ও প্রেসক্রিপশন রেখে দেয়, যাতে অপারেশনের কোনো প্রমাণ না থাকে এবং চিকিৎসার পরবর্তী সেবা থেকেও তারা বঞ্চিত হন।

এই কিডনিগুলো বিক্রি হয় ধনী রোগীদের কাছে—বাংলাদেশ বা ভারতে—যারা দীর্ঘ অপেক্ষা ও আইনি সীমাবদ্ধতা এড়াতে চায়। ভারতে ২০২৩ সালে কেবল ১৩,৬০০ কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে, অথচ প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ মানুষ শেষ পর্যায়ের কিডনি ব্যর্থতায় ভোগে।

আল জাজিরা এক ডজনের বেশি কিডনি দাতার সঙ্গে কথা বলেছে—তারা সবাই দারিদ্র্যকে দায়ী করেছেন। এই পাচারের সরল কিন্তু নিষ্ঠুর হিসাব হলো: দারিদ্র্য সরবরাহ তৈরি করে, আর বিত্তবানদের চাহিদা ও দুর্বল আইন প্রয়োগ ব্যবস্থা সেই চাহিদাকে থামতে দেয় না।

Aj

ছবি: সফিরউদ্দিন কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তার অস্ত্রোপচারের দাগ দেখাচ্ছেন

এক ভুল সিদ্ধান্তের ফলাফল

৪৫ বছর বয়সী জোসনা বেগম, কালাই উপজেলার বিনাই গ্রামের বিধবা। ২০১২ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে নিয়ে চরম সংকটে পড়েন। ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়ে বেলাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তারপর দুজনকেই দালালরা প্রলুব্ধ করে ভারতে কিডনি বিক্রি করতে।

“এটা ছিল একটা ভুল,” বলেন জোসনা। শুরুতে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও পরে তা ৭ লাখ বলে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর হাতে পান মাত্র ৩ লাখ টাকা।

জোসনা ও বেলালকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্স হাসপাতালে। তাদেরকে বেনাপোল দিয়ে বাসে করে সীমান্ত পার করানো হয়, হাসপাতালের পাশে একটি ভাড়াবাড়িতে রাখা হয়।

দালালরা কাগজপত্রে জোসনার সঙ্গে গ্রহীতার আত্মীয়তা জাল করে। “আমার পাসপোর্ট, প্রেসক্রিপশন—সব তাদের হাতে। আমি শুধু পাসপোর্ট চেয়েছিলাম, তাও দেয়নি।”

ভারতে প্রায় দুই মাস থেকে ফিরে আসেন তিনি—তবে দালালের অনুগ্রহে, প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও তারা আর যোগাযোগ রাখেনি। কিছু টুকরো টাকা ঈদের সময় দেওয়া হলেও, এরপর তারা হাওয়া হয়ে যায়।

অপারেশনের পর বেলাল তাকে ছেড়ে অন্য নারীকে বিয়ে করে। “আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে,” বলেন জোসনা।

চিরস্থায়ী ব্যথা আর ওষুধের খরচ সামাল দিতে না পেরে এখন কোনো ভারী কাজই করতে পারেন না। “সারাক্ষণ ওষুধ লাগে,” কাঁপা কণ্ঠে বলেন তিনি।

দাতা থেকে দালাল—একটা দারিদ্র্যচক্র

মোহাম্মদ সাজল (ছদ্মনাম), একসময় ঢাকায় ইভ্যালির মাধ্যমে হাউজহোল্ড সামগ্রী বিক্রি করতেন। ২০২১ সালে ইভ্যালি কেলেঙ্কারিতে তার সব সঞ্চয় শেষ হয়ে যায়। দেনা শোধে তিনি ২০২২ সালে নয়াদিল্লির ভেঙ্কটেশ্বর হাসপাতালে নিজের কিডনি বিক্রি করেন। প্রলোভন ছিল ১০ লাখ টাকা, কিন্তু পান মাত্র ৩ লাখ ৫০ হাজার।

তার ভাষায়, “ওরা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।” এরপর একসময় নিজেই হয়ে যান দালাল—বাংলাদেশি দাতাদের ভারতীয় হাসপাতালে অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেন। পরে দালালচক্রের সঙ্গে আর্থিক বিরোধে জড়িয়ে পড়লে, জীবন রক্ষার ভয়ে পিছু হটেন।

“আমি এখন এই গ্যাংয়ের বন্দুকের সামনে,” বলেন তিনি। তার দাবি, এই চক্র বাংলাদেশ ও ভারতের হাসপাতাল পর্যন্ত বিস্তৃত। “ডাক্তার, রোগী, দালাল—সব একসঙ্গে কাজ করে।”

বর্তমানে তিনি ঢাকায় রাইডশেয়ার ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। অতীত ভুলে সামনে এগোতে চান। “কেউ শখে কিডনি দেয় না। এটা কেবল বাঁচার হিসাব।”

অস্ত্রোপচারের ছাপ রেখে নিখোঁজ হয়ে যায় দালালেরা

সফিরউদ্দিন নিজের শরীরের ক্ষত দেখিয়ে বলেন, “ওরা আমার কিডনি নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।” যেমন তাঁর কথা, তেমনি আরও বহু দাতার—যাদের কাছে অপারেশনের পরে থাকেনি কোনো কাগজপত্র, নেই ফলোআপ চিকিৎসার সুবিধা।

অনেকে যেমন নিজের কিডনির গ্রহীতার নাম পর্যন্ত জানেন না। আইনত ভারত বা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় দান শুধুমাত্র নিকট আত্মীয়ের মধ্যে হতে পারে, অথচ কাগজপত্র জাল করে এই নিয়মকে ঠেকানো যায় না। দালালদের কাছে এটা এখন রীতিমতো কৌশলগত ব্যবসা। জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে নোটারী সনদ, সবই ভুয়া। এমনকি প্রয়োজনে ডিএনএ রিপোর্টও জাল করা হয়।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও WHO-র অঙ্গ প্রতিস্থাপন টাস্কফোর্সের সদস্য মনির মনিরুজ্জামান বলেন, “এই ভুয়া পরিচয়ের কাগজপত্র খুব সহজেই তৈরি করা যায়। এতে সময় লাগে কম, খরচও খুব কম।”

এভাবে তৈরি হওয়া নকল আত্মীয়তার ভিত্তিতে যখন অপারেশন হয়, তখন তা যেন আইনগতভাবেই বৈধ। হাসপাতালগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলে, “কাগজপত্র তো ঠিক ছিল।”

বাংলাদেশ ও ভারতের কর্তৃপক্ষ কী বলছে?

বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর বলেন, এই পাচার রোধে গোপন তদন্ত ও নিয়মিত অভিযানে নামা হয়েছে। “এই বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।” তিনি জানান, ইতোমধ্যে কয়েকজন দালাল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অন্যদিকে ভারতে পুলিশ একাধিক ঘটনায় চিকিৎসকদের জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে ৫০ বছর বয়সী কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা. বিজয়া রাজকুমারীকে। তদন্তে জানা যায়, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কমপক্ষে ১৫ জন বাংলাদেশির কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বিচ্ছিন্ন গ্রেপ্তার কোনো কাজে আসছে না। কারণ, পুরো ব্যবস্থাটির ভিত্তিই গড়ে উঠেছে নিয়মের ফাঁক গলে গোপনে চলা লাভজনক বাণিজ্যের ওপর।

বিশেষত ভারতে ‘মেডিকেল ট্যুরিজম’ বা চিকিৎসা-ভ্রমণ শিল্পটি ২০২৪ সালে প্রায় ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হয়। ফলে সরকার একদিকে আইনি বাধ্যবাধকতা বজায় রাখার চেষ্টা করে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রোগী আনতে আগ্রহী হাসপাতালগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থকেও প্রশ্রয় দেয়।

মনিরুজ্জামান বলেন, “যখন জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে, হাসপাতালগুলো বলে—আমরা তো কাগজ দেখে কাজ করেছি। কিন্তু এই কাগজগুলো যে তৈরি করাই হয় দালালের সুবিধার্থে, সেটা তারা বোঝে না— এমন দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসলে বেশি ট্রান্সপ্লান্ট মানে বেশি আয়। তাই চোখ বন্ধ করে রাখাই সুবিধাজনক।”

jj

ছবি:ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই লাভজনক হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালে নেপালের পুলিশ গ্রেপ্তার করে অমিত কুমার নামের ৪০ বছর বয়সী এক ভারতীয়কে, যাকে ভারতের একটি অবৈধ কিডনি পাচার চক্রের মূলহোতা হিসেবে সন্দেহ করা হয়।

দালাল ও চিকিৎসকদের গোপন যোগসাজশ

বাংলাদেশের এক দালাল মিজানুর রহমান জানান, এই ব্যবসায় হাসপাতাল বোর্ড থেকে শুরু করে চিকিৎসকরাও যুক্ত। অনেক সময় দালালরা সরাসরি চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের একটি বড় অংশ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেয়। তিনি বলেন, “ভারতে আমাদের পার্টনারদের মাধ্যমেই এসব ডাক্তারদের ঠিক করা হয়।”

ভারতের জাতীয় অঙ্গ ও টিস্যু প্রতিস্থাপন সংস্থার (NOTTO) পরিচালক ডা. অনিল কুমার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে NOTTO-র সাবেক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) স্বীকার করেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায়শই ধনী রোগী ও নকল কাগজ নিয়ে আসা দাতা–দু’পক্ষের চাপের মুখে পড়ে যান। “যদি বোর্ড অনুমোদন না দেয়, রোগী আদালতে যায়, উচ্চ পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করে। তাই হাসপাতালগুলো অযথা ঝামেলা এড়াতে ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েই ফেলে।”

পুলিশের নজর এড়াতে হাসপাতাল বদল

মনিরুজ্জামান বলেন, “এই ট্রান্সপ্লান্টগুলোর জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট হাসপাতাল নির্ধারিত নয়। যখন কোনো স্থানে পুলিশি অভিযান হয়, তখন দালালরা স্থান পরিবর্তন করে।”

তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের দালালরা একত্রে কাজ করে। একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা ঠিক করে কখন কোন হাসপাতালে, কোন রোগীর জন্য দাতা পাঠানো হবে।

বাণিজ্যের হিসাব: ধনী পায় ২৬,০০০ ডলারে, গরিব পায় ৩ লাখ টাকা

ভারতে একজন কিডনির রোগী যদি লাইনে দাঁড়িয়ে আইনি পদ্ধতিতে অঙ্গপ্রাপ্তির চেষ্টা করে, তাহলে তার জন্য অপেক্ষা কয়েক বছর। এই দীর্ঘ অপেক্ষা ও কঠিন প্রক্রিয়া এড়িয়ে অনেকেই সরাসরি ২২,০০০–২৬,০০০ ডলার দিয়ে কিডনি কেনে।

আর সেই কিডনির জন্য দাতাকে দেওয়া হয় মাত্র ৩–৫ লাখ টাকা (২,৫০০–৪,০০০ ডলার)। বাকি অর্থ চলে যায় দালাল, ভুয়া কাগজ প্রস্তুতকারী, হাসপাতাল স্টাফ ও কখনো কখনো চিকিৎসকের পকেটে।

আরও ভীতিকর ঘটনা হলো—সব দাতা যে জানে তারা কিডনি দিচ্ছে, তা নয়। কেউ কেউ চাকরির প্রলোভনে ভারতে গিয়ে অপারেশনের পর বুঝে ওঠেন কী হয়েছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের একটি চক্র বাংলাদেশি তরুণদের “চাকরি” দেওয়ার নামে জিম্মি করে কিডনি নিয়েছিল। ঢাকায় এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা অন্তত ১০ জনকে এই কৌশলে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করিয়েছিল।

বের হতে না পারা এক দারিদ্র্য-শোষণের চক্র

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, “কেউ কেউ দারিদ্র্যের কারণে কিডনি বিক্রি করে, কিন্তু একটা বড় অংশ সম্পূর্ণভাবে প্রতারিত হয়।”

তিনি বলেন, “ভারতের কোনো ধনী রোগী কিডনি চায়, মধ্যস্বত্বভোগী একজন দরিদ্র বাংলাদেশিকে খুঁজে আনে, চাকরি বা দ্রুত আয় দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে। তারপর শুরু হয় দালালের খেলা।”

ভবিষ্যতের ভাবনা: নিয়ন্ত্রণ নাকি ন্যায্যতা?

ভারতের কিডনি ওয়ারিয়রস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী বাসুন্ধরা রঘুবন বলেন, “কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু আইনি দাতার অভাব এই সমস্যাকে ভয়াবহ করে তুলেছে।”

তিনি বলেন, “আইনের চোখে অঙ্গ বেচাকেনা অপরাধ হলেও বাস্তবে তা চলে আসছে। সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব না হলে, অন্তত একটি নিয়মতান্ত্রিক ও মানবিক পদ্ধতি নিয়ে ভাবা দরকার।”

তার প্রস্তাব অনুযায়ী, আইনি ব্যবস্থা আরও মানবিক হওয়া উচিত। দাতাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা, অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সুবিধা, এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ভাবতে হবে।

একটি অপূর্ণ বাড়ি, এক পিতার বোবা যন্ত্রণা

সফিরউদ্দিন এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। তার দেহ দুর্বল, প্রতিদিনের কাজ করাও কষ্টকর। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, চোখে ভাসে অপারেশনের কথা, দালালদের প্রতিশ্রুতি, আর অপূর্ণ স্বপ্নের ছবি।

“আমি ভেবেছিলাম, টাকা পাবো, বাড়ি শেষ করবো। এখন আমার সন্তানদের জন্য শুধু অসুস্থ এক বাবা রয়ে গেছে,” বলেন তিনি।

এই ছিল ‘এক কিডনির গ্রাম’-এর ভিতরকার সত্য। এখানে প্রতিটি দাতা একেকটি ভাঙা স্বপ্ন, প্রতিটি অপারেশন একেকটি প্রতারণার দলিল। দারিদ্র্য, দুর্বল আইন, এবং লোভের মোড়কে গড়ে ওঠা এই মানবিক সংকট আজ আমাদের সামনে এক ভয়ঙ্কর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—আমরা কি মানুষের অঙ্গকেও পণ্য বানিয়ে ফেলেছি?

লেখক: জ্যোতি ঠাকুর, আমিনুল ইসলাম মিঠু ও হানান জাফর

মূল উৎস: আল জাজিরা, ৪ জুলাই ২০২৫


প্রিমিয়ার গ্রুপের প্রতিবাদ: ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ ভিত্তিহীন

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ২২:৩৪:৩৪
প্রিমিয়ার গ্রুপের প্রতিবাদ: ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ ভিত্তিহীন

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, গ্রুপটির চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদের ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বানচাল করেছে। প্রিমিয়ার গ্রুপ সংবাদটিকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া ও ভিত্তিহীন” আখ্যায়িত করে জানিয়েছে, এ ধরনের তথ্য প্রকাশ একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে অযথা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট করেছে যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সঙ্গে নিয়ম-নীতি অনুসৃত ও স্বচ্ছ ঋণ সুবিধা বজায় রেখেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে প্রায় ২৮৭ কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে সুদের বিষয়ে আলোচনা চলমান থাকা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এসব পে-অর্ডার যথাসময়ে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তা সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবে জমা করা হয়েছে। কোম্পানির দাবি, সংবাদে যে “৩০০টি চেক” প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর। এগুলো কোনো চেক ছিল না, বরং ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ পে-অর্ডার, যা ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে অসত্য।

প্রিমিয়ার গ্রুপের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের গ্রুপ সর্বদা সততা, স্বচ্ছতা এবং আইনসম্মত নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমরা প্রকাশিত মিথ্যা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি এবং মিডিয়াকে আহ্বান জানাচ্ছি ভবিষ্যতে এমন সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্য যাচাই করতে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা সমাজ ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য।”

প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, ভিত্তিহীন প্রতিবেদন কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের সুনামকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রিমিয়ার গ্রুপ এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রিমিয়ার গ্রুপ নৈতিক ব্যবসা পরিচালনা, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং দেশের বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান মেনে চলার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।


‘আমার বাবাকে কাকা-কাকাতো ভাই মেরে ফেলেছে’

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৩:৩১:৩৯
‘আমার বাবাকে কাকা-কাকাতো ভাই মেরে ফেলেছে’
ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সামান্য ছাদের পানি পড়াকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধের জেরে ভাইয়ের হাতে প্রাণ হারালেন আনন্দ ঘোষ (৪৫)। পারিবারিক কলহ থেকে শুরু হওয়া এ ঘটনা এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে পরিণত হয়। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার উনশিয়া গ্রামের ঘোষবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মৃত সুধীর ঘোষের ছেলে ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আনন্দ ঘোষের সঙ্গে তাঁর তিন ভাই—গৌরাঙ্গ ঘোষ (৫২), কালা ঘোষ (৫০) ও যুগল ঘোষের (৩০) দীর্ঘদিন ধরে ছাদের পানি পড়া নিয়ে বিরোধ চলছিল। রোববার দিনের বৃষ্টির পর বিষয়টি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে রাতের বেলায় আনন্দ ঘোষের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে গৌরাঙ্গ, কালা ও যুগল ঘোষের সঙ্গে তাঁদের ভাতিজা নয়ন ঘোষ এবং সৌরভ ঘোষ লাঠি নিয়ে আনন্দ ঘোষকে বেধড়ক মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় পরিবার ও স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত আনন্দ ঘোষের স্ত্রী মিতা ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, “দিনে বৃষ্টি হয়েছিল। ছাদ থেকে পানি পড়া নিয়ে রাতে আমার দেবর আর ভাসুররা বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।”

অন্যদিকে নিহতের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে অথৈ ঘোষ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, “আমার বাবা চেয়েছিলেন আমি নার্স হই। আমারও স্বপ্ন ছিল নার্স হওয়ার। কিন্তু কাকা আর কাকাতো ভাইয়েরা মিলে আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। এখন আমার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল।”

প্রতিবেশী বাচ্চু হাওলাদার বলেন, বিষয়টি নতুন নয়। ছাদের পানি পড়াকে কেন্দ্র করে আগে একাধিকবার গ্রামে সালিশ বৈঠক হয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আনন্দ ঘোষের ভাইয়েরা কোনো সিদ্ধান্ত মানেননি। শেষ পর্যন্ত সেই বিরোধ রক্তক্ষয়ী পরিণতি ডেকে আনল।

ঘটনার পর স্থানীয়রা গৌরাঙ্গ, কালা ও যুগল ঘোষের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে কাউকেই পাওয়া যায়নি।

কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, “লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

-রফিক


উন্নয়নের মুখোশ না মহা লুটপাট? শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৫ লাখ কোটি টাকার রহস্য

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ০৯:৫১:৩৭
উন্নয়নের মুখোশ না মহা লুটপাট? শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৫ লাখ কোটি টাকার রহস্য

বাংলাদেশে একদিকে যখন পদ্মা সেতুর ঝলমলে আলো, মেট্রোরেলের আধুনিক গতি আর কর্ণফুলী টানেলের স্বপ্নকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল, তখন অন্যদিকে আড়ালে চলছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থলুণ্ঠন। ব্রিটিশ দৈনিক ফাইনান্সিয়াল টাইমস তাদের অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র “বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি”-তে যে চিত্র দেখিয়েছে, তা কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ইতিহাসেরও এক অন্ধকার অধ্যায়।

২৩৪ বিলিয়ন ডলারের অদৃশ্য স্রোত

২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচার হয়েছে—মোট প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২৫ লাখ কোটি টাকার সমান। এই বিপুল অংক কেবল কল্পনাতেই নয়, বাস্তবেও জাতীয় অর্থনীতিকে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের গভীরে ঠেলে দিয়েছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন দুর্নীতি নয়, বরং ছিল সুসংগঠিত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ডাকাতি।

পাচারের কৌশল: সিনেমার মতো নিখুঁত পরিকল্পনা

অর্থ পাচারের মূল কৌশল ছিল—

ওভার ইনভয়েসিং: আমদানির সময় পণ্যের দাম কাগজে বহুগুণ বেশি দেখানো। এক কোটি টাকার যন্ত্রপাতিকে দেখানো হতো পাঁচ কোটি টাকা, আর অতিরিক্ত চার কোটি টাকা বৈধভাবে বিদেশে চলে যেত।

আন্ডার ইনভয়েসিং: রপ্তানির ক্ষেত্রে ঘটত উল্টোটা। পাঁচ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে দেখানো হতো মাত্র এক কোটি টাকা। চার কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারীর অ্যাকাউন্টে থেকে যেত।

হুন্ডি নেটওয়ার্ক: ব্যাংকিং খাতকে দখল করে ভুয়া ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হতো। ইসলামী ব্যাংকের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানও এই প্রহসন থেকে রক্ষা পায়নি। ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, পরে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর হয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের কাছে।

ব্যাংক লুট থেকে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য

এস আলম গ্রুপ একাই ভুয়া ঋণের মাধ্যমে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই টাকার বড় অংশ লন্ডনের রিয়েল এস্টেট বাজারে বিনিয়োগ করা হয়। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগই এখন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের জব্দ করা তালিকায়।

টিউলিপ সিদ্দিকীর ফ্ল্যাট থেকে বৈশ্বিক কেলেঙ্কারি

এই কেলেঙ্কারিতে শেখ হাসিনার ভাগ্নি, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর নামও উঠে এসেছে। মাত্র ২২ বছর বয়সে লন্ডনের কিংস ক্রসে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট পাওয়ার ঘটনা এবং পরবর্তীতে দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিত্ব হারানোর ঘটনা দেখায়, কীভাবে পরিবারতন্ত্র আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাথে জড়িয়ে গেছে।

উন্নয়নের জোয়ারের আড়ালে লুণ্ঠনের স্রোত

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, কিংবা অন্যান্য বড় প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, সবই প্রমাণ করে উন্নয়নের নামে জাতিকে এক মরিচিকার আড়ালে আটকে রাখা হয়েছিল। উন্নয়নের ঢাকঢোলের আড়ালে এ যেন ছিল এক নির্লজ্জ মহালুটপাটের উৎসব।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থলুণ্ঠন

অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভাষায়, “এটি সম্ভবত কোনো দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থলুণ্ঠন।” এই লুণ্ঠন কেবল অর্থনীতিকে নয়, রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিকেও ধ্বংস করেছে। আর আজ প্রশ্ন উঠেছে—উন্নয়নের স্বপ্ন নাকি লুটপাটের অন্ধকার, কোনটি আসল উত্তরাধিকার?


শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের অস্ত্র মামলায় নতুন মোড়

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৬:১৭:০৯
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের অস্ত্র মামলায় নতুন মোড়
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা অস্ত্র মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলী (৬১) এবং তার তিন সহযোগীর জামিন আবেদন নাকচ করেছে আদালত। একই সঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫–এর বিচারক সাইফুর রহমান মজুমদার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। এদিন মামলাটির অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল।

আদালতে সুব্রত বাইনের পক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন, তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান তার বিরোধিতা করেন। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত জামিন নামঞ্জুর করে অভিযোগপত্রভুক্ত চার আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম গত ১৩ জুলাই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।

পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫–তে স্থানান্তর করা হয়। এ মামলায় সুব্রত বাইনের পাশাপাশি আরও তিনজন আসামি রয়েছেন আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, এম এ এস শরীফ এবং আরাফাত ইবনে নাসির।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মে ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া থেকে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে হাতিরঝিল থেকে শ্যুটার আরাফাত ও শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৮ মে হাতিরঝিল থানার এসআই আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন।

সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯১ সালে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মাধ্যমে তার অপরাধ জগতে উত্থান ঘটে। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে, সেখানে সুব্রত বাইন ছিলেন অন্যতম।

তিনি ঢাকার অপরাধ জগতের কুখ্যাত সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে গেলে ২০০৩ সালের দিকে তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং দীর্ঘদিন সেখানেই অবস্থান করেন।

-রাফসান


খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৭:১৫:১৭
খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন
ছবিঃ বি এস এস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৩ মাসের অপরাধের চিত্র আজ প্রকাশ করেছে সরকার। এতে দেখা গেছে, এ সময়ে খুনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হলেও এর বড় অংশ আসলে পূর্ববর্তী ১৬ বছরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, যেগুলোর মামলা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের’ পর দায়ের করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তত ১,১৩০টি খুনের মামলা, যা শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলো দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয় এবং পুলিশের নিরুৎসাহের কারণে মামলা করা যায়নি। কিন্তু শাসন পরিবর্তনের পর এসব মামলা আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের অপরাধের বিভিন্ন সূচক কিছুটা উঁচু মনে হলেও এটি নতুন কোনো সহিংসতার ঢেউ নয়; বরং দেরিতে বিচারপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া। এখন সাধারণ নাগরিকরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ভয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন না, ফলে তারা অপরাধের মামলা করতে পারছেন নির্ভয়ে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতির ঘটনা ২০২৪ সালের ১,৪০৫ থেকে ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১,৩১৪-তে। তবে ২০২৩ সালের আগের সময়ের তুলনায় এটি এখনো বেশি। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হলো—পুলিশি হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশে এখন সব ডাকাতির মামলা নিবন্ধিত হচ্ছে এবং নাগরিকরা আরও বেশি সচেতন হয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন।

এছাড়া, দ্রুত বিচার আইনে অপরাধের মামলা ২০২৪ সালের ১,২২৬ থেকে ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৫১-এ। একই সময়ে দাঙ্গা মামলার সংখ্যা ১২৫ থেকে কমে ৫৯-এ এবং চুরির মামলা ৮,৬৫২ থেকে নেমে এসেছে ৬,৩৫৪-এ।

প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “যদিও খুনের সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে, বাস্তবে এটি নতুন সহিংসতা নয়, বরং পূর্বের দমন করা মামলার প্রকাশ।” অনেক হত্যাকাণ্ডের মামলা এমনকি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পুরোনো সময়ের।

সরকারের দাবি, এখন ভুক্তভোগীরা রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভয় পাচ্ছেন না। পুলিশও আর মামলা নিতে বাধা দিচ্ছে না। ফলে খুনের মতো গুরুতর অপরাধের তথ্য সামনে আসছে, আবার সাধারণ অপরাধ যেমন চুরি, ডাকাতি ও দাঙ্গার ঘটনা কমছে।

এভাবে অপরাধের চিত্র নতুন বাস্তবতাকে তুলে ধরছে—একদিকে দেরিতে হলেও ন্যায়বিচারের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

-সুত্রঃবি এস এস


চাকরির প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়ে ৩ প্রতারক গ্রেপ্তার

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৩:৪২:৪৯
চাকরির প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়ে ৩ প্রতারক গ্রেপ্তার
ছবিঃ সংগৃহীত

অনলাইনে ভুয়া চাকরির প্রলোভন এবং টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডি, ঠাকুরগাঁও সীমান্তঘেঁষা একটি গ্রাম এবং দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সমন্বিত অভিযানে তাদের আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চক্রের মূলহোতা আকাশ (২২), রাশাদ (২৮) এবং তাদের সহযোগী আসাদ (৩০)। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, এই প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষকে ভুয়া খণ্ডকালীন চাকরির প্রলোভন দিতো। পাশাপাশি টেলিগ্রাম অ্যাপে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে অল্প সময়ে কয়েকগুণ মুনাফা দেওয়ার আশ্বাস দেখাতো। তাদের টোপে পড়ে অনেকেই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে, আর এর মাধ্যমেই চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। সিআইডির ধারণা, এই চক্রের সঙ্গে দেশি-বিদেশি আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ছদ্মনামে নিবন্ধিত একাধিক সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ ঢাকার ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার সূত্র ধরেই এই অভিযানে চক্রের মূল সদস্যদের আটক করা সম্ভব হয়েছে।

-রফিক


স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল বহিষ্কার, মালিবাগ হামলায় মামলা

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৩:৩১:১২
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল বহিষ্কার, মালিবাগ হামলায় মামলা
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানীর মালিবাগে বুধবার দিবাগত রাতে সোহাগ পরিবহনের মালিকের ভাইসহ অন্তত সাতজনকে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করেছে একদল দুর্বৃত্ত। হামলাকারীরা এ সময় সোহাগ পরিবহনের কার্যালয় ও মালিকের বাসায় ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল হোসেনকে অভিযুক্ত করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত ১১টা ৭ মিনিটে কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ব্যক্তির দিকে কয়েকজন চাপাতি, ছুরি ও রড নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ হাততালি দিয়ে উল্লাস করছিলেন এবং পরে তারা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে কর্মচারীদের মারধর ও টিকিট বিক্রির অর্থ লুট করেন।

সোহাগ পরিবহনের মালিক মো. ফারুক তালুকদার বলেন, সেদিন রাতে একটি বাস কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে যাত্রীরা নামছিলেন। এ সময় দুই ব্যক্তি যাত্রী নামার পথেই ধূমপান করছিলেন। কর্মীরা তাঁদের সরে যেতে বললে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় ৫০ জন অস্ত্রধারী এসে হামলা চালায়। এতে তাঁর ভাই আলী হাসান তালুকদারসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তিনি অভিযোগ করেন, হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন।

ঘটনার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন জানান, বিল্লালকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোহাগ গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মকর্তা দেওয়ান মো. আল আমিন বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা করেন। মামলায় বিল্লালসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ১৮-২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, হামলাকারীরা গ্যারেজ ও নিরাপত্তা কক্ষ ভাঙচুর করে এবং আলী হাসান তালুকদার, তাঁর চালক মাসুদ, কর্মী হাসান তপন, ফরহাদ হোসেন, নাইমুর রহমান আদিব ও মাসুদকে কুপিয়ে আহত করে। এছাড়া প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি করে এবং ১৭ হাজার ৫৭০ টাকা লুট করে নেয়।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক জানান, এজাহারভুক্ত আসামি পারভেজ এবং ভিডিও দেখে শনাক্তকৃত জয়নালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বিবৃতি দিয়ে এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

-রফিক


মেঘনায় রুদ্ধশ্বাস বন্দুকযুদ্ধ: অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হামলা

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২৬ ০৭:২৩:৪৪
মেঘনায় রুদ্ধশ্বাস বন্দুকযুদ্ধ: অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হামলা
গোলাগুলি। প্রতিকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে সদ্য চালু হওয়া জামালপুর অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের ওপর নৌ ডাকাত দলের ভয়াবহ হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বিকেল সোয়া পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলে পুলিশের সঙ্গে নৌ ডাকাতদের বন্দুকযুদ্ধ। এ সময় ডাকাতরা পুলিশ ক্যাম্পে একের পর এক গুলি ও ককটেল ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তবে পাল্টা প্রতিরোধে পুলিশও গুলি চালায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উভয় পক্ষ মিলিয়ে শতাধিক গুলি বিনিময় হয়েছে।

আতঙ্কে নদীবেষ্টিত গ্রামাঞ্চল

স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল দেওয়ান বলেন, বিকেলের দিকেই প্রচণ্ড গুলির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘর থেকে বের হয়ে তিনি দেখেন, পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় ট্রলারযোগে আসা ডাকাতরা পুলিশের দিকে গুলি চালাচ্ছে। এতে পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সাধারণ মানুষ ভয়ে ঘরে অবস্থান করতে শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকাত নয়ন, পিয়াস ও রিপনের নেতৃত্বে ৩০–৪০ জন সদস্য ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দিচ্ছিল। পুলিশ প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পেয়ে তারা প্রথমে আড়াল নেয়, পরে অস্ত্র, ককটেল ও হেলমেট পরে ক্যাম্পের ওপর সরাসরি হামলা চালায়।

পুলিশের প্রতিরোধ ও পাল্টা গুলি

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ডাকাতরা থানা থেকে লুট করা দেশি-বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ডাকাত দলের দিক থেকে প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়, পুলিশও অন্তত ২০ রাউন্ড পাল্টা গুলি চালায়। আধাঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে ডাকাতরা মতলবের দিকে পালিয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত কোনো পুলিশ সদস্য আহত হননি। তবে ডাকাতদের কেউ আহত হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসের ইতিহাস

স্থানীয়রা জানান, গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা নদী ও আশপাশের শাখা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বালুমহাল দখল, নৌযানে চাঁদাবাজি ও প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনী। তাদের তাণ্ডবে গত এক বছরে বাবলা নামের এক প্রতিদ্বন্দ্বী ডাকাত নিহত হন, আর বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় আবদুল মান্নান ও হৃদয় আহমেদ নামে দুজন গ্রামবাসী গুলিতে প্রাণ হারান। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই গত শুক্রবার জামালপুর গ্রামে নতুন পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয়।

পুলিশের বার্তা: ভয় নেই, সন্ত্রাসীরা দমন হবে

ঘটনার সময় ক্যাম্পে থাকা গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ জানান, ডাকাতরা সুসংগঠিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তবে পুলিশ পিছু হটেনি এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, ক্যাম্প চালুর পর নৌ ডাকাতরা আর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এ কারণেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তার ভাষায়, “পুলিশ জনগণের পাশে রয়েছে। ডাকাত–সন্ত্রাসীরা যতই শক্তিশালী হোক, তাদের নির্মূল করে গুয়াগাছিয়াকে অপরাধমুক্ত করা হবে।”

মানুষের আতঙ্ক ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা

স্থানীয় অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাকাত বাহিনীর ভয়ে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল। পুলিশ ক্যাম্প চালুর পর ধীরে ধীরে মানুষ গ্রামে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু হামলার ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, পুলিশকে আরও শক্তিশালী ও স্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তুলতে হবে, নাহলে যে কোনো সময় ডাকাতরা আবারও ভয়াবহ হামলা চালাতে পারে।


থানায় ঢুকে এএসআইকে ছুরিকাঘাত, পরদিন মিলল যুবকের লাশ

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৫ ১২:৫৭:০৩
থানায় ঢুকে এএসআইকে ছুরিকাঘাত, পরদিন মিলল যুবকের লাশ

গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় এক অজ্ঞাত যুবকের আচরণ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) ছুরিকাঘাত করার পর পালিয়ে যাওয়া ওই যুবকের মরদেহ পরদিন সকালে কাছাকাছি বিদ্যালয়ের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এক যুবক আচমকাই সাঘাটা থানার মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন ডিউটিতে থাকা কনস্টেবল সেরাজুল ইসলামের কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বাধা দিতে গেলে এএসআই মহসিন আলীর ওপর ছুরি দিয়ে আক্রমণ চালান তিনি। এতে গুরুতর আহত হন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনার পর হামলাকারী দৌঁড়ে থানার পাশের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে ঝাঁপ দেন এবং সেখানেই নিখোঁজ হয়ে যান।

রাতভর অভিযান চালানোর পর শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল কচুরিপানায় ঢাকা পুকুরের নিচ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। এ বিষয়ে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঘটনার পর থেকেই উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। ধারণা করছি, মরদেহ কচুরিপানার নিচে আটকে ছিল।”

পরে মরদেহটি সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, যুবকটি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। মরদেহের পকেট থেকে গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি প্রবেশপত্র পাওয়া গেছে। সেখানকার তথ্য অনুযায়ী, তার নাম সাজু মিয়া, পিতা দুলাল মিয়া ও মাতা রিক্তা বেগম। প্রবেশপত্রে থাকা ছবি ও তথ্য যাচাই করে পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।

এএসআই মহসিন আলীর আঘাত গুরুতর না হলেও তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন নাকি পূর্বপরিকল্পিত তা খতিয়ে দেখছে। পুরো ঘটনার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা উসকানি আছে কি না, সেটিও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত: