ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ছায়া পড়ছে বিশ্ব জ্বালানিবাজারে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ১৫:০২:৫০
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ছায়া পড়ছে বিশ্ব জ্বালানিবাজারে

ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। পাল্টাপাল্টি হামলার এই প্রেক্ষাপটে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রকেও এই সংঘাতে টেনে আনতে পারে। এর ফলে যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে গড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষত ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়, তবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশও পড়বে গভীর সংকটে।

বিশ্ব জ্বালানিবাজারের জন্য হরমুজ প্রণালির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস রপ্তানির জন্য প্রধান সমুদ্রপথ। সৌদি আরব, কাতার, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইরান—এই ছয়টি দেশের জ্বালানি রপ্তানির প্রধান নির্ভরযোগ্য পথ এই প্রণালি। প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ হয় এই পথ ব্যবহার করে। বিশেষ করে কাতার তার প্রায় সব এলএনজি এই প্রণালির মাধ্যমেই রপ্তানি করে।

বাংলাদেশ এলএনজির বড় অংশ আমদানি করে কাতার থেকে। ২০১৭ ও ২০২৩ সালে কাতারের সঙ্গে দুই দফায় ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করে বাংলাদেশ। বর্তমানে বছরে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি আসে এই পথে। তবে এলএনজি স্থলপথে পরিবহন সম্ভব নয়, তাই হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে এই সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ২০ শতাংশ এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ৩০ শতাংশ আসে হরমুজ প্রণালি দিয়ে। বাংলাদেশের একমাত্র রিফাইনারি প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের সক্ষমতা রাখে। এই অপরিশোধিত তেলের প্রধান উৎস সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কাজেই হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে এ আমদানি চেইনও ভেঙে পড়বে।

এই প্রেক্ষাপটে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) ড. এ কে এম আজাদুর রহমান বলেন, “আমরা তেলের দাম নির্ধারণ করি জাহাজ লোডের আগের তিন দিন এবং পরের তিন দিনের মূল্যের গড় ধরে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদের ক্রয়মূল্যও বাড়ে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তার প্রভাব সরাসরি তেল সরবরাহে ও দামে পড়বে।”

তবে বিকল্প সরবরাহ উৎস হিসেবে বেসরকারি উদ্যোগগুলো কিছুটা আশা জাগাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি বেসরকারি তেল আমদানিকারক প্ল্যান্ট রয়েছে, যারা অন্যান্য দেশ থেকে তেল আনে। এতে কিছুটা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তবে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকেই যাবে।”

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, “কাতার থেকে আসা এলএনজি কার্গোগুলো সবই হরমুজ প্রণালি দিয়ে আসে। স্থলপথ বা অন্য কোনো বিকল্প রুট নেই। ফলে এই পথ বন্ধ হলে জ্বালানি আমদানিতে বড় সংকট দেখা দেবে।”

এই প্রসঙ্গে সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সিনা তুসি আল জাজিরাকে বলেন, “ইসরায়েল যদি ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোতে বড় ধরনের হামলা চালায়, তেহরান প্রতিক্রিয়ায় হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। এটি হবে তাদের সর্বোচ্চ স্তরের জবাব।”

এই পরিস্থিতির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে বিকল্প উৎস ও রুট নির্ধারণ, আগাম আমদানি চুক্তি ও ভর্তুকি-সহায়ক অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ। যুদ্ধ শুধু দুই দেশের নয়, এর অভিঘাত আজ সারা বিশ্বের বাজার, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির ওপরও পড়তে শুরু করেছে।

—আশিক নিউজ ডেস্ক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত