ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ

“হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে কী হবে বিশ্বজ্বালানির?”

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১৫:২৭:৩৭
“হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে কী হবে বিশ্বজ্বালানির?”

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক পরিবহন ও জ্বালানি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে হরমুজ প্রণালী। পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত এই সংকীর্ণ জলপথটি বিশ্বের মোট তেলের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ পরিবহনের জন্য অপরিহার্য। এর ব্যাহত হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে উর্ধ্বমুখী হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

ইরান বারবার হুমকি দিয়েছে—যদি তাদের জাতীয় স্বার্থে আঘাত আসে, তবে তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে। তবে চলমান সংঘাতের ৯ দিন পরও এ পর্যন্ত ইরান সরাসরি কোনো তৎপরতা দেখায়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর হুমকি আরও জোরালো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

বিশ্বের প্রধান জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো যেমন সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও ইরান নিজস্ব তেল ও গ্যাস এই পথ দিয়ে রপ্তানি করে থাকে। বিশেষ করে চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের তেলের বড় অংশ আমদানি করে এই রুট থেকে। তাই যদি হরমুজ প্রণালীতে কোনো বিঘ্ন বা অবরোধ ঘটে, তবে সরবরাহ ব্যাহত হয়ে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে তীব্র প্রভাব ফেলবে।

বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ভরটেক্সার তথ্যে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, কনডেনসেট এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এই সংকীর্ণ প্রণালী দিয়েই পরিবাহিত হয়। এ সময় রুটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষ মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে সংঘাতের মধ্যেও সরাসরি বাণিজ্যিক জাহাজে বড় হামলার খবর না এলেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর থেকে জাহাজ মালিকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে বা বিকল্প রুট বেছে নিচ্ছে। রয়টার্স জানায়, সম্প্রতি নৌযান পরিচালনায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ চলাচলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

তেলের বাজারে ইতোমধ্যে প্রভাব পড়েছে; বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়ায় জ্বালানি পরিবহনের খরচ মাত্র তিন সেশনে প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পূর্ব আফ্রিকার ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশেরও বেশি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরবরাহ বিঘ্নিত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার দেশগুলো—চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ এই চার দেশ সম্মিলিতভাবে হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে আসা তেলের প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানি করে।

ইরান যদি প্রণালী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বাড়াবে। যদিও এ ধরনের পদক্ষেপ ইরানের নিজস্ব অর্থনীতিকেও মারাত্মক প্রভাবিত করবে কারণ তারা নিজেও এই প্রণালী ব্যবহার করে তেল রপ্তানি করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা ইরানের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে যা তেহরানের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।

বর্তমানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিকল্প রুট নির্মাণ করেছে, যেমন ‘ইস্ট-ওয়েস্ট ক্রুড অয়েল পাইপলাইন’, যা দৈনিক ৫০ লাখ ব্যারেলের পরিবহণ ক্ষমতা রাখে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও একটি পাইপলাইন স্থাপন করেছে যা তাদের স্থলভাগের তেলক্ষেত্রকে ওমান উপসাগরের ফুজাইরাহ বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করে। তবে বিকল্প পথ ব্যবহারেও দৈনিক পরিবহণ সম্ভব হচ্ছে প্রায় ২৬ লাখ ব্যারেল যা মোট জ্বালানির চাহিদার তুলনায় সীমিত।

বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও জ্বালানি বাজারের ওপর বিরূপ প্রভাব আরও প্রকট হবে বলেই বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত