ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

মার্কিন হামলার পরে দেরি করলনা ইরান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১৮:০৬:৩৬
মার্কিন হামলার পরে দেরি করলনা ইরান

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। রবিবার (২২ জুন) ইসরাইলের বিরুদ্ধে পরিচালিত ২০তম সামরিক অভিযানে ইরান প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছে ‘খেইবারশেকান’ মাল্টিওয়ারহেড ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে আধুনিক এবং কৌশলগত শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে পরিচিত।

‘খেইবারশেকান’ অর্থ ‘দুর্গ ধ্বংসকারী’, যার ডিজাইন ও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য এমনভাবে নির্মিত যে এটি শত্রুর সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এটি হচ্ছে আইআরজিসি’র তৃতীয় প্রজন্মের ব্যালিস্টিক মিসাইল, যা একই সঙ্গে মাল্টিপল ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং মিড-কোর্স ফ্লাইট চলাকালীন পথ পরিবর্তন করতে পার যা প্রতিরক্ষা জবাবকে বিভ্রান্ত করে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম যুদ্ধক্ষেত্র-ব্যবহার ইসরাইলের ভূখণ্ডেই হলো, যা ইরানের সামরিক সক্ষমতা ও যুদ্ধ কৌশলের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

আইআরজিসি জানায়, এই হামলা ছিল ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’-এর অংশ, যা ইরানে ইসরাইলের হামলার পাল্টা জবাব। গত ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানোর পর থেকেই এই পাল্টা অভিযান শুরু করে তেহরান।

রবিবারের এই হামলায় ইরান ৪০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ছিল তরল ও কঠিন জ্বালানিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র।

তেহরান ভিত্তিক তাসনিম নিউজ এবং আন্তর্জাতিক সামরিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, খেইবারশেকান ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরাইলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, যা দেশটির সামরিক ও বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাব।

এছাড়া, ইসরাইলের একটি বায়োলজিকাল রিসার্চ ফ্যাসিলিটিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে উচ্চ-প্রযুক্তির রোগজীবাণু গবেষণা এবং প্রতিরক্ষা প্রকল্প পরিচালিত হতো বলে ধারণা করা হয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, তেল আবিবের একাধিক বহুতল ভবন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে, যেগুলোর অবস্থান এই দুই টার্গেটের পার্শ্ববর্তী এলাকায়।

এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে পাল্টা বিমান হামলা চালায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচির আড়ালে সামরিক উৎপাদন বাড়িয়ে তুলছে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধাপে ধাপে সামরিক সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যার পরিণতি শুধু ইসরাইল-ইরান নয়, বরং গোটা বিশ্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সামরিক বিশ্লেষক ড. ইউসেফ হাদাদি বলেন, “ইরানের খেইবারশেকান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তারা শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রদর্শন করেনি, বরং এটি একটি কূটনৈতিক বার্তাও তারা আর কৌশলগত ধৈর্যের নীতিতে নেই।”

আরেকজন বিশ্লেষক, জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুবিন স্টেইন বলেন, “যদি এই ধরণের হামলা পাল্টা হামলায় রূপান্তরিত হতে থাকে, তাহলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ছায়া যুদ্ধকে বাস্তব যুদ্ধের পরিণতিতে নিয়ে যাবে।”

খেইবারশেকান ক্ষেপণাস্ত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বাস্তবতা ও প্রযুক্তিগত ভারসাম্যে একটি নতুন বাঁক সৃষ্টি করল। এর মাধ্যমে ইরান জানিয়ে দিল, প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণাত্মক কৌশলেও তারা এখন দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত।

এই হামলার প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তী পাল্টা হামলাগুলো যদি বন্ধ না হয়, তবে এই সংঘাত কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এটি রূপ নিতে পারে এক ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত