সন্ত্রাসে নাম জড়ালেই তালাবন্ধ সংগঠন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ০৭:৫২:১১
সন্ত্রাসে নাম জড়ালেই তালাবন্ধ সংগঠন

সত্য নিউজ: সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আরও কঠোর ও বিস্তৃত আইনি কাঠামো গড়তে ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তি কিংবা সত্তার (যেকোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান) সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার স্পষ্ট বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো সত্তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার পক্ষ থেকে বা সমর্থনে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, বিবৃতি, সভা-সমাবেশ, মিডিয়া উপস্থিতি বা সামাজিক মাধ্যমে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যাবে। সরকার চাইলে ওই সংগঠনের ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টসহ অনলাইন উপস্থিতিও বন্ধ করতে পারবে।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার বিদ্যমান আইনকে আরও কার্যকর করে তুলছে। পূর্ববর্তী আইনে সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা গেলেও তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার নির্দিষ্ট বিধান ছিল না, যা সন্ত্রাস প্রতিরোধে আইনি দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত হতো।

অধ্যাদেশটি রোববার রাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে জারি হয়। এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধানমন্ত্রী ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি অনুমোদিত হয়।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়াধীন

অধ্যাদেশ জারির পরপরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন। উপদেষ্টা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখা হবে—এই মর্মে সরকার যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ১১ মে (শনিবার) অনুষ্ঠিত বিশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, দলটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন বাতিল

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে দলটির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেলসহ সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উপস্থিতি বন্ধ করার জন্য বিটিআরসির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সামাজিক মাধ্যমগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

এছাড়া নির্বাচন কমিশন থেকেও আজ দলটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন

একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে সরকার নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা পায়। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল যদি সন্তুষ্ট হয় যে কোনো সংগঠন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাহলে সেই সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, নিবন্ধন বাতিল কিংবা সম্পত্তি জব্দ করতে পারবে।

এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানের বিচারপ্রক্রিয়ায় সংগঠনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে বলে মনে করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ

অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক রূপান্তরের অংশ হিসেবে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' চূড়ান্ত করার উদ্যোগও জোরালো হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে এই ঘোষণাপত্র নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো, ন্যায়বিচার এবং জননিরাপত্তা প্রশ্নে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যেই এটি প্রকাশ করা হবে।

সন্ত্রাস দমন ও আইনগত কাঠামোর পুনর্গঠনের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক বাস্তবতায় গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে তা দেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করবে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দেবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত