‘সে একটা সাপ!’- ইলন মাস্কের বিষাক্ত বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ১১:৫৮:২১
‘সে একটা সাপ!’- ইলন মাস্কের বিষাক্ত বার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক ভেটিং প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশটির প্রযুক্তি জগতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। একদিকে, সরকারি নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ; অন্যদিকে, স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান মাস্কের তীব্র মন্তব্য সব মিলিয়ে এ দ্বন্দ্ব ক্রমেই এক জটিল রাজনৈতিক লড়াইয়ের রূপ নিচ্ছে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা সার্জিও গরকে উদ্দেশ করে মাস্ক মন্তব্য করেন, “সে একটা সাপ।” এই মন্তব্য কোনো নিছক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বিরোধের স্পষ্ট প্রতীক।

সার্জিও গর, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই কর্মী ভেটিং প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে রয়েছেন, নিজেই এখনও স্থায়ী নিরাপত্তা ছাড়পত্রের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেননি বলে নিউইয়র্ক পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি কেবল প্রশাসনিক দায়দায়িত্বের প্রশ্ন নয় এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষেরই বহিঃপ্রকাশ। মাস্কের ক্ষোভের অন্যতম কারণ, তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জারেড আইজ্যাকম্যানকে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থার (NASA) প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সূত্র মতে, এই নিয়োগ আটকাতে গর সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।

এদিকে, কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটরের দাবি, আইজ্যাকম্যান অতীতে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন, যা তাকে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করার মূল কারণ হতে পারে। এটি একটি দ্বিমুখী রাজনৈতিক সংঘর্ষ যেখানে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আড়ালে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ ও দলীয় পক্ষপাত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ইলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক একসময় সহযোগিতাপূর্ণ ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই সম্পর্ক এখন প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নিয়েছে। মের শেষ দিকে ট্রাম্পের বাজেট প্রস্তাবকে ‘ঘৃণ্য’ বলার পর থেকেই এই দ্বন্দ্বের পথ প্রশস্ত হয়। এরপর থেকে একাধিকবার সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও হুমকি ছোঁড়াছুঁড়ি হয়েছে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে মাস্কের ব্যবসায়িক সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছেন, আর মাস্ক তাকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এমনকি মাস্ক ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনার কথাও প্রকাশ্যে বলেছেন। ফলে এই দ্বন্দ্ব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকছে না এটি ২০২4 সালের নির্বাচনোত্তর মার্কিন রাজনৈতিক শক্তির কাঠামোকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার সম্ভাবনা রাখে।

মূলত, মাস্ক-গর সংঘাত এক গভীর কাঠামোগত সংকটের প্রতীক, যেখানে প্রযুক্তি, প্রশাসন ও রাজনীতি এক অপূর্ণ চতুর্ভুজে আটকে গেছে। ব্যক্তিগত মন্তব্যের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে একটি বৃহৎ প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন আসলে কারা, এবং তারা কোন নীতিগত পথে হাঁটছে?

এই দ্বন্দ্ব যদি আরও গভীর হয়, তবে তা মার্কিন রাজনীতির জন্য একটি নতুন বিভাজন রেখা হয়ে উঠতে পারে যেখানে প্রযুক্তিবিদ, করপোরেট প্রধান ও রাজনৈতিক নেতারা কেবল নীতির জন্য নয়, ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও দখলের জন্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবেন।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত