হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যা করবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১৮:৫০:১৬
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যা করবেন

বর্তমান ব্যস্ত নাগরিক জীবনে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করাকে কেন্দ্র করেই জন্ম নিচ্ছে একের পর এক জটিল শারীরিক সমস্যা। নিয়মিত দফতরের ৮ ঘণ্টা কাজ, বাড়ি ফিরে বিশ্রামের অভ্যাস, আর সেই সঙ্গে শরীরচর্চার চূড়ান্ত ঘাটতি এসবই একত্রে বাড়িয়ে তুলছে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসুস্থতার ঝুঁকি। চিকিৎসকদের মতে, এই জীবনধারার পরিবর্তন না ঘটালে অল্প বয়সেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন শরীরচর্চা নয়, বরং ‘নিয়মিত ও সঠিক পদ্ধতিতে শরীরচর্চাই’ সুস্থ জীবনের একমাত্র চাবিকাঠি। তাদের মতে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত যোগব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী। শুধু ওজন কমানো নয়, শরীরের অভ্যন্তরীণ ধমনিগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে হৃদপিণ্ডকে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে নির্দিষ্ট কিছু যোগাসন।

হৃদপিণ্ডকে সজীব রাখতে সহায়ক হয় যেসব যোগাসন:

১. তাড়াসন (মাউন্টেন পোজ):

‘তাড়’ শব্দের অর্থ পর্বত, আর এই আসনের উদ্দেশ্যও তেমনই শরীরকে পর্বতের মতো দৃঢ় ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলা। এই আসনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে হাত ওপরে তুলে গোড়ালি ওঠানো হয়, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে হৃদপিণ্ডে চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন মাত্র ৩০ সেকেন্ড এই আসন অভ্যাস করলেই মানসিক একাগ্রতা বৃদ্ধি এবং হার্ট ফাংশন উন্নত হয়।

২. উৎকটাসন (চেয়ার পোজ):

এই আসনে কল্পনায় চেয়ারে বসার ভঙ্গিতে শরীর নামিয়ে আনা হয়। এতে পায়ের পেশি, কোমর ও মেরুদণ্ডের স্থায়িত্ব বাড়ে। এই ব্যায়ামে শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ গতিশীল থাকে। দেহে জমে থাকা স্ট্রেস হরমোনও অনেকটাই কমে আসে।

৩. অধোমুখ শবাসন (ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ পোজ):

যোগব্যায়ামের জগতে এটি অন্যতম সেরা ‘স্ট্রেস-রিলিফ পোজ’। এই আসনে উপরের দিক থেকে নিচের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে রাখা হয়, ফলে মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং ক্লান্তি দূর করে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ হ্রাস করে। দিনে তিনবার মাত্র ২০ সেকেন্ডের এই চর্চাই আপনাকে দিতে পারে নতুন প্রাণশক্তি।

ব্যায়ামের উপকারিতা শুধু হার্টেই সীমিত নয়

নিয়মিত যোগাসনের ফলে শরীরের বিভিন্ন অকেজো হয়ে যাওয়া ধমনিগুলোর কার্যকারিতা বাড়ে। মূল করোনারি ধমনির পাশাপাশি এই ধমনিগুলোও ধীরে ধীরে সচল হয়ে ওঠে। ফলে রক্ত সঞ্চালনের নতুন পথ তৈরি হয়, যা হার্টের উপর চাপ কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। পাশাপাশি শরীরে ধকল সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ে, স্ট্যামিনা বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্ক আরও সচল থাকে।

চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, শারীরিক ফিটনেস অর্জনের জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হয় না প্রতিদিন মাত্র ২০–৩০ মিনিট সঠিকভাবে শরীরচর্চাই যথেষ্ট। মূল কথা, আপনি কী করছেন, কতটুকু মনোযোগ দিচ্ছেন এবং নিয়মিত হচ্ছেন কিনা। ন্যূনতম এই অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে রাখতে পারে বহু রোগ থেকে দূরে।

অতএব, অফিস থেকে ফিরে ক্লান্তি ভেঙে সামান্য সময় বের করে নিন নিজের শরীরের জন্য। কারণ আপনার ছোট একটু সচেতনতা আপনার হৃদয়কে রাখতে পারে অনেক বড় বিপদ থেকে মুক্ত। যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন, তত তাড়াতাড়ি ফলাফল পাবেন আর ততটাই শক্তপোক্ত হবে আপনার ‘হৃদয়’।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ