ইরান- ইসরায়েল সংঘাত
ইসরায়েলি হামলা নিয়ে উত্তর কোরিয়া ও চীনের প্রতিক্রিয়া

ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে উত্তর কোরিয়া ও চীন। দেশ দুটি একযোগে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক জোটের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের সমালোচনা করে তারা এটিকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য এক সর্বাত্মক যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিসিএনএ (KCNA)-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (ডিপিআরকে) ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায়।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল যে পদ্ধতিতে বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে, তা ক্ষমার অযোগ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। এসব রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।”
উত্তর কোরিয়া সরাসরি পশ্চিমা শক্তিগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে জানায়, এ ধরনের হামলা এবং একতরফা হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আগ্রাসন বিশ্বব্যাপী আরও বড় সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
ইসরায়েলি হামলা নিয়ে শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, চীনও দিয়েছে স্পষ্ট বার্তা। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইঙ্গিতপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত টেনে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যমূলক ভূমিকাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন।
১৭ জুন এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও চলতে পারে। প্রতিটি পতনশীল সাম্রাজ্য অতীতে শিক্ষা নিতে দেরি করেছে। আমেরিকা যদি সম্মান হারায়, তাহলে তারা বুঝবে সময় কতটা বদলে গেছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূরাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, “ক্ষমতা ক্ষয় হয়, প্রভাব পরিবর্তিত হয়। প্রকৃত বৈধতা অর্জনের মাধ্যমে আসে, কল্পনার মাধ্যমে নয়।”
চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের এই মন্তব্যে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বেইজিং ইরান প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনপন্থী জোটের একতরফা নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত।
বিশ্বব্যাপী উত্তেজনার পারদ যখন চূড়ায়, তখন উত্তর কোরিয়া ও চীনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিসরে বড় ধরনের মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের সামরিক তৎপরতা যেমন বাড়ছে, তেমনি রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানকে ঘিরে গড়ে উঠছে পাল্টা প্রতিরোধ কাঠামো।
বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক ভাষা সাধারণত সংক্ষিপ্ত ও কঠিন হয়; কিন্তু এবারের বিবৃতিতে তারা যে মাত্রার কৌশলগত সতর্কবার্তা দিয়েছে, তা ইঙ্গিত করে যে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এশীয় কূটনীতিক হিসাবনিকাশেও গভীরভাবে প্রবেশ করেছে।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা আর মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসী কূটনীতি শুধু স্থানীয় সংকট নয়, বরং আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের দ্বন্দ্ব ও মেরুকরণের নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। উত্তর কোরিয়া ও চীনের কড়া প্রতিক্রিয়া সেই সম্ভাবনাকে আরও বাস্তব করে তুলছে।
-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান