ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে বাঁচতে চাইছে ইসরাইল: খামেনি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৯ ১৯:৩১:০৯
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে বাঁচতে চাইছে ইসরাইল: খামেনি

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান উত্তেজনা যখন আরও ঘনীভূত, ঠিক সেই সময়ে এক জোরালো বার্তায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, “ইসরাইল এখন তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের শরণাপন্ন হচ্ছে, যা তাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতারই জ্বলন্ত প্রমাণ।” বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় খামেনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “মার্কিন বন্ধুরা যেভাবে ইসরাইলকে বাঁচাতে বিভিন্নভাবে এগিয়ে আসছে এবং যুদ্ধবাজ বক্তব্য দিচ্ছে, তা প্রমাণ করে জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থা ভেতর থেকে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।”

খামেনির এ বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার ওপর সরাসরি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “এই যুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো খামেনিকে সরিয়ে দেওয়া।” অর্থাৎ এই যুদ্ধ কেবল ভূখণ্ড কিংবা রাজনৈতিক আধিপত্যের নয়, বরং নেতৃত্ব নিধনের পরিকল্পনাও এর অন্তর্ভুক্ত।

এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে খামেনি তার জাতির উদ্দেশ্যে এক দৃঢ় বার্তা দেন। তিনি বলেন, “শত্রু যদি বুঝতে পারে যে আপনি ভয় পেয়েছেন, তাহলে তারা কখনো পিছু হটবে না। আপনারা যেভাবে আজ অবধি সাহস ও আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেছেন, ঠিক সেভাবেই সামনে এগিয়ে যান।” তার এই বক্তব্যে যেমন একদিকে দেশের জনগণের মনোবল বাড়ানোর আহ্বান ছিল, তেমনি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও একটি সাহসী বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।

বর্তমানে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক এমন এক সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পারস্পরিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও বিমান আক্রমণে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন শহরে ইসরাইলের হামলার পর, ইরানও একাধিক পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান হামলা-পাল্টা হামলা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টিকে গভীর উদ্বেগের চোখে দেখছে।

এ পরিস্থিতিতে নতুন নির্বাচিত ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় দেশটির সব প্রশাসনিক বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। তার ভাষায়, “সমস্ত সংস্থা ও মন্ত্রণালয়কে দেশের সেবা করার জন্য নিয়োজিত থাকতে হবে। এই সংকটকালে জনগণের ধৈর্য ও চেতনা ধরে রাখতে রাষ্ট্রীয় সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।”

পেজেশকিয়ান আরও বলেন, “একমাত্র ঐক্য, সহানুভূতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দিয়েই আমরা এই দুর্যোগকাল পার করতে পারব।” তার বক্তব্যে একদিকে রয়েছে রাজনৈতিক সংহতির বার্তা, অন্যদিকে জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি।

বিশ্লেষকদের মতে, খামেনি ও পেজেশকিয়ানের এই বক্তব্য যুগপৎভাবে ইরানকে অভ্যন্তরীণভাবে ঐক্যবদ্ধ এবং আন্তর্জাতিকভাবে আত্মবিশ্বাসী রাখার চেষ্টা। একদিকে শত্রুর মোকাবিলা, অন্যদিকে জনগণের আস্থা রক্ষা এই দুইটি মিশনকেই সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিচ্ছে ইরান।

এখন প্রশ্ন উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যে এই উত্তেজনার পরিণতি কী হবে? শত্রুতা কি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেবে, নাকি কূটনৈতিক কোনো সমঝোতার পথে ফিরবে? আপাতত তা অনিশ্চিত। তবে ইরান যে নিজ অবস্থান থেকে পিছু হটার নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। আর দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের পাশে থেকে সংকট মোকাবিলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত