ইরান- ইসরায়েল সংঘাত
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেভায়: আলোচনার নয়, শুনতে এসেছেন

ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলার মধ্যেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জেনেভায় ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। এই বৈঠককে কেন্দ্র করে ইরান থেকে দুই দিকের মিশ্র বার্তা প্রকাশিত হয়েছে। একদিকে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইসরায়েলের হামলা চলতে থাকলে তারা কোনো আলোচনায় বসবে না এবং তাদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আপস করবেন না। অন্যদিকে, কূটনীতির দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ না রেখে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। আরাগচি নিজেও বলছেন, “আমি এখানে আলোচনার জন্য নয়, বরং শোনার জন্য এসেছি,” যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা এখনও পরিস্থিতি বুঝে নিতে ও বিকল্প পথ খুঁজে পেতে চাচ্ছে।
ইরানের এই দ্বৈত অবস্থান মূলত মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে, যার জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষে সরাসরি আলোচনার টেবিলে বসা কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যখন তাদের নিরাপত্তা ও রক্ষা নিয়ে সরাসরি হুমকি রয়েছে। আরাগচি বারবার উল্লেখ করেছেন যে, “যতক্ষণ পর্যন্ত হামলা চলবে, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয়।”
তবে ইরান এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দ্বন্ধাত্মক নয়; তারা চাইছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ইউরোপীয় নেতারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝুক এবং পরিস্থিতির কূটনৈতিক সমাধানের জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা চালাক। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্যও হচ্ছে, ইরানের অবস্থান জানানো ও ভবিষ্যতে কোন ধরনের কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করা যেতে পারে তা নির্ধারণ করা। আরাগচির বক্তব্য অনুযায়ী, “আমরা দরজা পুরোপুরি বন্ধ করছি না, তবে আমাদের মূল দাবিগুলো স্পষ্ট।”
এদিকে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পারমাণবিক আলোচনা ইতিমধ্যেই ব্যাহত হয়েছে। ষষ্ঠ দফার আলোচনা ইতিমধ্যে নির্ধারিত ছিল, কিন্তু ইসরায়েলের হামলার কারণে তা স্থগিত হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে কোনো আপস হবে না, আর হামলা বন্ধ না হলে আলোচনাও সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই অবস্থান কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ও সামরিক উত্তেজনার মধ্যবর্তী একটি সংকটময় পরিস্থিতির প্রতিফলন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমঝোতার জন্য চাপের প্রত্যাশা করছে, তবে একই সাথে তাদের সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করাও অগ্রাধিকার। ফলে, বর্তমানে সংঘাত নিরসনে বাস্তবসম্মত কোনো কূটনৈতিক বিকল্প খুবই সীমিত মনে হচ্ছে।
সংক্ষেপে, ইরানের জেনেভা সফরটি মূলত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও কূটনৈতিক সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য হলেও, ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে যতক্ষণ তাদের ওপর হামলা চলবে, ততক্ষণ তাদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে কোনো আপসের চিন্তাও নেই। ফলে, উত্তেজনার এই পর্যায়ে যুদ্ধ ও কূটনীতির মধ্যে একটি সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সূত্রঃ আল জাজিরা
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল