ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

কাতারে হামলার সময় মাঝ আকাশে বিপাকে দুই বাংলাদেশি ফ্লাইট, যা ঘটল

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৪ ০৮:৩৪:১৪
কাতারে হামলার সময় মাঝ আকাশে বিপাকে দুই বাংলাদেশি ফ্লাইট, যা ঘটল

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, যখন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র কাতারের রাজধানী দোহার নিকটে অবস্থিত মার্কিন বিমানঘাঁটি আল-উদেইদে আঘাত হানে। এই ঘটনার পর পরই জরুরি নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করে কাতার তাদের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া অন্তত দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে।

সোমবার (২৩ জুন) রাতের এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচলে এক তাৎক্ষণিক সংকট তৈরি করে, বিশেষত ঢাকা থেকে দোহাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩২৫ ফ্লাইট এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-৩৩৩ ফ্লাইটের জন্য। ফ্লাইট দুটি মাঝ আকাশে অবস্থান করছিল, যখন কাতার তাদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফ্লাইট বিজি-৩২৫ যখন কাতার আকাশে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন দোহা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে জানানো হয় যে কোনো বিমান সেখানে অবতরণ করতে পারবে না। পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে তৎক্ষণাৎ মাসকাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা হয়। ফ্লাইটটি জ্বালানি সংগ্রহের পর ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে এবং যাত্রীদের জন্য বিকল্প রুটের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে ইউএস-বাংলার বিএস-৩৩৩ ফ্লাইটটি ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় সংকটের খবর জানতে পারে এবং পাইলট তাৎক্ষণিকভাবে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। ইউএস-বাংলার মুখপাত্র জানিয়েছেন, যাত্রীদের সুরক্ষাই ছিল প্রধান অগ্রাধিকার এবং পাইলটের দ্রুত সিদ্ধান্তের ফলে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

শুধু কাতার নয়, একই সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও বাহরাইনও সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করে। এতে করে একযোগে বন্ধ হয়ে যায় দোহা, দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত ও মানামা হয়ে যাওয়া প্রায় সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাতেই এক বিবৃতিতে জানায়, চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এই অঞ্চলের আকাশসীমাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘ফ্লাইট রেস্ট্রিক্টেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নতুন কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ওইসব রুটে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী বা কার্গো পরিবহন সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যারা মধ্যপ্রাচ্য হয়ে যাতায়াত করার পরিকল্পনায় ছিলেন, তারা যেন জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের হেল্পডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নতুন ফ্লাইট সূচি সম্পর্কে আপডেট নেন।

বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি জানিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের ভিত্তিতে পরবর্তী নোটিশ ইস্যু করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা শুধু একটি কারিগরি সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতার সরাসরি প্রতিফলন। আঞ্চলিক সংঘাত এখন শুধু সীমান্ত কিংবা সামরিক ঘাঁটিতে সীমাবদ্ধ নেই; এটি এখন বেসামরিক উড়োজাহাজ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক যাত্রা নিরাপত্তার ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সমঝোতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা না গেলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ বেসামরিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার একটি বহির্প্রকাশ, যার অভিঘাত এখন হাজার মাইল দূরের ঢাকায়ও দৃশ্যমান। যুদ্ধ শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, ছড়িয়ে পড়ছে আকাশপথেও যেখানে একটি তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এক মুহূর্তেই শত শত যাত্রীর জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত