গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

গাজার ত্রাণ প্রার্থীদের রক্তে রঞ্জিত “মানবিকতা”: ইসরায়েলি ড্রোন ও গুলিতে ৮৬ জন নিহত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৫ ০৯:০১:৫৪
গাজার ত্রাণ প্রার্থীদের রক্তে রঞ্জিত “মানবিকতা”: ইসরায়েলি ড্রোন ও গুলিতে ৮৬ জন নিহত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার জনগণের দুর্দশা প্রতিদিন নতুন মাত্রা নিচ্ছে। এবার মানবিক সহায়তা নিতে আসা অসহায় মানুষদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর ড্রোন হামলা ও গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৬ জন ফিলিস্তিনি। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসা সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশেপাশে—যেখানে ক্ষুধার্ত মানুষ কিছু খাবার ও সহায়তার আশায় জড়ো হয়েছিলেন।

গাজার মধ্যাঞ্চলের সালাহ আল-দিন সড়কে ওয়াদি গাজার দক্ষিণ অংশে চালানো একটি হামলায় একাই নিহত হন অন্তত ২৫ জন। আহত হয়েছেন ১৪০ জনেরও বেশি, যাদের মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একই দিনে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা আরও ২৭ জন মানুষকে ইসরায়েলি সেনারা গুলি করে হত্যা করে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

ভয়াবহ এই ঘটনার দৃশ্য ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, আহত ও নিহতদের মরদেহ স্থানীয় আল-আওদা হাসপাতালসহ আশেপাশের চিকিৎসাকেন্দ্রে আনা হচ্ছে। নিহতদের অনেকেই নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা।

উল্লেখযোগ্য যে, গত মাসের শেষদিকে বিতর্কিত ইসরায়েলি-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামক একটি সংস্থা ত্রাণ বিতরণ পয়েন্ট স্থাপন করে, যেখানে প্রতিদিন হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে। জাতিসংঘের প্যালেস্টাইন উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা (UNRWA) জিএইচএফ পরিচালিত এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নতুন তৈরি তথাকথিত ত্রাণ ব্যবস্থা আসলে একটি জঘন্য অপকর্ম, যা হতাশ মানুষদের অসম্মান ও অবমাননার শিকার বানাচ্ছে। এটি একটি মৃত্যু ফাঁদ যা বাঁচানোর বদলে প্রতিনিয়ত জীবন কেড়ে নিচ্ছে।”

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের ফলে গত দুই মাস ধরে খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সব ধরনের জরুরি সহায়তা কার্যত বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠে, যার প্রেক্ষিতে জিএইচএফ তাদের বিতরণ কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু শুরু থেকেই এই বিতরণ কেন্দ্রগুলো বিশৃঙ্খলা, দখলদারিত্ব এবং সহিংসতায় পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হামলা করে সরাসরি মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন করছে। জাতিসংঘের মতে, জিএইচএফ-এর নামে পরিচালিত এই বিতরণব্যবস্থা একটি রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনা, যা মানবিক সহায়তার নামে নিরীহ জনগণকে নিশানা করছে। এখন পর্যন্ত জিএইচএফ-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০০, আহতের সংখ্যা এক হাজারের বেশি।

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। ত্রাণ ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গাজার জনগণ আজ এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি যেখানে সাহায্যের আশায় এগিয়ে গেলেও মৃত্যুই তাদের নিয়তি। যুদ্ধবিরতির কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই, প্রতিদিন গাজার নাগরিক সমাজ ধ্বংস হয়ে চলেছে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত