তেহরানে ইসরায়েলি হামলা, ৬০ যুদ্ধবিমান, ১২০ বোমা

মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা আরও গভীর রূপ নিচ্ছে। সর্বশেষ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্মে সফল হামলা চালিয়ে একজন শীর্ষ ইরানি সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে। শুক্রবার (২০ জুন) এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফ জানায়, লক্ষ্যবস্তু ছিল তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম যেগুলো ইসরায়েলের দিকে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অভিযানটি ছিল অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী। নিহত কমান্ডারের পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও, সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, তিনি সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কমান্ডে নিয়োজিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই বিষয়ে ইরান এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইরানি সরকারি সূত্র ও রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলো হামলার প্রকৃত তথ্য গোপন করছে বলেই ধারণা করছে পর্যবেক্ষকরা।
শুধু একটি কমান্ডার হত্যাতেই থেমে থাকেনি অভিযান। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতভর ইসরায়েল তেহরানের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অংশ নেয় ৬০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান, যারা ইরানি রাজধানীর বিভিন্ন সামরিক ও শিল্প স্থাপনায় অন্তত ১২০টি ভারী বোমা ফেলে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সামরিক কারখানা, গবেষণা কেন্দ্র এবং অস্ত্র সংরক্ষণাগারে সফলভাবে আঘাত হেনেছে। এই আঘাতগুলোর মাধ্যমে তারা ইরানের রকেট ও ড্রোন সক্ষমতাকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করেছে বলে দাবি করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলের টানা হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানজুড়ে নিহতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ইরান সরকার নিয়মিতভাবে নিহতদের হালনাগাদ সংখ্যা প্রকাশ করছে না। বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে নিহতের সংখ্যা মাত্র ২০০-২২০ বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বাস্তবতার তুলনায় অনেক কম।
বিশ্লেষকদের মতে, সেন্সরশিপ, আন্তর্জাতিক মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং তথ্যপ্রবাহের সীমাবদ্ধতার কারণে ইরানে মানবিক বিপর্যয়ের প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। তেহরানে যোগাযোগ সীমিত থাকায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষেও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই হামলাগুলো এমন এক সময় চালানো হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সংঘাতের তীব্রতা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ বিস্ফোরণের দিকে এগোতে পারে।
ইসরায়েলি হামলার সাম্প্রতিক এই দফা ইঙ্গিত দেয়, তেহরানের কৌশলগত স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে চালানো হামলা এখন আরও আক্রমণাত্মক এবং পয়েন্ট-ভিত্তিক হচ্ছে। এতে কেবল সামরিক কাঠামো নয়, বরং ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার মনোবলও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। পাশাপাশি, ইরানের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরবর্তী যুদ্ধনীতির গতিপথ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: আল জাজিরা।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান