ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইরানে হামলার পরে আবার হুমকি ট্রাম্পের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ০৯:২৩:৪৮
ইরানে হামলার পরে আবার হুমকি ট্রাম্পের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় শনিবার রাতে এই তথ্য প্রকাশ করেন। হামলার পর তিনি ফের ইরানকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উদ্বেগ ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। খবর প্রকাশ করেছে আলজাজিরা ও রয়টার্স।

ট্রাম্প জানান, ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বিমান বাহিনী অত্যন্ত সফলভাবে হামলা চালিয়েছে।

রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, এই হামলায় বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিমানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শত্রুর রাডারে ধরা না পড়া এবং গভীর ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানার সক্ষমতা।

হামলার পরে ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন,

“আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় খুবই সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। এখনো অনেক লক্ষ্যবস্তু বাকি আছে। আজ রাতের হামলা ছিল সবচেয়ে কঠিন ও সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক।” তিনি আরও বলেন, “হয় শান্তি আসবে, নয়তো আগামী দিনে ইরান আরও বড় ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হবে।”

এই বার্তায় স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানের বিরুদ্ধে আরও বিস্তৃত সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ছিল একাধারে সামরিক শক্তি প্রদর্শন এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ।

ফোরদো কেন্দ্রটি ইরানের একটি গোপন এবং উচ্চ সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনা, যা মাটির প্রায় ২৬০ ফুট নিচে অবস্থিত। এটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে নাতাঞ্জ ও ইসফাহান ইরানের পরমাণু গবেষণা ও জ্বালানি প্রস্তুত কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ইরানি সংবাদ সংস্থা তাসনিম ও ইরনা জানায়, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরান দাবি করেছে, মূল পারমাণবিক উপাদানগুলো হামলার আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যা দেশটিকে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে।

তবে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এই হামলার জবাব প্রস্তুত করছে এবং তা হবে “আরও বিধ্বংসী”।

এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে উঠেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয় বরং ইসরায়েল, সৌদি আরব, সিরিয়া, লেবাননসহ পুরো অঞ্চল এতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. ইয়াসির বাহরামি বলেন, “এই হামলা যদি উত্তরে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রূপ নেয়, তাহলে এটি সহজেই একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে, ইরান যদি ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা করে, তবে তা হবে যুদ্ধের এক নতুন অধ্যায়।”

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কেবল কূটনৈতিক বা নিরাপত্তাজনিত নয়, বরং এতে রয়েছে ২০২৫ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণামূলক হিসেবও।

তিনি আবারও নিজেকে “দৃঢ়, সিদ্ধান্তবান নেতা” হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে আন্তর্জাতিক আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।

ট্রাম্পের ‘শান্তি না এলে ট্র্যাজেডি’ বার্তা কেবল হুমকি নয়, বরং এটি স্পষ্ট কূটনৈতিক শর্তারোপের ইঙ্গিত। ইরান যদি পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তবে যুদ্ধ হবে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি।

তবে এই অবস্থান কূটনৈতিকভাবে কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কারণ ইরান ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক অধিকার থেকে একচুলও সরবে না।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত