ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ

ইরানের গোপন ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেল, যুদ্ধ কি তবে শেষের পথে?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১৫:১২:৫৫
ইরানের গোপন ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেল, যুদ্ধ কি তবে শেষের পথে?

রোববার সন্ধ্যায় যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজ কার্যালয়ে ভাষণের জন্য মঞ্চে উঠলেন, তখন প্রত্যাশা ছিল—তিনি দেশবাসীকে হিব্রু ভাষায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি জানাবেন। কিন্তু চমকপ্রদভাবে তিনি ইংরেজিতে ভাষণ দেন, আর তাঁর বার্তা ছিল সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে। বক্তব্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাহসী পদক্ষেপ—ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার—উচ্চ প্রশংসা করেন।

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই ইরানকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করে আসছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, শুধু সামরিক হামলার মাধ্যমেই ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ধ্বংস সম্ভব। তাঁর মতে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে সেই সম্ভাবনাই এখন বাস্তব রূপ পেয়েছে।

তিনি বলেন, “এই সাহসী সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে। ট্রাম্প শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বকে রক্ষা করেছেন। এবং আমিও নিজেকে অভিনন্দন জানাই, কারণ আমি এমন একজন প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পেরেছি, যিনি আগে বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতেন।”

তবে এটা উল্লেখযোগ্য যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অগ্রগতি বা অভিপ্রায় নিশ্চিত করেনি।

এরই মধ্যে ইসরায়েল সরকার ও সেনাবাহিনী বারবার জানিয়েছে, তারা একাই ইরানকে মোকাবিলা করতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক অস্ত্রেই ইরানের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত ফর্দো ইউরেনিয়াম কেন্দ্র ধ্বংস করা সম্ভব।

ইরান দাবি করেছে, হামলার আগেই তারা পারমাণবিক উপকরণ সরিয়ে ফেলেছে। তবে যদি সত্যিই ইরানের স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে থাকে, তাহলে নেতানিয়াহু তার “যুদ্ধের মূল লক্ষ্য পূরণ” ঘোষণা করতে পারেন।

তা সত্ত্বেও যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলা যায় না। কারণ ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হলে তারা জবাব দিতে বাধ্য হবে।

ইতোমধ্যে ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী ঘোষণা দিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হলে তারা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজে হামলা চালাবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকেরা সম্ভাব্য হামলার ঝুঁকিতে পড়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান নানা উপায়ে পাল্টা জবাব দিতে পারে—বিশেষ করে উপসাগরীয় ঘাঁটি বা মার্কিন যুদ্ধজাহাজ টার্গেট হতে পারে। তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়ে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়ানোর পথও বেছে নিতে পারে তারা।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা তেহরানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে না এবং এখনই নতুন অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেই। এতে ইরান হয়তো সীমিত প্রতিশোধেই থামবে। কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্রদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আঘাত হানতে পারে—যেমনটি তারা করেছিল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর।

শেষ পর্যন্ত, এটি কি যুদ্ধের অবসান নাকি আরও ভয়াবহ অধ্যায়ের সূচনা—তা নির্ধারণ করবে ইরান ও তার মিত্রদের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত