শেয়ারবাজারে ভয়াল ধস! ৭ কোম্পানিতেই কোটি টাকার ক্ষতি

পুঁজিবাজারে চলমান ধারাবাহিক দরপতন বিনিয়োগকারীদের জন্য এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। বাজার বিশ্লেষণ বলছে, এক মাসেই বহু বিনিয়োগকারী উল্লেখযোগ্য অংকের সঞ্চয় হারিয়ে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ও মধ্যম বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, অন্যদিকে অনেকে ঋণের ফাঁদে আটকে পড়ছেন।
গত এক মাসে অন্তত সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে ব্যাপক দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা ১৮ থেকে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজি হারিয়েছেন। সবচেয়ে বড় ধস দেখা গেছে উত্তরা ফাইন্যান্স-এর শেয়ারে, যার দর কমেছে ২৩.৮৫ শতাংশ এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং বহু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সঞ্চয়ের অপূরণীয় ক্ষতি।
অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স: ১৯.৫৩% দরপতন
বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট: ১৮.৮৭%
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক: ১৮.৬৯%
এনআরবিসি ব্যাংক: ১৮.৬৭%
ব্যাংক এশিয়া: ১৮.৪৮%
ইসলামী ফাইন্যান্স: ১৭.৭৮%
এই পতনগুলো বিনিয়োগকারীদের শুধু আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করেছে। স্বল্প বা মধ্যমেয়াদী মুনাফার আশায় যারা পুঁজিবাজারে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন বাজার থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাজার-নির্ভর একাধিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী জানিয়েছেন, তারা শেষ সঞ্চয় খাটিয়েছিলেন লাভের আশায়। কিন্তু লাগাতার দরপতনে সেই আশায় ভাটা পড়ে গেছে। কেউ কেউ বলেছেন—“এখন পোর্টফোলিওতে শুধু লাল রঙের ক্ষতির গ্রাফ, আর কিছুই নেই।”
অন্যদিকে, যাদের শেয়ার এখনও হাতে রয়েছে, তারাও 'পেপার লস' নিয়েই ধুঁকছেন। কারণ শেয়ার বিক্রি করলে সেই লোকসান 'বাস্তব' হয়ে যাবে।
শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক দরপতন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। বিনিয়োগকারীদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এ আস্থাহীনতা দীর্ঘমেয়াদে বাজারে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক সংকেত।
বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের এমন অস্থিরতা মূলধনী বাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর প্রভাব সরাসরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং শিল্পায়নের গতিকে থমকে দিচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে আস্থা ফেরাতে স্বচ্ছতা, নজরদারি বৃদ্ধি এবং দায়বদ্ধতার পাশাপাশি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর দিকে নজর দেওয়া, বাজারে ম্যানিপুলেশন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার।
এই সংকট কেবল ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীর ক্ষতির গল্প নয়, এটি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থার ভঙ্গুরতার প্রতিচ্ছবি। যদি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে তা অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল করে দিতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব শেয়ারবাজার গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- দীর্ঘ পতনের পর শেয়ারবাজারে এল সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট হবে কিনা জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- শেয়ারবাজারে মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!