“সিটি করপোরেশনে তালা, মেয়রের চেয়ারে বসা—সবই অপরাধ”

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ২২:১৬:১৭
“সিটি করপোরেশনে তালা, মেয়রের চেয়ারে বসা—সবই অপরাধ”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, "সিটি করপোরেশনে তালা দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের কাজে বাধা দেওয়া এবং মেয়রের চেয়ারে বসা—এই প্রতিটি ঘটনা আমাদের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।"

বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা এসব মন্তব্য করেন।

‘ব্যক্তিগত আক্রমণের অর্থ বুঝি না’আসিফ মাহমুদ বলেন, "আমি ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু বলতে চাই না। তবে যেহেতু ঘটনাগুলো এখন জনসাধারণের সামনে এসেছে এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করছে, তাই কিছু কথা বলা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ইশরাক হোসেন গণঅভ্যুত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন, সে কারণে আমরা তাঁর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণই প্রত্যাশা করেছিলাম—এখনো করি।"

তিনি আরও বলেন, “তাকে টার্গেট করে কোনো বক্তব্য আমি অতীতে দেইনি। কিন্তু সরকারি অফিসে তালা দেওয়া, অফিসারদের কাজ থেকে বিরত রাখা ও মেয়রের চেয়ারে বসা—এসব আচরণ আইনত অপরাধ।”

‘রাজনৈতিক চক্রান্ত ও প্ররোচনার শিকার’উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, ইশরাক হোসেনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক নষ্ট করার কৌশল হতে পারে। "আমার নিজ জেলা থেকে বিএনপির একজন নেতা তাকে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছেন ও লজিস্টিক সহায়তা করছেন। এটা শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।"

তিনি বলেন, "যখন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কিছুটা টানাপড়েন চলছিল, তখন ইশরাককে একটি রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করছিলেন, তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার সময় পাচ্ছেন না। তখনই এই ঘটনার মাধ্যমে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নেওয়া হয়েছে।"

‘দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক সংকট’আসিফ মাহমুদ বলেন, “যেটা হয়েছে, সেটা জাতীয় ঐক্যের জন্য একটা বড় ধাক্কা। এটি ৫ আগস্টের পর আমাদের দেখা দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক সংকট ছিল। যমুনার সামনে যে অবরোধ-বিক্ষোভ হয়েছে, সেটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যেখানে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা সেটি অতিক্রম করতে পেরেছি।”

‘আমাকে প্রজেক্ট করার অপচেষ্টা চলছে’তিনি বলেন, "ইশরাক হোসেন কেন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। এটি তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নয়, তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে—সেটার কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। বিষয়টিকে আমার একক সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রজেক্ট করার চেষ্টা হচ্ছে, অথচ উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি দায়িত্ব পালন করি।"

‘মিসগাইড করা হয়েছে’উপদেষ্টার মতে, “ইশরাক একজন আদর্শবাদী সাহসী যুবক। তার অতীতের কার্যক্রম আমাদের মনে রেখাপাত করেছে। কিন্তু বর্তমানে সে রাজনৈতিকভাবে মিসগাইড এবং মিসলিড হয়েছে। এখনো তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

‘আইন ভঙ্গের অভিযোগ ভিত্তিহীন’স্থানীয় সরকার বিভাগের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে সরাসরি নির্দেশনা ছিল না। গেজেটের মেয়াদ তখনো বিচারাধীন ছিল। সুতরাং স্থানীয় সরকার বিভাগ যদি শপথ না পড়ায়, সেটা আইন লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না।”

‘আলোচনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে’সবশেষে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এই ইস্যুটি আলোচনার পর্যায়ে না আসার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই আমি মনে করি। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এই সরকার সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে।"

—আশিক নিউজ ডেস্ক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত