শেয়ারবাজারে দরপতনের মধ্যেও যে ১১টি কোম্পানির শেয়ার বিক্রয়

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১০:৫২:২৭
শেয়ারবাজারে দরপতনের মধ্যেও যে ১১টি কোম্পানির শেয়ার বিক্রয়

শেয়ারবাজারে চলমান দরপতনের প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা যখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন, তখন শীর্ষস্থানীয় ১১টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ২০২৫ সালের মে মাসে নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রবণতা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং বাজারে আস্থার সংকট আরও গভীর হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষণভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম "আমার স্টক" সূত্রে জানা গেছে, যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা মে মাসে শেয়ার বিক্রি করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে অ্যাপেক্স ট্যানারি, ব্যাংক এশিয়া, লাফার্জহোলসিম, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, যমুনা অয়েল, এইচআর টেক্সটাইল, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক এবং পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স।

প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিশ্লেষণ:

১. অ্যাপেক্স ট্যানারি:

৩০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ছিল ৩৬.০৮% শেয়ার, যা মে মাসে ১.২৭% বিক্রির পর কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪.৮১%-এ। একই সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১.৫৫% শেয়ার কিনেছেন, যা স্থিতিশীল চাহিদার ইঙ্গিত দিলেও, উদ্যোক্তাদের বিক্রয় বাজারে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।

২. ব্যাংক এশিয়া:

শেয়ারধারণ ৫২.৩৭% থেকে কমে হয়েছে ৫১.৪৩%। উদ্যোক্তাদের বিক্রয়ের বিপরীতে প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা শেয়ার সংগ্রহ করেছেন, যা বাজারে আস্থার কিছুটা বহিঃপ্রকাশ।

৩. বাংলাদেশ ফাইন্যান্স:

এই কোম্পানির উদ্যোক্তারা ১.৬২% শেয়ার বিক্রি করেছেন। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমে গেছে, তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাড়িয়েছেন।

৪. এইচআর টেক্সটাইল:

উদ্যোক্তারা ৪.৫৭% শেয়ার বিক্রি করেছেন, যা তুলনামূলকভাবে বড় একটি অংশ। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়ভাবে শেয়ার কিনেছেন।

৫. যমুনা অয়েল:

বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা মে মাসে নিজেদের সব শেয়ার বিক্রি করেছেন। যেহেতু এটি একটি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারের ৬০.০৮% শেয়ার অপরিবর্তিত থাকলেও, নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।

৬. লাফার্জহোলসিম:

উদ্যোক্তারা সামান্য (০.১৮%) বিক্রি করলেও, প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয় প্রবণতা কিছুটা স্থিতিশীলতা বজায় রাখছে।

৭. এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক:

এই চারটি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা প্রত্যেকেই মে মাসে আংশিক শেয়ার বিক্রি করেছেন। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে একটি বিশেষ দিক হলো, সরকারের হঠাৎ করে ৩.৫৮% শেয়ার কেনা, যা বাজারে ভিন্ন ধরনের বার্তা দিচ্ছে।

৮. পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স:

৭% বিক্রয় ছিল সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলোর একটি। এই সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এমন পদক্ষেপে আস্থায় টান পড়তে পারে।

শেয়ারবাজারে চলমান দীর্ঘমেয়াদি নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের এমন শেয়ার বিক্রি একটি সংকেতমূলক ঘটনা। কারণ তারা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখেন এবং তাদের বিক্রয়কে অনেক সময় ‘ইনসাইডার সতর্কতা’ হিসেবে ধরে নেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ, মুনাফার চাপ, রেগুলেটরি অনিশ্চয়তা বা নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনার অভাব এসব বিষয় উদ্যোক্তাদের বিক্রয়ের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি বাজারে আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ইতোমধ্যেই টেকসই প্রবৃদ্ধির সংকটে রয়েছে। তার ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি ও বাজারে স্বচ্ছতার ঘাটতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এই প্রেক্ষাপটে, একাধিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ধারাবাহিক বিক্রয় প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্গঠনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত