ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

যে কারণে গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে ট্রাম্পের  মতবিরোধ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৯ ১১:৫৬:৫৪
যে কারণে গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে ট্রাম্পের  মতবিরোধ

ইরান বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর মনোনীত জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মধ্যে দৃশ্যমান মতবিরোধ এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক সামরিক কৌশল ঘিরে হোয়াইট হাউসে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠছে, যা গোয়েন্দা সম্প্রদায় ও নির্বাহী প্রশাসনের মধ্যে সম্ভাব্য অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আল-জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় জয়ী হয়ে ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তুলসী গ্যাবার্ডকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেন। নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যেই মার্কিন সিনেট তার মনোনয়ন অনুমোদন করে এবং ২০২4 সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

যদিও তুলসীর আগে সরাসরি গোয়েন্দা সংক্রান্ত কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা ছিল না, তাঁর রয়েছে দুই দশকের সামরিক অভিজ্ঞতা। মার্কিন সেনাবাহিনীতে সক্রিয় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা ও যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ তাঁকে একজন নীতিনির্ধারক হিসেবে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। তবে সেই অভিজ্ঞতা বর্তমান ভূরাজনৈতিক সংকটে একমত নাও হতে পারে প্রেসিডেন্টের কৌশলগত অবস্থানের সঙ্গে।

তুলসী গ্যাবার্ড অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও তীব্র অবস্থান নিয়েছেন। এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ড কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অগ্রসর হচ্ছে না।”

তাঁর এই মন্তব্য সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যেখানে প্রেসিডেন্ট ইরানকে একটি তাত্ক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করে সামরিক বিকল্প খোলা রাখার কথা বলেছেন।

এই মতপার্থক্য নিয়ে হোয়াইট হাউসে যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তাঁদের মতে, তুলসী এখন আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ‘পছন্দের তালিকায়’ নেই।

তবে তুলসীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, মতপার্থক্য থাকলেও তিনি এখনই প্রশাসন ছাড়ছেন না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরান-সংঘাতে জড়ালেও তুলসী তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে ধারণা করছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে চলতি বছরের মার্চে কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে তুলসীর মন্তব্য নিয়ে ট্রাম্প প্রকাশ্যে তাঁকে আক্রমণ করে বসেন। ওই ঘটনার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে তুলসীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তুলসীর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কাঠামোয় একটি ‘স্বাধীন কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ও গোয়েন্দা পরিচালকের মধ্যে মতপার্থক্য দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনিক কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

এই মতানৈক্য কেবল নীতিগত নয়, বরং তা ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরের বিভাজনেরও প্রতিচ্ছবি বিশেষ করে যেসব ইস্যুতে শক্তি প্রদর্শন ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের সূক্ষ্মতা বজায় রাখা জরুরি।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত