ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইরানে মার্কিন হামলা: তিন পরমাণু কেন্দ্রে তাণ্ডব

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ০৮:১০:২৭
ইরানে মার্কিন হামলা: তিন পরমাণু কেন্দ্রে তাণ্ডব

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর একটি ফোরদো পরমাণু কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে তেহরান। তবে দেশটি জানিয়েছে, হামলার আগে ‘কৌশলগত প্রস্তুতি’ হিসেবে তেজস্ক্রিয় উপকরণগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এতে মূল পরমাণু কর্মসূচির ওপর ক্ষয়ক্ষতি ‘নগণ্য’ বলেই দাবি করছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।

ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, কোম প্রদেশের ফোরদো কেন্দ্রে চালানো হামলায় কিছু স্থাপনা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। কোম প্রাদেশিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনা সদর দফতরের মুখপাত্র মোর্তেজা হায়দারি বলেন, “শত্রু লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিতের পর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে হামলার জবাব দেওয়া হয়। তবুও ফোরদোর একটি অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, পশ্চিমা মিডিয়ায় আলোচিত তিনটি স্থাপনায় ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানএ কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ তখন উপস্থিত ছিল না। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা ইরিবির উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, “আমরা হামলার আশঙ্কায় আগেই তেজস্ক্রিয় উপাদান নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলেছিলাম। হামলার সময় কেন্দ্রে শুধু সাধারণ অবকাঠামো ছিল।”

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Truth Social-এ দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, “আমরা সফলভাবে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা করেছি। ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানে বোমা ফেলা হয়েছে। ফোরদোর ২৬২ ফুট গভীরে থাকা স্থাপনাতেও ভারি বোমা ফেলেছি। সব বিমান নিরাপদে ফিরে এসেছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান সম্ভবত আগেভাগেই যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার পূর্বাভাস পেয়েছিল। তাই দেশটির পরমাণু নিরাপত্তা ইউনিট সময়মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম বা অন্য তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে ফেলে যা একপ্রকার কৌশলগত জয় হিসেবেই দেখছে তেহরান।

বিশ্লেষক ড. মাহদি রেজা মনে করেন, “এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা ও বার্তা দেয়ার কৌশল হতে পারে, কিন্তু তেহরান চতুরভাবে তা মোকাবিলা করেছে। প্রকৃত ক্ষতি খুব সীমিত এটা ইরানের জন্য রাজনৈতিকভাবে লাভজনক বার্তা।”

এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা নতুন করে বাড়ছে। ইসরায়েল ও সৌদি আরব হামলার পরপরই উচ্চ সতর্কতায় গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলা আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) বা জাতিসংঘকে না জানিয়েই চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এখনো পর্যন্ত ইরান এই হামলার জবাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। বরং দেশটি কূটনৈতিক এবং মিডিয়া স্তরে বিষয়টি ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছে।

বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, পরবর্তী কয়েকদিনে ইরান হয়তো যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সীমিত পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। তবে দেশটি চাইছে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত ও নিরাপত্তা পরিষদে তুলে ধরে একটি কৌশলগত অবস্থান অর্জন করতে।

তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফারহাদ মুসাভি বলেন, “এটা শুধু পারমাণবিক ইস্যু নয়, এটা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আত্মরক্ষার বিষয়। হামলার আগে পারমাণবিক উপকরণ সরিয়ে ফেলাটাই ইঙ্গিত দেয়, ইরান এখন আগ্রাসন মোকাবিলায় অনেক বেশি প্রস্তুত।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে করা হলেও, ইরান দাবি করছে এর প্রতিক্রিয়া তাদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, মধ্যপ্রাচ্যে এই উত্তেজনার ঢেউ কতদূর ছড়াবে এবং কূটনৈতিক ময়দানে কে এগিয়ে থাকবে ওয়াশিংটন, না তেহরান?

সূত্র: বিবিসি

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত