“সিটি করপোরেশনে তালা, মেয়রের চেয়ারে বসা—সবই অপরাধ”

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ২২:১৬:১৭
“সিটি করপোরেশনে তালা, মেয়রের চেয়ারে বসা—সবই অপরাধ”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, "সিটি করপোরেশনে তালা দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের কাজে বাধা দেওয়া এবং মেয়রের চেয়ারে বসা—এই প্রতিটি ঘটনা আমাদের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।"

বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা এসব মন্তব্য করেন।

‘ব্যক্তিগত আক্রমণের অর্থ বুঝি না’আসিফ মাহমুদ বলেন, "আমি ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু বলতে চাই না। তবে যেহেতু ঘটনাগুলো এখন জনসাধারণের সামনে এসেছে এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করছে, তাই কিছু কথা বলা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ইশরাক হোসেন গণঅভ্যুত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন, সে কারণে আমরা তাঁর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণই প্রত্যাশা করেছিলাম—এখনো করি।"

তিনি আরও বলেন, “তাকে টার্গেট করে কোনো বক্তব্য আমি অতীতে দেইনি। কিন্তু সরকারি অফিসে তালা দেওয়া, অফিসারদের কাজ থেকে বিরত রাখা ও মেয়রের চেয়ারে বসা—এসব আচরণ আইনত অপরাধ।”

‘রাজনৈতিক চক্রান্ত ও প্ররোচনার শিকার’উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, ইশরাক হোসেনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক নষ্ট করার কৌশল হতে পারে। "আমার নিজ জেলা থেকে বিএনপির একজন নেতা তাকে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছেন ও লজিস্টিক সহায়তা করছেন। এটা শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।"

তিনি বলেন, "যখন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কিছুটা টানাপড়েন চলছিল, তখন ইশরাককে একটি রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করছিলেন, তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার সময় পাচ্ছেন না। তখনই এই ঘটনার মাধ্যমে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নেওয়া হয়েছে।"

‘দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক সংকট’আসিফ মাহমুদ বলেন, “যেটা হয়েছে, সেটা জাতীয় ঐক্যের জন্য একটা বড় ধাক্কা। এটি ৫ আগস্টের পর আমাদের দেখা দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক সংকট ছিল। যমুনার সামনে যে অবরোধ-বিক্ষোভ হয়েছে, সেটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যেখানে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা সেটি অতিক্রম করতে পেরেছি।”

‘আমাকে প্রজেক্ট করার অপচেষ্টা চলছে’তিনি বলেন, "ইশরাক হোসেন কেন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। এটি তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নয়, তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে—সেটার কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। বিষয়টিকে আমার একক সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রজেক্ট করার চেষ্টা হচ্ছে, অথচ উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি দায়িত্ব পালন করি।"

‘মিসগাইড করা হয়েছে’উপদেষ্টার মতে, “ইশরাক একজন আদর্শবাদী সাহসী যুবক। তার অতীতের কার্যক্রম আমাদের মনে রেখাপাত করেছে। কিন্তু বর্তমানে সে রাজনৈতিকভাবে মিসগাইড এবং মিসলিড হয়েছে। এখনো তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

‘আইন ভঙ্গের অভিযোগ ভিত্তিহীন’স্থানীয় সরকার বিভাগের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে সরাসরি নির্দেশনা ছিল না। গেজেটের মেয়াদ তখনো বিচারাধীন ছিল। সুতরাং স্থানীয় সরকার বিভাগ যদি শপথ না পড়ায়, সেটা আইন লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না।”

‘আলোচনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে’সবশেষে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এই ইস্যুটি আলোচনার পর্যায়ে না আসার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই আমি মনে করি। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এই সরকার সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে।"

—আশিক নিউজ ডেস্ক


জুলাই সনদে নতুন সংকট: মুখোমুখি বিএনপি ও জামায়াত

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১৩:৫১:১৪
জুলাই সনদে নতুন সংকট: মুখোমুখি বিএনপি ও জামায়াত
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। মূলধারার দুই ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবার পরস্পরের বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নতুন সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ দিতে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল, তবে সেই সময়সীমা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এই সময়েই বৃহস্পতিবার দুপুরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করে জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রস্তাব দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডা. তাহের বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে চাচ্ছি। উপদেষ্টা পরিষদ সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছেন এবং বলেছেন, দলীয় দায়িত্বশীলদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের জানাবেন।”

অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থান ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছি। গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটিই আমাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য।”

বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে দলটির নীতিনির্ধারকরা স্পষ্ট অবস্থান নেন যে, জুলাই সনদে যে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছে, সেটির আইনানুগ বাস্তবায়ন এবং সময়মতো জাতীয় নির্বাচন আয়োজনই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।

বৈঠক শেষে জানানো হয়, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দীর্ঘ আলোচনার পর ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় যে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, বিএনপি তার অংশীদার। আমরা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপি শহীদ ও আহতদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। নতুন কোনো প্রশ্ন তুলে বা জটিলতা সৃষ্টি করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করার কোনো প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।”

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহের বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি ঠিক করা যায় কিনা। আলোচনা শুরু হলে নির্বাচনের পথও সুগম হবে। সময় খুব কম, তাই দ্রুত সংলাপ প্রয়োজন।”

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে নয়টি রাজনৈতিক দল অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। “যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে আমরা সরাসরি তাদের সঙ্গে বসতে চাই,” যোগ করেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুটি এখন দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলই ২০২৪ সালের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এখন তাদের মধ্যে নীতি ও কৌশলগত মতভেদ নতুন রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সোমবার দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে ঐকমত্য জানাতে আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত কোনো দলই আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় বসেনি। ফলে সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে।


৭ নভেম্বরের বিপ্লব: জিয়াউর রহমানের প্রতি সমর্থনের গল্প শোনালেন মির্জা ফখরুল

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১১:১৪:২৭
৭ নভেম্বরের বিপ্লব: জিয়াউর রহমানের প্রতি সমর্থনের গল্প শোনালেন মির্জা ফখরুল
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষক এবং একজন নিষ্কলুষ সাহসী সৈনিক হিসেবে জিয়াউর রহমানের প্রতি সামরিক বাহিনী ও জনগণের ব্যাপক সমর্থন ছিল। এই গণসমর্থনের কারণেই জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের বিপ্লবে মহানায়কে পরিণত হন। শুক্রবার 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে তিনি দেশবাসীসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনও জানিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। তিনি মনে করেন, ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানে সেদিন রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হয়েছিল। এই বিপ্লবের মূল চরিত্র ছিল জিয়াউর রহমানের প্রতি সেনাবাহিনী ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সিপাহী-জনতার এই বিপ্লবের সম্মিলিত প্রয়াসে জনগণ নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠে। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের সফলতার সিঁড়ি বেয়েই বাংলাদেশ বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছিল। এই বিপ্লবের মধ্য দিয়েই আইনের শাসন, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সামাজিক শান্তি ফিরে এসেছিল।

তিনি বলেন, দেশ, জনগণ, স্বাধিকারসহ জাতীয় স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী সুগভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এই বিপ্লবের মাধ্যমেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানকে সমর্থন করে সামরিক বাহিনী এবং তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছিল।

জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়ে জাতিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আর সেজন্যই জাতীয় জীবনে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম।

তিনি দেশবাসীসহ সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে এখনও নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়নি, তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশবাসী কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও সুশাসনের অঙ্গীকার এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, এখনও দেশের বিভিন্ন জনপদে বিচারবহির্ভূত হত্যায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে এবং আইনি প্রতিকার থেকে অসহায় মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে পদানত করার জন্য কুচক্রীমহল অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাই যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া হয়েছিল, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরতরে বিদায় করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।


জোট বাদ দিয়ে নতুন যে কৌশল নিচ্ছে জামায়াত: উদ্দেশ্য একাধিক দলের অংশগ্রহণ বাড়ানো

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১১:০৭:১৫
জোট বাদ দিয়ে নতুন যে কৌশল নিচ্ছে জামায়াত: উদ্দেশ্য একাধিক দলের অংশগ্রহণ বাড়ানো
ছবিঃ সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সমমনা ইসলামি দলগুলোর একটি আনুষ্ঠানিক জোট হওয়ার কথা থাকলেও, সেই জোট হচ্ছে না। এর পরিবর্তে সমমনা দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করবে জামায়াত। দলগুলোর মধ্যে শরিয়াহ আইন চালুর বিষয়ে পদ্ধতিগত ঐকমত্য না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বুধবার সিলেটে এক বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "আমরা কোনো জোট করছি না। নির্বাচনি সমঝোতার ভিত্তিতে এগোব। প্রতিটি জায়গায় একটি বাক্স থাকবে, এই নীতিতেই আমরা কাজ করছি।" তবে তিনি এই বিষয়ে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসিকে বলেছেন, তারা প্রচলিত কাঠামোগত জোট করছেন না। তিনি বলেন, সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বসে তারা এটি নিশ্চিত করবেন যেন একই আসনে একাধিক প্রার্থী না থাকে। জামায়াত ও সমমনাদের মধ্যে আসনভিত্তিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের যুগান্তরকে বলেন, প্রচলিত জোট বলতে যা বোঝায়, তেমন কোনো জোট হবে না। আসনভিত্তিক সমঝোতা হবে। যে আসনে সমমনাদের এক দলের প্রার্থী থাকবে, সে আসনে অন্য দলের প্রার্থী থাকবে না। শুধু দল নয়, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে। অন্যান্য দল এবং ব্যক্তির জন্য জামায়াত কত আসন ছাড়বে, সে বিষয়ে তিনি জানান, "এখনো সে সময় আসেনি।"

শরিয়াহ আইন ও কৌশলগত কারণ

সমমনা অন্য একটি ইসলামী দলের দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছে যে, শরিয়াহ আইন চালুর বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত মতপার্থক্য রয়েছে। জামায়াত মনে করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং ইসলামী আইনের শাসন পর্যায়ক্রমে চালু করতে হবে। অন্যান্য দল কিছুটা কট্টর হলেও একবারে সম্ভব নয় বলে তারা বিশ্বাস করে।

জোটের পরিবর্তে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের আরেকটি কৌশলগত কারণ হলো, আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হলো, তা বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। সবাই আলাদা আলাদা নির্বাচন করলে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা হবে বেশি, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

সংশোধিত আরপিও অনুসারে, জোটবদ্ধ নির্বাচন করলেও প্রার্থীরা একটি দলের প্রতীকে অতীতের মতো নির্বাচন করতে পারবে না, বরং নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এই কারণেও জামায়াতসহ সমমনারা আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করার পথে হাঁটছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ইসলামপন্থি দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছিল জামায়াত। এর ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত ও আরও সাতটি সমমনা দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে একযোগে কর্মসূচি পালন করেছে।


এনসিপি'র বার্তা: বিএনপি-জামায়াত যে কারো সঙ্গে জোটে যেতে পারি, শর্ত একটাই

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ২১:২০:৩৪
এনসিপি'র বার্তা: বিএনপি-জামায়াত যে কারো সঙ্গে জোটে যেতে পারি, শর্ত একটাই
ছবিঃ সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অথবা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তবে তিনি এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এনসিপি'র অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এই সম্ভাবনার কথা জানান।

এনসিপি'র মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ একটি সংকটকালীন মুহূর্তে রয়েছে।" তিনি বলেন, এই সংকট মোকাবিলায় বিএনপি ও জামায়াত যদি সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে একমত পোষণ করে এবং তা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে বিএনপি অথবা জামায়াত—যে কারও সঙ্গেই এনসিপি'র জোট হতে পারে।

তিনি সেই সঙ্গে জানান, তাদের দাবি অনুযায়ী বিচার ও সংস্কারের প্রাথমিক শর্ত যদি পূরণ না হয়, তাহলে এনসিপি কারও সঙ্গে জোটে যাবে না।

এনসিপি'র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপি মনোনয়নের জন্য আবেদন ফরম বিতরণ শুরু করেছে।

প্রতিটি ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।

তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই মূল্য দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করা হবে এবং ১৫ নভেম্বর দলের প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে।


বিএনপিকে অবজ্ঞা করলে ফল ভালো হবে না: উপদেষ্টাদের প্রতি মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ২০:৪৫:০৮
বিএনপিকে অবজ্ঞা করলে ফল ভালো হবে না: উপদেষ্টাদের প্রতি মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপিকে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করলে এর ফল ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা রাজনৈতিক দলগুলোকে হাতের খেলনা মনে করছেন। বিএনপি মহাসচিব দাবি করেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) যশোরের টাউন হল ময়দানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক প্রভাবশালী সদস্য এবং প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের শক্তি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, "বিএনপি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের দল। বিএনপি আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম করা বেগম খালেদা জিয়ার দল।"

তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "সুতরাং বিএনপিকে ভয় দেখাবেন না। বিএনপি কোনো ভেসে আসা দল না।" তিনি উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম, খুন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, "আমরা যদি রাজপথে নামি, তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে।"

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন দিয়ে দেশকে সকল সংকট থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করুন। এই সংকটের আশু সমাধান করে দেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান।


শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কি সম্ভব? যা আছে আইআরআইর আট দফার সুপারিশে

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১৮:৩২:৫০
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কি সম্ভব? যা আছে আইআরআইর আট দফার সুপারিশে

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য করতে আটটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত তাদের প্রাক্‌-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ সুপারিশগুলো উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম, রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা, এবং নাগরিক অংশগ্রহণের মাত্রা বিশ্লেষণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যেই আসন্ন নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনকালীন আচরণবিধি প্রণয়ন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা, এবং ভোটকেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্যোগ। তবে এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও আইআরআই মনে করছে, বর্তমান প্রাক্‌-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো ভঙ্গুর ও আস্থাহীনতার মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার বিচ্ছিন্ন ঘটনা, স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি সব মিলিয়ে নির্বাচনী আস্থা পুনর্গঠনে প্রয়োজন আরও স্বচ্ছতা ও সংলাপ।

আইআরআইয়ের প্রাক্‌-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশনের কার্যক্রম

প্রাক্‌-নির্বাচনী এই মূল্যায়ন মিশনে অংশ নেন একদল আন্তর্জাতিক নীতি, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও গণতান্ত্রিক প্রশাসন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেন এবং রাজধানী ঢাকাসহ একাধিক জেলায় মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। সফরের সময় তাঁরা নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সদস্যদের সঙ্গে মোট ২১টি আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ৫৯ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।মিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু ইতিবাচক রূপান্তর দেখা যাচ্ছে। বিশেষত, তরুণ নেতৃত্বের উত্থান, নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর আবির্ভাব, এবং বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সক্রিয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। পাশাপাশি, প্রথমবারের মতো বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটারের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রজন্মগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে।

তবে প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি, নারীর সীমিত অংশগ্রহণ, উগ্রপন্থী রাজনীতির পুনরুত্থান এবং অসহিষ্ণু রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রসার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করতে পারে। আইআরআই মনে করছে, এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই জাতীয় সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নে আন্তরিক ও দায়বদ্ধ হতে হবে।

জুলাই সনদ: গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের নীলনকশা

আইআরআই প্রতিবেদনে জুলাই জাতীয় সনদকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের একটি “রূপরেখা দলিল” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এই সনদ বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, দলীয় সংস্কারে অগ্রগতি, এবং সংসদীয় জবাবদিহি আরও জোরদার হবে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও সংসদের কার্যকর ভূমিকার ওপর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সনদের সময়মতো বাস্তবায়ন, দলীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্তি, এবং সংলাপ-ভিত্তিক সংস্কার প্রক্রিয়াই নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের পথ খুলে দিতে পারে। আইআরআই উল্লেখ করে, গণতন্ত্র তখনই কার্যকর হয়, যখন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের প্রতি সহিষ্ণু থাকে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখে।

নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ: এখনো সীমিত পরিসরে

আইআরআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো কাঠামোগতভাবে সীমিত। সংরক্ষিত আসনের বাইরে নারীরা খুব কমই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান বা সিদ্ধান্তগ্রহণের পর্যায়ে আসতে পারেন। আইআরআই পরামর্শ দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি চালু, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় সমঅধিকার নিশ্চিত, এবং প্রচারণার সময় নিরাপত্তা সুরক্ষা জোরদার করতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নারী প্রার্থী ও প্রচারকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্রকে ব্যাহত করে। তাই নারী রাজনীতিবিদদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে আইআরআই।

শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইআরআইয়ের আট দফা সুপারিশ

১. জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ ও প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কার ও বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধানে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।২. গণভোটের কাঠামো নির্ধারণ:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে গণভোটের জন্য আইনি ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। গণভোটের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া এবং জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।

৩. নাগরিক সচেতনতা ও শিক্ষা কর্মসূচি:

জুলাই সনদ ও সাংবিধানিক সংস্কার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বোঝাপড়া বাড়াতে দেশব্যাপী নাগরিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

৪. নারীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা:

রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীদের নেতৃত্বে আনতে, মনোনয়নে অগ্রাধিকার দিতে এবং নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা:

দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া যেন গণতান্ত্রিক ও জবরদস্তিমুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে প্রার্থী ও প্রচারকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. নিরাপত্তা সমন্বয় ও সহিংসতা প্রতিরোধ:

নির্বাচন কমিশনকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় নজরদারি চালাতে হবে।

৭. নাগরিক পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা:

নির্বাচন কমিশনকে নাগরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ এবং প্রত্যাখ্যানের কারণ লিখিতভাবে জানানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। অনুমোদিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিয়মিত তথ্য বিনিময় করতে হবে।

৮. রাজনৈতিক অর্থায়নে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা:

রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিল সংগ্রহ, ব্যয় ও দাতাদের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। আর্থিক অনিয়ম বা ভুল তথ্য প্রদানে কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে এবং স্বাধীন নিরীক্ষা উৎসাহিত করতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যের স্বচ্ছতা

প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আইআরআই বলেছে, সাংবাদিকদের এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যেখানে তারা রাজনৈতিক চাপ, ভয়ভীতি বা অর্থনৈতিক প্রভাব ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাহত হলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এছাড়া নির্বাচন কমিশন ও নাগরিক সমাজের যৌথ প্রচেষ্টায় ভোটারদের ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শনাক্ত করার সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আইআরআই সতর্ক করেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য বা সংগঠিত অপপ্রচার নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য বড় হুমকি।

সর্বশেষে, আইআরআই বলেছে, বাংলাদেশ এখন এক সংবেদনশীল গণতান্ত্রিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাচনের সাফল্য নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীলতা, সংলাপ, স্বচ্ছতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর। যদি এসব শর্ত পূরণ হয়, তবে ২০২৬ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।


স্বাধীনতা ও সংহতি দিবস: জিয়াউর রহমানের মুক্তি নিয়ে তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১৩:৫০:৪৯
স্বাধীনতা ও সংহতি দিবস: জিয়াউর রহমানের মুক্তি নিয়ে তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' উপলক্ষে দেশবাসীসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব কেবল একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনাই নয়, বরং এ দেশে আধিপত্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অভ্যুদয়ের সূচনা করেছিল।

বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বাণীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে দেশবাসীকে আবারও আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বাকশাল থেকে জিয়ার মুক্তি

বাণীতে তারেক রহমান অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য দেশকে আধিপত্যবাদের থাবার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল। ক্ষমতা চিরদিনের জন্য ধরে রাখার উদ্দেশ্যে তারা একদলীয় বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। তিনি বলেন, বাকশালী সরকার ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের অধিকার হরণ করেছিল।

এই চরম সংকটকালে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান মুক্ত হন।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও হত্যার অভিযোগ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয় এবং গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে বাক-ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তবে তিনি অভিযোগ করেন, আধিপত্যবাদী শক্তির এ দেশীয় এজেন্টরা তাদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে।

আওয়ামী লীগের অপশাসন ও খালেদা জিয়ার বন্দিত্ব

তারেক রহমান তাঁর বাণীতে অভিযোগ করেন, এরপর চক্রান্তের গোপন পথে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা প্রায় ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতের মুঠোয় ধরে রাখে। তাদের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার লড়াকু নেতাকর্মীদেরকে বিভৎস নির্মমতায় দমন করেছে এবং 'আয়নাঘর, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ দুর্নীতি ও অপশাসনের এক ভয়াল রাজত্ব কায়েম করেছিল'। তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'গণতন্ত্রের প্রতীক' দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বহু বছর মুক্তি দেওয়া হয়নি।

ভবিষ্যতের করণীয় ও ঐক্যের আহ্বান

তারেক রহমান বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়ার ঘটনাকে তিনি গণতন্ত্রের মুক্তির পথ প্রসারের ইঙ্গিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের চর্চার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাণীর শেষাংশে তারেক রহমান ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র বিনির্মাণ করার আহ্বান জানান। তিনি মন্তব্য করেন, এর জন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।


জুলাই সনদ জারি করুন, নয়তো মর্যাদা হারাবেন: প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত সেক্রেটারির হুঁশিয়ারি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১২:৩৭:২০
জুলাই সনদ জারি করুন, নয়তো মর্যাদা হারাবেন: প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত সেক্রেটারির হুঁশিয়ারি
মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি : সংগৃহীত

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সরাসরি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, যদি তিনি অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি না করেন, তবে তিনি তার অর্জিত মর্যাদা নষ্ট করবেন।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে আটটি সমমনা ইসলামী দলের এক সমাবেশে তিনি এই কঠোর মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, "আপনি ঐকমত্য কমিশনের প্রধান, আপনি সরকারপ্রধান। আপনি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করুন।"

পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ এই আটটি ইসলামী দল আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেবে। এরই অংশ হিসেবে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শাপলা চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মান রক্ষার জন্য এক টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে প্রধান উপদেষ্টাকে রেফারির দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন, "আমরা বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সুষ্ঠু করব।"

জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল জানান, "আমরা ৮টি দল আজ যমুনা অভিমুখে অংশগ্রহণ করব। এখন পল্টনে আমাদের অন্যান্য দলের সঙ্গে জড়ো হবো। বিভিন্ন রাস্তা থেকে মিছিল আসছে। শৃঙ্খলার সঙ্গে মিছিল নিয়ে পল্টন থেকে যমুনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করব ইনশাআল্লাহ।"

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।


শহীদ মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ বিএনপিতে: যোগদানের নেপথ্যের দুটি কারণ জানালেন

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১২:১৯:০২
শহীদ মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ বিএনপিতে: যোগদানের নেপথ্যের দুটি কারণ জানালেন
বিএনপিতে যোগদানকালে মীর স্নিগ্ধ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মীর মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ রাজনীতিতে যোগদান করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে বেছে নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর বিএনপিতে যোগদান করা স্নিগ্ধ এবার নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন, কেন তিনি এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এর পেছনে প্রধান দুটি কারণ কী ছিল।

তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তিনি মনে করেন, এখন সময় এসেছে অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে এসে রাজনৈতিকভাবে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করার।

স্নিগ্ধ লিখেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে জোয়ার উঠেছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, সেই তরুণদের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তরুণদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে প্রচেষ্টা চলছে, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষা থেকেই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।

তিনি স্পষ্ট করেন, তিনি বা তার ভাই মুগ্ধ কেউই আগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি বলেন, "মুগ্ধ একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাই আমি মনে করি, মুগ্ধসহ শহীদরা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, তারা সব মানুষ এবং দেশের সম্পদ।"

স্নিগ্ধ ব্যাখ্যা করে বলেন, এখন সময় এসেছে রাজনৈতিকভাবে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করার। তাঁর রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার পেছনে অন্যতম কারণগুলো হলো

সর্বোচ্চ জায়গা থেকে জুলাইকে প্রতিনিধিত্ব করা।

জুলাই শহীদ, আহত যোদ্ধা, শহীদ পরিবার এবং সর্বোপরি জুলাইয়ের 'ভয়েস' বা কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা।

রাজনীতিতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করা এবং বাংলাদেশপন্থি ও জুলাইপন্থি সব অংশীজনের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা।

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে বেছে নেওয়ার পেছনে স্নিগ্ধ দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন

১. দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস ও দর্শন

তিনি বলেন, বিএনপির দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। তাছাড়া বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন এবং রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা ২০২৩-এর অনেক জায়গা আছে, যেগুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে তিনি আগ্রহী।

২. জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব

তিনি মনে করেন, সব পরিসরে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। তাই তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যা জুলাইয়ের ঐক্যকে শক্তিশালী এবং দীর্ঘায়িত করবে।

তিনি আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চান যে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করুন। যা তাঁর নিজেরও অন্যতম রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার একটি। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দল এবং তরুণদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।

স্নিগ্ধ বলেন, তিনি সব রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশ ও জুলাইপন্থি সবার সঙ্গে কাজ করে যেতে চান। রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ তাঁর রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য।

নবাগত এই নেতা অনুরোধ করে বলেন, এতদিন তিনি যত দায়িত্ব পালন করেছেন, সব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি চান, যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে, তবে তা যেন অভিযোগে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হয় এবং গঠনমূলক সমালোচনা করা হয়। তিনি বলেন, "নতুন বাংলাদেশে সবাই মিলে এতটুকু সংস্কার তো আমরা আশাই করতে পারি।"

পাঠকের মতামত:

গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এক নতুন দিগন্ত

গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এক নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠদান, দীর্ঘদিন ধরে পাঠ্যপুস্তকনির্ভর শিক্ষা ও পরীক্ষাকেন্দ্রিক মূল্যায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের... বিস্তারিত

হাউসকা দুর্গের ভূগর্ভ আর ‘শয়তানের বাইবেল’ কোডেক্স গিগাস: কিংবদন্তি, ইতিহাস ও ভয়ের মনস্তত্ত্ব

হাউসকা দুর্গের ভূগর্ভ আর ‘শয়তানের বাইবেল’ কোডেক্স গিগাস: কিংবদন্তি, ইতিহাস ও ভয়ের মনস্তত্ত্ব

বোহেমিয়ার অরণ্যমালায় একটি দুর্গ, হাউসকা ক্যাসেল, আর তার কয়েক মাইল দূরে এক সন্ন্যাসীর লেখা বিশাল এক পুঁথি, কোডেক্স গিগাস। শতাব্দীজুড়ে... বিস্তারিত

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছেন। নতুন এক ধরনের ক্যানসার ভ্যাকসিনের প্রাথমিক মানবদেহে পরীক্ষায় শতভাগ সাড়া পাওয়ার দাবি... বিস্তারিত